Image description

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজাকে ‘শয়তানের ইবাদত’ আখ্যা দেওয়ার ঘটনায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত পাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না বলে মন্তব্য করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য প্রার্থী ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হারুনুর রশীদ। বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে ২৪ ঘণ্টার সময় দিয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর একদিন পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভ্যারিফায়েড আইডিতে এক পোস্টে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

তবে পোস্ট দেওয়ার ৩ মিনিটের মাথায় এটি সরিয়ে নেন তিনি। এরই মধ্যে পোস্টটিতে প্রায় ৫০ জন রিয়্যাক্ট, ৭ জন কমেন্ট এবং তিনজন পোস্টটি শেয়ার করেন। পোস্টটিতে নিজের আরেকটি আইডিকে ট্যাগ দেওয়া হয়।

গত শনিবার জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করতে গিয়ে পূজাকে শয়তানের ইবাদত বলে আখ্যা দেন হারুনুর রশীদ। ওইদিন নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে বিএনপির গণসমাবেশে এ বক্তব্য দেওয়ার সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। এর আগেও বেশ কয়েকবার এমন বক্তব্য দেন হারুন। তবে গণসমাবেশের বক্তব্য ভাইরাল হলে তার প্রতিবাদ জানিয়ে হারুনের মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানায় হিন্দু সংগঠনের নেতারা। পরে ১৭ নভেম্বর ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুমন কুমার রায়। ওই সময় হারুনুর রশীদ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, লিগ্যাল নোটিশ হাতে পাওয়ার পর জবাব দিবেন তিনি।

157
সাবেক এমপি হারুনুর রশীদের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি

 

এদিকে ডিলিট করে দেওয়া পোস্টটিতে হারুনুর রশীদ লিখেছেন, ‘নিজেদের ইসলামের ভ্যানগার্ড দাবি করা, জান্নাতের টিকেট বিক্রি করা দল জামাতের নেতা অ্যাডভোকেট শিশির মনির কিছুদিন আগে বলেন, রোজা আর পূজা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আরও বলেন, এই বিষ্ণু, এই কৃষ্ণ, এই মোহাম্মদ, এই মুসা, এই ইসা সবাই আমাদের সামনে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার প্রতীক। যা হিন্দুদের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত হানা বক্তব্য। পূজা হিন্দুদের নিকট অতি পবিত্র একটি আচার। এর সাথে অন্য ধর্মের এমন আচারের তুলনা করা, যা তারা বিশ্বাস করে না, এটি তাদের ধর্মে সরাসরি আঘাত।’

তিনি বলেন, ‘একই সাথে এই কথাটি সরাসরি কুরআন ও ইসলামের আকীদা বিরোধী বক্তব্য। পূজা বা মূর্তি পূজা করা সরাসরি শিরক- এক আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরিক করা। এটিকে রোজার মত ঈবাদতের সাথে তুলনা করা এবং নবী-রাসুলদের সাথে মূর্তি পূজারীর তুলনা করা কোন মুসলিম, ঈমানদার ব্যক্তির বক্তব্য হতে পারে না। অথচ শুধুমাত্র রাজনৈতিক সুবিধা পেতে ইসলামিক লেবাসে সেজে শিরকের মত ভয়ংকর পাপে লিপ্ত হচ্ছে এই ধর্ম ব্যবসায়ী দলটি।’

হারুনুর রশীদ আরও লিখেছেন, ‘প্রতিটি মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব এই বক্তব্যের এবং এহেন প্রতারণার সরাসরি প্রতিবাদ করা। একজন মুসলিম ও সমাজের নেতা হিসেবে আমার দায়িত্ব থেকেই কিছুদিন আগে আমি বলেছি -পূজা শয়তানের মনোনীত ইবাদত, আর রোজা আল্লাহর মনোনীত ইবাদত; এই দুইটি একে অন্যের সাথে তুলনা করা যাবে না। এটাই বলে আমি আমার জায়গা থেকে প্রতিবাদ করেছি এবং সরলপ্রাণ মুসলিমদের সতর্ক করেছি।

‘আমি যা বলেছি তা সম্পূর্ণ কুরআনের আলোকে বলা’ উল্লেখ করে তিনি আরও লেখেন, ‘মূর্তি পূজা এমন একটি ইবাদত যা করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। আর আল্লাহ যা যা নিষেধ করেছেন, সবকিছুই শয়তান চায় আমরা করি। অপরদিকে রোজা ও নামাজ এমন ইবাদত যা আল্লাহ করতে বলেন। এখানে কোন হিন্দুকে সম্বোধন বা উদ্দেশ্য করে কোন কথা বলা হয়নি।’

160
হারুনুর রশীদের ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট

 

সাবেক এই সংসদ সদস্য লিখেছেন, ‘প্রাচীন মক্কাতেও কাবা ঘরের ভেতরে মূর্তি পূজা করা হত। পৃথিবীর বেশিরভাগ ধর্মের লোকেরা মূর্তিপূজা করে- যা আল্লাহ আমাদের করতে নিষেধ করেন। আর আল্লাহর বিরোধী শয়তান চায় আমরা করি। এটা বোঝাতেই পূজাকে শয়তানের মনোনীত ইবাদত বলা হয়েছে। এখানে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত পাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। অবশ্যই একজন অমুসলিম/হিন্দু ব্যক্তি তার নিজ ধর্ম অনুসারে নিজস্ব ধর্মীয় আচার পালনের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রাখেন। এমনকি তাদের নেতা হিসেবে প্রয়োজনে যাতে তারা নির্বিঘ্নে পূজা-অর্চনা করতে পারেন, সে জন্য সাহায্য করতেও আমি হারুন উর রশিদ বাধ্য।’

কোন ব্যাক্তিকে ধর্মের কারণে ছোট করার রেকর্ড নেই উল্লেখ করে হারুনুর রশীদ লিখেছেন, ‘কিন্তু এর মানে এই নয় যে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক সুবিধা পেতে সরল প্রাণ হিন্দু-মুসলিমদের ভুল বার্তা বা ভুল শিক্ষা দেব যে শিক্ষা তাদের ধর্মগ্রন্থ বিরোধী। আমার জীবনের ইতিহাসে কোন ব্যাক্তিকে ধর্মের কারনে ছোট করার- কষ্ট দেবার কোন রেকর্ড নেই। তাই ভুল বুঝবেন না - যারা রোজা ও পূজাকে একসাথে গুলিয়ে ফেলার মত ধৃষ্টতা ও স্পর্ধা দেখায় তাদের বিরুদ্ধে ও উদ্দেশ্য করেই ছিল আমার এই বক্তব্য, কোন ধর্মপ্রান হিন্দুর বিরুদ্ধে নয়।’

লেখার শেষে নিজের নাম ও পদবী হিসেবে উল্লেখ করেছেন, ‘হারুনুর রশিদ, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, প্রাক্তন সংসদ সদস্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩।’