Image description

১.
"গত বছরের শুরুতে বিএনপি-জামায়াতের ইসলামীর নাশকতা, পেট্রলবোমা হামলা, অগ্নিসংযোগ, দেশব্যাপী অবরোধ সারা দেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। বার্ন ইউনিটে দুই শতাধিক মানুষের পোড়া শরীর আর তাদের আর্তনাদ দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারেননি অনেকে। টানা তিন মাসের এই নাশকতা দেশে-দেশের বাইরে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম হয়।"

২.
”রায়ের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবির। সহিংসতায় প্রথম তিন দিনেই ৭০ জন নিহত হন।”

৩.
”পরে সাতটার দিকে নিউমার্কেট এলাকায় দুটি বাস ও দুটি মিনিবাস ভাঙচুর করেন অবরোধ-সমর্থকেরা।”

এই তিনটি উদ্ধৃতি ২০১২ এবং ২০১৪ সালের প্রথম আলোর ৩টি রিপোর্ট থেকে রেন্ডমলি নেয়া। গুগলে “বিএনপি জামায়াত” এবং “তাণ্ডব হামলা নাশকতা” লিখে সার্চ করে বিচ্ছিন্নভাবে এই তিনটি উদ্ধৃতি নিলাম। আরও এরকম অনেক উদ্ধৃতি আছে, লম্বা হয়ে যাবে তাই বাদ দিলাম। (আর দৈনিক ভিত্তিকে মতামত কলাম তো ছিলই!)

এই উদ্ধৃতিগুলোর মধ্যে কমন বৈশিষ্ট্য হল: এগুলো আওয়ামী লীগের সময় বিএনপি জামায়াতের বিভিন্ন কর্মসূচি, যেগুলো নানান কারণে সহিংস হয়ে উঠেছিল-- সংক্রান্ত খবর। ওইসব খবরে প্রথম আলো সহিংসতার দায় সরাসরি বিএনপি ও জামায়াতের ওপর আরোপ করেছিল। এবং গুরুত্বপূর্ণ হল, এই উদ্ধৃতিগুলো রিপোর্টারদের বয়ানে লেখা, পুলিশ বা অন্য কারো ‘অভিযোগ’ আকারে লেখা নয়।

যেমন: “বিএনপি-জামায়াতের ইসলামীর নাশকতা, পেট্রলবোমা হামলা, অগ্নিসংযোগ”, “বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবির”, “দুটি বাস ও দুটি মিনিবাস ভাঙচুর করেন অবরোধ-সমর্থকেরা”।

গত ১০ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ৪দিনে কর্মসূচি দিয়ে আওয়ামী লীগ বেশ বড়সড় রকমের ভায়োলেন্স করেছে। এবং এসব ভায়োলেন্সে পক্ষে তাদের অনলাইন এক্টিভিস্টরা অনলাইনে ক্যাম্পেইন করেছে, কেউ কেউ ভায়োলেন্স করার টিপস দিয়েছে। একাধিক ব্যক্তি ভায়োলেন্সে মারা গেছেন। ২০১৪ এর মতো আগুনে পুড়েও মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

তো, এই ৪দিনের প্রথম আলোর খবরগুলোতে একটু চোখ বুলালাম। আমার জুনিয়র একজন এই ৪দিনে প্রথম আলো থেকে মোট ৭৭টি খবরের শিরোনাম এবং টেক্সট এক্সট্রাক্ট করে দিল। প্রায় সবগুলো খবরই পড়লাম। (পরে ধীরেস্থিরে এটা নিয়ে একটা কাজ করবো)।

একটি প্রতিবেদনেও উপরের ৩টি উদ্ধৃতির মতো আগুন দেয়া বা অন্য ভায়োলেন্স করার জন্য আওয়ামী লীগ/ছাত্রলীগকে দায়ী করেছেন প্রথম আলোর প্রতিবেদকরা-- তেমনটি চোখে পড়েনি। সবক্ষেত্রেই ‘অভিযোগ’, ’পুলিশের দাবি’, ’আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা’ ‘কারা বা কোন উদ্দেশ্যে ককটেল নিক্ষেপ করেছে, তা জানা যায়নি’-- এমন শব্দের ব্যবহার দেখা গেছে। রিপোর্টারের বয়ানে একটি জায়গায়ও পাইনি যেখানে বলা হয়েছে এসব ভায়োলেন্স আওয়ামী লীগ করেছে বা করিয়েছে। বা ‘লকডাউন সমর্থকরা আগুন দিয়েছেন’।

শুধু একটি ভিডিও বিশ্লেষণের (রিপোর্ট নয়) শিরোনাম ছিল এরকম: "আতংক তৈরি করতেই আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি"; যেখানে আওয়ামী লীগকে ভায়োলেন্সের জন্য দায়ী করা হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে আর তা হলো: ২০১২ বা ২০১৪-তে বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচিগুলো ছিল সরকারের বিরুদ্ধে বৈধ রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষিত কর্মসূচি; যদিও সেগুলো সহিংস ছিল। আর বর্তমানে আওয়ামী লীগ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পরাজিত এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দল যারা পলাতক খুনিদের বিচারের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিয়ে বিচারকে বাধা দিতে চাচ্ছে।

সহিংসতার দিক থেকে বিএনপি জামায়াতের সহিংসতা এবং আওয়ামী লীগের সহিংসতা একই রকম হলেও, নৈতিক ও আইনগত অবস্থান থেকে আওয়ামী লীগের অবস্থান বেশি সমস্যাজনক।

কিন্তু এরপরও প্রথম আলোর রিপোর্টের তখনকার শব্দচয়ন এবং এখনকার শব্দচয়নগুলো খুবই মজাদারভাবে ভিন্নরকম।

কদরুদ্দিন শিশির