Image description

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘দেশে একটি রাজনৈতিক দল যারা ধর্মের নামে রাজনীতির ব্যবসা করে জান্নাতের টিকেট বিক্রি করে ভোটের বৈতরণী পার হতে চায়, তাদের হাতে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে।’ 

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে ‘নারীর উপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অসম্মান: প্রতিরোধে প্রস্তুত সচেতন নারী সমাজ’  শীর্ষক মৌন মিছিল পূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। 

 

নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত এই সমাবেশ শেষে মুখে কালো কাপড় বেঁধে শাহবাগ থেকে মৌন মিছিল করেন নারীরা, যা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। 

নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক ও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নিপুণরায় চৌধুরীর পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন শিরীন সুলতানা, নিলোফার চৌধুরী মনি, সানজিদা ইসলাম তুলি, রেহানা আক্তার শিরীন প্রমুখ। 

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সারা দেশে যে নারী নির্যাতন বর্তমানে হচ্ছে বা অতীতে হয়েছে, তার কোনো কার্যকর প্রতিবাদ এখনো গড়ে তুলতে পারিনি। কিছু কিছু আইনপ্রণয়ন হয়, কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে আইন কঠিন হলে সঠিকভাবে কার্যকর হয় না। আইনের ফাঁক-ফোকর গলিয়ে নারী নির্যতনকারীরা, ধর্ষকরা বেরিয়ে যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শক্ত আইনের অপব্যবহার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী করে থাকেন, সেদিকেও আমরা নজর দেব।’

 

তিনি বলেন, ‘দেশে একটি রাজনৈতিক দল যারা ধর্মের নামে রাজনীতির ব্যবসা করে জান্নাতের টিকেট বিক্রি করে ভোটের বৈতরণী পার হতে চায়, তাদের হাতে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। তারা চায় যেন এ দেশের নারীরা অন্দরমহলে বন্দি থাকে, দেশের অর্ধেক জনসমষ্টি অন্ধকারে থাকে যেন এই দেশে নারীর অগ্রগতি না হয়।’

তিনি আরও বলেন, তারা বলছে নারীর কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিতে হবে কর্মসংস্থানের জন্য কোনো অসুবিধা না হয়। অথচ, দেখা যায়  সেই কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলে নারীদের কর্মসংস্থান কমে যাবে। তারা তাদের কর্মস্থলে সম্মানের সঙ্গে চাকরি  করবে এবং সঠিক কর্মসংস্থানের জন্য কর্মঘণ্টা অনুযায়ী কাজ করবে এবং যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রমাণ করবে। তাতে করে নারীর কর্মঘণ্টা কমানোর সঙ্গে কর্মসংস্থানের বিপরীত সম্পর্ক। আমরা চাই, নারীর কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা হোক। যদি কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়া হয়; তাহলে যারা অফিস আদালত, কলকারখানা পরিচালনা করেন তারা নারীদের চাকরি দিতে চাইবেন না। ফলে নারীদের কর্মসংস্থান কমে যাবে।’

উপস্থিত নারীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ জানতে চান- আপনারা কী চান নারীদের কর্মসংস্থান কমে যাক? 

তখন নারীরা সমস্বরে চিৎকার দিয়ে জবাব দেন ‘না’।

বিএনপির এই নেতা বলেন, তারা চায় নারীরা অন্দরমহলে বন্দি থাকুক। সমাজের অগ্রগতি তারা চায় না। দেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে গেলে বাংলাদেশের মোট জনসমষ্টির অর্ধেক পুরুষ-অর্ধেক নারী তাদের সবার প্রগতি নিশ্চিত করতে হবে। তাদের সামাজিক রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের পারিবারিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে।’

শিক্ষা-দীক্ষায়, কর্মসংস্থানে, বাসস্থলসহ সমাজের সর্বত্র যাতে নারীরা নিরাপদ থাকে; সেই জন্য আমরা আগামীতে ৩১ দফার ভিত্তিতে নারীদের জন্য পরিকল্পনা করছি বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, সেই হিসেবে বাংলাদেশ হবে অগ্রগতির চরম শিখরে ওঠা একটি দেশ। সেখানে অংশগ্রহণ থাকবে নারী-পুরুষের সমান। 

 

রাজশাহীর কাটাখালীতে ধানের শীষের প্রচার চালাতে গিয়ে দুই নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাজশাহীতে আমাদের বোনদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। জুতা পেটা করছে একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী, যারা ধর্মের নামে রাজনীতি করে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, বাংলাদেশে এমন একটি সমাজ বিরাজ করুক, যেখানে আমরা সবাই সমান। ধর্মের ভিত্তিতে এখানে কোনো বিভাজন থাকবে না। এখানে জাতের ভিত্তিতে কোনো বিভাজন থাকবে না। এখানে ধর্ম-বর্ণ, সংস্কৃতি ভাষাভাষী সকলে মিলে আমরা বাংলাদেশি। সুতরাং আমরা সবাই বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের নাগরিক। নাগরিক হিসেবে সবাই সমান অধিকার ভোগ করব। এ জন্যই আমরা সংগ্রাম করেছি। এজন্য আমরা রক্ত দিয়েছি।’