বাজারের অন্যতম জরুরি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য চিনির কেজি তিন বছর পর ১০০ টাকার নিচে নামল । ব্যবসায়ীরা বলেছেন , আমদানির শর্ত শিথিল হওয়া ও বিশ্ববাজারে দাম কমা এর কারণ । চলতি প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দাম আরেকটু কমতে পারে । দেশে সাধারণত রোজার মাস তিনেক আগে থেকেই দাম বাড়তে থাকে চিনির ।
প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাস যত ঘনিয়ে আসে , চিনির বাজারে অস্থিরতা ততই বাড়ে । সে হিসাবে এবার কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে বাজারে । রোজার তিন মাসের কিছু বেশি বাকি রয়েছে । এর মধ্যে সম্প্রতি ধারাবাহিকভাবে কমছে চিনির দাম । সর্বশেষ গত এক সপ্তাহে দাম কমেছে কেজিপ্রতি ১০ টাকা । এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ তিন বছর পর পণ্যটির দাম ১০০ টাকার নিচে নেমে এসেছে । বাজারে এখন খোলা সাদা চিনি মিলছে ৯৫ টাকা কেজি । প্যাকেট চিনি পাওয়া যাচ্ছে ন্যূনতম ১০০ টাকা কেজিতেও ।
দেশে চিনির দাম বাড়া শুরু হয় করোনা মহামারিতে ২০২০ সালের দিকে আমদানি রপ্তানি ব্যাহত হলে । এরপর ডলারসংকট , রাশিয়া - ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবসহ নানা কারণে বাজার চড়া ছিল । ২০২২ সালের অক্টোবরে মাঝামাঝিতে চিনির কেজি ১০০ টাকা ছাড়ায় । সরকারের নানা চেষ্টায়ও দামের ঘোড়া নিয়ন্ত্রণে আসেনি । দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিল ২০২৩ সালের নভেম্বর - ডিসেম্বরে খুচরায় ১৪৫ টাকা কেজি । দীর্ঘদিন এই দামেই বিক্রি হয় । এর পর থেকে ১২৫-১৩৫ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে । চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে দাম ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে ।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশে ( টিসিবি ) তথ্য বলছে , গত বছর এই সময় চিনির দাম ছিল ১৩৫ টাকা কেজি । ব্যবসায়ীরা বলছেন , এখন আমদানি - রপ্তানি স্বাভাবিক , ডলারের সংকট দূর হয়েছে । আমদানির জন্য এলসি ( ঋণপত্র ) খোলায় শতভাগ মার্জিনের বাধ্যবাধকতা নেই । এ ছাড়া বিশ্ববাজারে চিনির দাম গত এক বছরে প্রায় ১৫ শতাংশ কমেছে । গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাতিরপুল , সেগুনবাগিচা , মালিবাগ , মুগদাসহ বিভিন্ন বাজারে খুচরায় খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি । এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০০-১০৫ টাকা কেজি । প্যাকেট চিনি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা কেজি । হাতিরপুল বাজারের আমির জেনারেল স্টোরের মালিক মো . আমির বলেন , ‘ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্যাকেটজাত চিনি ১০০ টাকা কেজি করে বিক্রি করতে পারব আমরা । আর খোলাটা ৯০ টাকায় হবে । কারণ পাইকারি বাজার ও কোম্পানির রেট কমেছে ।
আজকে কোম্পানিগুলো আমাকে আগের তুলনায় ১০ টাকা কমে চিনি দিয়েছে । তবে এখনো যাঁদের কাছে আগের কেনা চিনি রয়েছে , তাঁরা আগের দামেই বিক্রি করছেন । ' চিনির সঙ্গে কমেছে মোটা দানার ডালের দাম । প্রতি কেজিতে তা ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায় । গত সপ্তাহে ছিল ৯৫-১০৫ টাকা কেজি । তবে ছোট দানার আমদানি করা ডালের দাম আগের মতোই কিছুটা বেশি ১৫৫-১৬০ টাকা কেজি । দেশি পেঁয়াজের দাম এখনো কমেনি । গতকাল রাজধানীর বাজারগুলোতে বিক্রি হয়েছে ১২০- ১২৫ টাকা কেজি করে । গত সপ্তাহে এই দামেই বিক্রি হয়েছিল । কয়েক দিন আগে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন দ্রুত দাম না কমলে আমদানি খুলে দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন । কিন্তু তার কোনো প্রভাব বাজারে নেই ।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০৮-১১০ টাকা কেজি । জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা সৈয়দ পরান বললেন , ‘ বছরের এই সময়টাতে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশিই থাকে । কারণ এ সময় কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ থাকে কম । এই সুযোগটা নেয় যাদের কাছে মজুত আছে , তারা । এখন যেদিন পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো থাকে , সেদিন হয়তো দু - তিন টাকা কমে । আর সরবরাহ কম হলে কিছুটা বাড়ে । ” এ অবস্থায় সরকার কিছুটা বাধ্য হয়েই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে গতকাল জানালেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান ।
তিনি বলেন , “ আমরা এই সপ্তাহ অপেক্ষা করার কথা বলেছিলাম । সপ্তাহ শেষ হয়েছে , কিন্তু দাম কমেনি । সে কারণেই আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । কর্মদিবস ছাড়া আমদানির অনুমতি প্রদান করা যায় না । যে কারণে আমরা রবিবার থেকে আমদানির অনুমতি প্রদান করব । ” বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে , সরকার নানাভাবে চেষ্টা করার পরও বাজারে পেঁয়াজের দাম কমানো যায়নি । এর পেছনে রয়েছে একশ্রেণির ব্যবসায়ী । জানা গেছে , স্থলবন্দরগুলোর ওপারে ভারতীয় সীমান্তে প্রচুর পেঁয়াজ মজুত করা হয়েছে । এগুলো আমদানি করার অপেক্ষায় রয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীরা । তবে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও তা সীমিত পরিসরে দেওয়া হবে , যাতে মৌসুমি পেঁয়াজ ওঠার পর কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত না হয় । শীতের আগাম সবজি ওঠা শুরু হলেও চলতি সপ্তাহে সবজির বাজারও চড়া ।
গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০- ২০ টাকা বেশি । কোনো কোনো সবজির দাম কেজিতে ৩০ টাকাও বেড়েছে । গতকাল খুচরায় টমেটো বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা কেজি , যা গত সপ্তাহ পর্যন্ত ১২০ টাকা কেজি ছিল । বেগুন , করলার দাম আবার ১০০ টাকায় উঠেছে , যা ছিল ৬০-৮০ টাকা । শিমের দাম বেড়ে প্রতি কেজি ৯০- ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে , অথচ গত সপ্তাহ পর্যন্ত দাম ছিল ৬০-৮০ টাকা কেজি । কাঁচা মরিচের দামও কিছুটা বেড়ে ১৯০ টাকা হয়েছে । মুলা , ঢ্যাঁড়স , শসাসহ কিছু সবজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি করে ।