আগামী নির্বাচন নিয়ে জরিপ চালিয়েছে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি)। বুধবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর বিওয়াইএলসি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘ইয়ুথ ম্যাটারস সার্ভে ২০২৫’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে; তরুণদের কাছে কে এগিয়ে- বিএনপি জামায়াত না এনসিপি?। রাজধানীর মহাখালীর বিওয়াইএলসি সদরদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এ জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয়।
এতে দেশের আটটি বিভাগের ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ২ হাজার ৫০০ তরুণ-তরুণীর মতামত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
দেশের তরুণদের ১৯.৬ শতাংশ আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে ভোট দেবে। ১৬.৯ শতাংশ জামায়াতে ইসলামী এবং ৩.৬ শতাংশ এনসিপিকে সমর্থন করছে। এ ছাড়া ৯.৫ শতাংশ কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে পছন্দ করে। ৩০ ভাগ তরুণ এখনও সিদ্ধান্তহীন। ১৭.৭ শতাংশ তরুণ পছন্দের দলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
জরিপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিওয়াইএলসির নির্বাহী পরিচালক তাহসিনাহ আহমেদ। বক্তব্য দেন ভয়েস ফর রিফর্মের সহসমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডা. আব্দুন নূর তুষার, বিওয়াইএলসির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ জান্নাতুল মাওয়া ও লিড ফ্যাকাল্টি মুনিরা সুলতানা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের তরুণ প্রজন্মের ভাবনা, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আকাঙ্ক্ষা বোঝার লক্ষ্যে সরাসরি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। গত ১০ থেকে ২১ অক্টোবর দেশের আটটি বিভাগে ২৭টি জেলা ও ১৭৫টি প্রাথমিক নমুনা ইউনিটে জরিপে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী মোট দুই হাজার ৫৪৫ জন অংশ নিয়েছেন। বিওয়াইএলসি প্রতিবার জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ধরনের জরিপ পরিচালনা করে। এতে তরুণদের ভাবনা ও প্রত্যাশা প্রতিফলিত হয়।
জরিপে অংশ নেওয়া ৮৯ শতাংশ উত্তরদাতা নিবন্ধিত ভোটার এবং ৯৭.২ শতাংশ আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে ইচ্ছুক। ৪৯.৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন তারা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। ৬৩.১ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, আগের সরকারের তুলনায় অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে তারা জনসমক্ষে বা সামাজিক মাধ্যমে মতামত প্রকাশে বেশি নিরাপদ বোধ করেন।
৫২.৬ শতাংশ তরুণ মনে করেন, ছাত্র রাজনীতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ন্যায়সংগত ও নির্বিঘ্ন কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে ৪৮ শতাংশ রাজনৈতিক প্রভাবকে, ২৩.৮ শতাংশ সহিংসতা ও সংঘর্ষকে এবং ১১.১ শতাংশ ক্ষমতা ও সম্পদের অপব্যবহারকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
আগামী পাঁচ বছরে দেশের অগ্রাধিকার বিষয়ে প্রশ্নে ৬৭.১ শতাংশ উত্তরদাতা দুর্নীতি নির্মূলকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করেন। সামাজিক সম্প্রীতি বিষয়ে ৬৫.৩ শতাংশ জানিয়েছেন, ধর্ম ও জাতিগত দিক থেকে দেশে এখনও সম্প্রীতি বজায় আছে। তবে ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, বর্তমানে দেশের নারীরা নিরাপদ নন, যা স্থায়ী লিঙ্গভিত্তিক অনিরাপত্তার এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে এবং তাৎক্ষণিক নীতি-মনোযোগ দাবি করে।
তরুণদের ৩৯.১ শতাংশ উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের গড়তে আগ্রহী। ১৮.৩ শতাংশ জানিয়েছে, তারা ভবিষ্যতে বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের পরিকল্পনা করছে। এর পেছনে মূল কারণ হলো কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ ও সামাজিক-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। ৫৯.৬ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত তথ্য দেশের বর্তমান বাস্তবতা সঠিকভাবে উপস্থাপন করে না।
নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তরুণদের মধ্যে আশাবাদ লক্ষ্য করা গেছে। ৬১.৭ শতাংশ উত্তরদাতা দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ইতিবাচক ও আশাবাদী, যা তাদের দৃঢ়তা, আশা ও দেশের অগ্রগতিতে বিশ্বাসের প্রতিফলন।
সংবাদ সম্মেলনে তাহসিনাহ আহমেদ বলেন, এ সমীক্ষা দেখিয়েছে, দেশের তরুণ প্রজন্ম রাজনৈতিকভাবে সচেতন ও সামাজিকভাবে জাগ্রত। তারা দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীরভাবে ভাবছে। তরুণরা তাদের আকাঙ্ক্ষা ও আশঙ্কার কথা বলেছেন। অনিশ্চয়তার মধ্যেও অনেক আশাবাদী। তাদের কথা শোনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা এবং তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নীতিনির্ধারণ করা এখন ভীষণ জরুরি।
ফাহিম মাশরুর বলেন, জরিপ অনুযায়ী দেশের তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হতে চাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এর পেছনে বড় কারণ চাকরির বাজারে যথেষ্ট সুযোগ না থাকা। তবে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রস্তুতি বা প্রশিক্ষণ তাদের নেওয়া দরকার।
ডা. আব্দুন নূর তুষার বলেন, দেশের তরুণদের মধ্যে শিক্ষা, জীবিকা ও রাজনৈতিক ভাবনা আছে। নানা বিষয় নিয়ে হতাশায়ও ভুগলেও ৬১.৭ ভাগ তরুণ দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী ও ইতিবাচক।