Image description
 

আওয়ামী লীগের শাসন আমলের ১৬ বছরেও এতটা নিস্তব্ধ হয়নি পটুয়াখালীর দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সরকারের দাপট আর পুলিশ-প্রশাসনের রক্তচক্ষু কখনো দমাতে পারেনি দুই উপজেলার বিএনপিকে।

 

কিন্তু কেন্দ্রীয় বিএনপির এক সিদ্ধান্তে দমে গেছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। হঠাৎ করেই উপকূলীয় এ জনপদের রাজনীতিতে যেন সুনসান নীরবতা। রাগ, ক্ষোভে আর অভিমানে নেতাকর্মীরা মনমরা হয়ে ঘরমুখো হচ্ছেন। কেউ কেউ রাজনীতি ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা লিখছেন ফেসবুকে। এক অজানা আতঙ্ক তাড়া করছে তাদের।

মূলত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭টি আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।

ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা-গলাচিপা) আসনের প্রার্থী ঘোষণা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। এতেই পটুয়াখালী-৩ আসন তথা দশমিনা-গলাচিপার রাজনীতিতে মেঘের ঘনঘটা এসে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

দীর্ঘদিন ধরে গুঞ্জন ছিল পটুয়াখালী-৩ আসনটি বিএনপির মিত্র গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে ছেড়ে দেবে বিএনপি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নুরকে পটুয়াখালী-৩ আসন ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনার খবর প্রকাশ হলে অনেকটা ভেঙে পড়ে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতি। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় গণঅধিকার পরিষদ ও বিএনপির সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছে। গত জুনে গলাচিপায় বিএনপির কার্যালয় ভাঙার অভিযোগ ওঠে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। একইভাবে ভিপি নুরকে অবরুদ্ধ করার অভিযোগও ওঠে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সেই সময় পরিস্থিতি শান্ত করতে দুই উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করতে হয় প্রশাসনকে।

স্বাধীনতার পর সরাসরি জনগণের ভোটে ও প্রতিযোগিতামূলক কোনো সংসদ নির্বাচনেই বিএনপি একবারের জন্যও এ আসনটিতে জয়লাভ করতে পারেনি। যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন ও জনগণের কাছে আস্থা অর্জন না করতে পারা ছিল অন্যতম প্রধান কারণ।

তবে এই প্রথম বিএনপির কেবলমাত্র একজন প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুনকে কেন্দ্র করে পটুয়াখালী-৩ আসনে ইতিহাস রচনার সুযোগ থাকলেও জোটের গুঞ্জনে সেই স্বপ্নে গুড়েবালি। মনোনয়নের সাক্ষাতের জন্য তাকে ঢাকায় ডাকাও হয়েছিল।

এদিকে বিএনপি পটুয়াখালী-৩ আসনে দলীয় কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা না দেওয়ায় অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে আছেন স্থানীয় গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা।

জামায়াতে ইসলামী থেকে এ আসনে অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহ-আলমকে করা হয়েছে প্রার্থী। একইভাবে হাফেজ মাওলানা মুফতি আবু বকর সিদ্দীক নামে একজনকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন।

২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনিকে পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে মনোনয়ন দিয়েছিল বিএনপি। সেই সময় দশমিনা-গলাচিপায় নেতাকর্মীদের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। দলের বাইরে কাউকে মনোনয়ন দিলে ফের পদত্যাগের হিড়িক পড়বে বলে দাবি স্থানীয় দলের নেতাকর্মীদের।

দশমিনা-গলাচিপায় মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার ২৬১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৭ হাজার ১৫৪ ও ১ লাখ ৭৫ হাজার ১০৫ জন নারী ভোটার রয়েছেন। এছাড়াও আসনটিতে দুজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন।

দশমিনা উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাওলাদার মো. ইফতিয়াস উদ্দিন জয় বলেন, পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুনকে একক প্রার্থী হিসেবে গুলশান কার্যালয়ে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়েছিল। এতে দলের নেতাকর্মীরা অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছিলেন এই প্রথমবার আসনটি বিএনপির দখলে যাবে; কিন্তু আসনটিতে এখনও বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা না হওয়ায় সাধারণ মানুষ ও দলের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়েছেন। তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দলের বাইরে জোটের কাউকে মনোনয়ন দিলে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে ধস তো নামবেই সঙ্গে আর কোনো দিন এ আসনটি বিএনপির ঝুলিতে যাবে না। বিএনপি আসন না পাওয়ার কলঙ্কও ঘোচাতে পারবে না। হাসান মামুনের বাইরে মনোনয়ন দেওয়া হলে তা আমরা মেনে নেব না।

বিএনপির হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপি নেতা হাওলাদার মো. ইফতিয়াস উদ্দিন জয় বলেন, আমার বিশ্বাস কেন্দ্র অবশ্যই পটয়াখালী-৩ সম্পর্কে আরও খোঁজখবর নেবে।

তিনি দাবি করেন, হাসান মামুন ছাড়া অন্য কাউকে (জোট) মনোনয়ন দিলে জামায়াত প্রার্থী নিশ্চিত এমপি নির্বাচিত হবেন। 

উপজেলা যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি কেএম ইমরান শাহিন বলেন, বিএনপির সঙ্গে জোটের এখনো কোনো আভাস পাওয়া যায়নি। দল থেকেও তৃণমূলে কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। বিএনপির সঙ্গে জোট ঘোষণা হলে তাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করবে গণঅধিকার। ভিপি নুর এমপি নির্বাচিত হলে বিএনপিকে পাশে নিয়েই সব কাজ করা হবে। বিএনপির সঙ্গে তাদের কোনো বৈরিতা থাকবে না বলেও জানান তিনি।