Image description
 
 

দড়জায় কড়া নাড়ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর এই নির্বাচন ঘিরে মানুষের মধ্যে একটু ভিন্নরকম আগ্রহ কাজ করছে। গত ১৭ বছর দেশের জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রযোগ করতে পারেনি। এজন্য এবারের নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ বেশি। নানা জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। মনোনয়নে প্রাধান্য পেয়েছে বিগত আন্দোলনে ভূমিকা, এলাকায় জনপ্রিয়তাসহ কয়েকটি মানদণ্ড।

 

সোমবার সন্ধ্যায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৩৭ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করে দলটি। নানা দিক বিবেচনায় এবারই প্রথম তফশিলের আগে একক প্রার্থী ঘোষণা করল দলটি। এর আগে জাতীয় নির্বাচনের তফশিলের পর সাধারণত একক প্রার্থী ঘোষণা করা হতো। বাকি আসনের বেশির ভাগ মিত্রদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে।

কিন্তু ২৩৭টি আসনের প্রার্থী ঘোষণা করলেও লক্ষ্মীপুরের চারটি আসনের মধ্যে দুইটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর-১ এবং লক্ষ্মীপুর-৪ এই দুইটি আসন জোটসঙ্গীদের জন্য ফাঁকা রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে সমর্থন পেতে পারেন বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র সাহাদাত হোসেন সেলিম। এ আসনেও বিএনপি কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। 

এছাড়া লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে লড়বেন জেএসডির আ স ম আব্দুর রবের স্ত্রী তানিয়া রব। এ আসনেও প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তবে অসুস্থতার কারণে তার পরিবর্তে তার স্ত্রী দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব প্রার্থী হবেন। 

এ আসনে বিএনপি থেকে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন বিথীকা বিনতে হোসাইন, যিনি প্রয়াত স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শফিউল বারী বাবুর স্ত্রী।

অন্যদিকে এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন দলের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান। তিনি অনেক আগে থেকেই ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। এর আগেও তিনি এই আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন।

সোমবার সন্ধ্যায় প্রার্থী ঘোষণার পর আশরাফ উদ্দিন নিজানের নাম প্রার্থী তালিকায় না থাকায় রামগতি-কমলনগরে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও দলীয় নেতাকর্মীরা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছেন।

জানা গেছে, দলের পক্ষ থেকে যদি এই আসনে আশরাফ উদ্দিন নিজানকে মনোনয়ন নাও দেয়, তা-ও তিনি এই আসনে লড়বেন। ইতোমধ্যে তিনি মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। 

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়নপ্রত্যাশী আশরাফ উদ্দিন নিজান রামগতি-কমলনগরের বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে উঠান বৈঠক করছেন। ধানের শীষের পক্ষে তার নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন বাজার-ঘাটে তিনি গণসংযোগও করছেন।

এ বিষয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী আশরাফ উদ্দিন নিজান যুগান্তরকে বলেন, ‘একচ্যুয়ালি এ বিষয়ে আমার দল আমাকেই এই আসনে নির্বাচন করার জন্য মনস্থির করে রেখেছে। আর আমি এই আসনে তিনবার ভোট করেছি, জয়লাভও করেছি। রব সাহেবের সঙ্গেও তিনবার ভোট করেছি। নাইন পার্লামেন্টে জামানতও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এই আসনে আবদুর রব সাহেবও ভোট করেছেন। উনারা আমার বাবার মতো, উনাদের সঙ্গেও ভোট করেছি। মেজর মান্নানের সঙ্গেও ভোট করেছি।’

তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের নেতাকর্মীরা ডিসাইডেড, উনার তো এখানে কোনো নেতাকর্মীও নাই। এখন উনার ভোট করবে কে? আমি জানি না। তিনি নিজেও অসুস্থ মানুষ। হয়ত জোটের কারণে বন্ধ রাখছে কিনা-পরে সিদ্ধান্ত দিবে কিনা। যেহেতু উনারা একটা দাবি করছে। আমি জানি না।’

নিজান বলেন, কিন্ত আমরা ইলেকশনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। আমি এখনো গ্রামে। আমি আজকে ১৪ মাস ১৬২ ওয়ার্ডে ধরে ধরে মহিলাদেরকে নিয়ে সভা করতেছি। এখনো আমি উঠান বৈঠক থেকে আসছি। উই আর ডিসাইডেড, আওয়ার পিপলস ডিসাইডেড, নেতাকর্মীরা ডিসাইডেড, যখন দেয় নাই নেতাকর্মীরাতো অসম্ভব বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছিল। আমরা ভোট করব, ডিসাইডেড। পার্টি আমাদেরকে দেয় নাই, হয়তো টেকনিক্যাল সমস্যায় আছে। সেজন্য ডিলে করতেছে।

 

তিনি বলেন, ‘তারপরও আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, সতেরো বছর আমার রামগতির ১৩ হাজার নেতাকর্মী জেলে গেছে। আমার চারজন নেতাকর্মী মারা গেছে। সতেরো বছর আমি পথে-প্রান্থরে ছিলাম, আমি নিজে জেল খেটেছি। আমরা কোনো ছাড় দেব না। কোনো রকম ছাড় দেব না।আমি ছাড়লেও আমার নেতাকর্মীরা ছাড়বে না। তারা যে সিরিয়াস আমি যদি না-ও দাঁড়াই একজন দাঁড়াই যাবে। বিএনপির ভোট তারা কোনো দিন আশা করতে পারে না।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে আশরাফ উদ্দিন নিজান বলেন, রামগতি-কমলনগর-রামগতি পৌরসভায় আমার সাংগঠনিক নেতাকর্মী হলো ৪৪ হাজার। উনাকে (তানিয়া রব) ধানের শীষ প্রতীক দিলেও আমার নেতাকর্মীরা তার ভোট করবে না। আরও দুই বছর আগ থেকেই আমার নেতাকর্মীরা ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। বিএনপির আমি ছাড়াও আমার দলের আরও ৫ জন নেতা আছে যারা ভোট করার যোগ্য এবং উইন করার উপযুক্ত। কেউ ছাড়বে না।

সবশেষ তিনি স্পষ্ট করে বলেন,আমার এখানে মহিলা দলসহ ৪৪ হাজার সাংগঠনিক নেতাকর্মী রয়েছে। আমি মানলেও তারা মানবে না। আমি ভোট করব। আমি ছেড়ে দিলেও আমার নেতাকর্মী ছাড়বে না। এখানে ইলেকশন হবে। এখন আমাকে বন্দি করে আটকে রাখতে পারে, আরেকজন দাঁড়িয়ে যাবে।

 

বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী বিথীকা বিনতে হোসাইন বিথী যুগান্তরকে বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগেই বলেছেন যারা অ্যালায়েন্স করেছিলেন তাদেরকে নিয়েই একটি জাতীয় সরকার গঠন করবেন। সেখানে যদি জোট হয় সে জায়গা থেকে হয়তো এ আসনটা ফাঁকা রেখেছেন। পার্টি বিবেচনা করছে, হয়তো ভবিষ্যতে তারা সিদ্ধান্ত নেবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে নমিনেশন দেয়, তাহলে আমি ভোট করব। তবে দলের বাইরে গিয়ে নিজের একক সিদ্ধান্তে ভোট করব না।’ 

সবশেষ বিথী বলেন, ‘আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শের দল করি। দলের বাইরে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেব না।’ 

প্রার্থিতার বিষয়ে জেএসডির সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রবের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।