Image description
 

ঠাকুরগাঁও রোড রেলস্টেশনে ঘটেছে এক বিতর্কিত ঘটনা। বিভাগীয় এক রেল কর্মকর্তাকে ওঠাতে যাত্রীবোঝাই চলন্ত ট্রেন ফিরিয়ে আনা হয় স্টেশনে। সেই ঘটনায় সাধারণ যাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

 

সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে ঠাকুরগাঁও রোড রেলস্টেশনে এমন ঘটনা ঘটে।

 
 

ট্রেনটি যখন ফের স্টেশনে আসে, তখন ওই কর্মকর্তা ‘নরমাল ট্রেন’ বলে সেটিতে উঠতে অনীহা প্রকাশ করেন। এতে যাত্রীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত তিনি সেই ট্রেনেই উঠতে বাধ্য হন।

পঞ্চগড় থেকে পার্বতীপুরগামী ট্রেনটি স্টেশন অতিক্রম করার কিছুক্ষণ পরই থামিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, ট্রেনে উঠতে পারেননি লালমনিরহাট বিভাগের রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আবু হেনা মোস্তফা আলম। তাকে নিতেই ট্রেনটি আবার স্টেশনে ফিরে আসে।

ট্রেনের এক যাত্রী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘সোমবার বিকেল ৪টা ২৬ মিনিটে ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে যায় পার্বতীপুরগামী কাঞ্চন সেমি-আন্তঃনগর ট্রেনটি। ছেড়ে যাওয়ার কয়েক মিনিট পর, প্রায় ৫ কিলোমিটার এগোনোর পর হঠাৎ ট্রেনটি পেছনে ফিরে যেতে থাকে। এতে মুহূর্তেই ট্রেনের ভেতরে থাকা যাত্রীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ট্রেনটি স্টেশনে ফিরে এলে আমরা জানতে পারি, এক বিভাগীয় কর্মকর্তা ট্রেনে ওঠার জন্য ট্রেনটি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এতে যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হন।’

তবে ওই কর্মকর্তা ট্রেন ফিরিয়ে আনার পর ‘নরমাল ট্রেন’ বলে সেটিতে উঠতে অনীহা প্রকাশ করেন’ লোকাল ট্রেনে যাত্রা করতে অস্বীকৃতি জানালে আরো ক্ষিপ্ত হন যাত্রীরা। ঘটনাটি কেন্দ্র করে স্টেশন এলাকা জুড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এবং যাত্রীরা বিক্ষোভ দেখান। একপর্যায়ে জনসাধারণের রোষানলে পড়ে ট্রেনে উঠতে বাধ্য হন রেল কর্মকর্তা আবু হেনা মোস্তফা আলম।

যাত্রীরা অভিযোগ করেন, একজন কর্মকর্তার জন্য পুরো ট্রেন ফিরিয়ে আনা সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ।

‘আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোগান্তিতে থাকি, অথচ একজন বড় কর্মকর্তা ট্রেনে উঠতে না পারলেই পুরো ট্রেন ঘুরে আসে।’

ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে অনেকে চিৎকার করে বলেন, ‘আমরা যাত্রীরা কি মানুষ নই? একজন সাহেব উঠতে না পারলে পুরো ট্রেন ঘুরে আসে, এটা কেমন নিয়ম?’

কেউ মোবাইলে ভিডিও করে, কেউ স্লোগান দেয় রেল প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

অনেকে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘বড় সাহেবের জন্য ট্রেন ঘুরে এলো, কিন্তু দেশের ট্রেন ব্যবস্থা এখনও ঘুরছে না।’

রোড রেলস্টেশনে থাকা পারভেজ ও লিমন বলেন, ‘ট্রেন ফিরিয়ে আনার ঘটনা এই অঞ্চলে আগে কখনও ঘটেনি। ঠাকুরগাঁও রোড স্টেশনের ইতিহাসে এটি এক অভূতপূর্ব ঘটনা।’

রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। ট্রেন একবার ছেড়ে গেলে কোনো যাত্রী বা কর্মকর্তার জন্য ফেরানো যায় না। এটি রেলওয়ে আইন ও নিয়মের পরিপন্থি।’

ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশন পরিদর্শনে আসেন লালমনিরহাট বিভাগের রেলওয়ে ব্যবস্থাপক আবু হেনা মোস্তফা আলম। ঠাকুরগাঁও থেকে তার দিনাজপুরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আগে থেকে আমাদেরকে জানানো হয়নি। লালমনিরহাট অফিসের নির্দেশে ট্রেনটি আবারও স্টেশনে ফিরে আসে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ফিরিয়ে আনার পরে লোকাল ট্রেন হওয়ায় তার পছন্দ হয়নি। তাই পরবর্তী ট্রেনে যাত্রা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যাত্রীদের ক্ষোভের কারণে তিনি সেই ট্রেনেই যাত্রা করেন।’

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট বিভাগের রেলওয়ে ব্যবস্থাপক আবু হেনা মোস্তফা আলম বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশন পরিদর্শনে এসে আমি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাই। স্টেশনের কর্মকর্তাদের জানিয়ে রাখি পরের ট্রেনে আসলে আমাকে জানানো হোক। আমি সেই ট্রেনে করেই দিনাজপুর যাব। কিন্তু স্টেশনের কর্মকর্তারা আমাকে না জানিয়ে ঠাকুরগাঁও থেকে ট্রেনটি ছেড়ে দেয়। এরপর পাঁচ কিলোমিটার চলার পরও ট্রেনটি ফিরিয়ে আনা হয়।

স্টেশন মাস্টার আবু তারেক জানান, ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত, আমাদের ট্রেন ফিরিয়ে আনতে হয়েছে। যাত্রীদের কাছে আমরা দুঃখ প্রকাশ করেছি।’