গণঅভ্যুত্থানের পর অভ্যুত্থানের অগ্রভাগের তরুণদের নিয়ে গঠিত হয় নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি। দলটি আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এখনও তাদের প্রধান দাবি সংস্কার ও গণহত্যার বিচার। এসব বিষয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক সাইফুল ইসলাম।
ঢাকা পোস্ট : আপনারা একসময় ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। আপনাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির বয়স এখন প্রায় আট মাস। এখন পর্যন্ত দল নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
আখতার হোসেন : আমরা ছাত্রবয়সে যে সংগ্রাম শুরু করেছি, তার মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনা। আমরা মধ্যমপন্থী সম্প্রীতির রাজনীতির চর্চা করে নিজেদের প্রস্তুত করছিলাম। তখন ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে শক্তভাবে অবস্থান করে নিয়েছিল। ২৪-এর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দলকে জনগণ বাংলাদেশ থেকে উৎখাত করেছে। যার ফলে আমাদের তরুণদের জন্য বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
এনসিপির সাথে অনেক মানুষ যুক্ত হয়েছেন। যারা পূর্বে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন না এমন অনেকেও যুক্ত হয়েছেন। ফ্যাসিবাদী কাঠামো ভেঙে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তারা আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন। আমরা খুব কম সময়ে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় পৌঁছেছি। বাংলাদেশের মানুষের কাছে আমাদের মূল বার্তা- নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও তরুণদের প্রতি আস্থা, এটা প্রতিফলিত হয়েছে।
আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে দল নিবন্ধনের শর্তগুলো পূরণ করেছি। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নজির সৃষ্টি করেছে। কমিশন আমাদের ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করেছে। আমরা কোনো ত্রুটি না রেখে শর্তগুলো পূর্ণ করেছি। এই দ্রুত নিবন্ধন উপযোগী হওয়া আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন। যা তরুণদের নতুন রাজনীতির প্রতি আস্থা এবং তাদের সামর্থ্যকে প্রমাণ করে।
শুরুতে এটি ছিল তরুণদের পার্টি কিন্তু এখন এটি নানা বয়সী মানুষের মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে। ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরাও আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন। নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এনসিপির মধ্যম পন্থার রাজনীতি এবং এর গ্রহণযোগ্যতা নারী-পুরুষ, ধর্ম ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সব মানুষের কাছে পৌঁছেছে। যা আমাদের ইতিবাচক অগ্রযাত্রা হিসেবে দেখছি।
ঢাকা পোস্ট : আপনারা অভ্যুত্থানের পর যে আশা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন, এক বছর পর সেই আশা কতটুকু পূরণ হয়েছে?
আখতার হোসেন : ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করেছিলাম। তখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগ ছিল প্রতি বিপ্লবের আশঙ্কা। দেশে স্থিতিশীলতা আনা। এই সরকার সেগুলো সামলাতে পেরেছে বলে মনে করি।
অভ্যুত্থানের পর অর্থনৈতিক সংকটের ঝুঁকি ছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তা মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক গতিশীলতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের সময় জনগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং গণমাধ্যমের কেউ বাকস্বাধীনতা উপভোগ করতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে যা কিছু ঘটুক না কেন, একটি মুক্ত বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত হয়েছে, যা অভূতপূর্ব অর্জন।
সরকারের উদ্যোগে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনাগুলো শুরু হয়েছে এবং যারা ডিজিএফআই বা অন্যান্য বাহিনীর মাধ্যমে গুম-খুন করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এসব ইতিবাচক পদক্ষেপ।

তবে কিছু ব্যর্থতাও রয়েছে। নাগরিক সেবার ক্ষেত্রে আমরা যেরকম আশাবাদী ছিলাম, সেরকম কিছু হয়নি। আমলাতন্ত্রের জটিলতার কারণে জনগণ সেবা পাচ্ছে না। বিচারের ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যাশা ছিল—যারা অপরাধ করেছে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। এখন পর্যন্ত খুব সামান্য সংখ্যক অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে, যা আমাদের চোখে এ সরকারের ব্যর্থতা।
জুলাই ঘোষণাপত্রটি একটি রাজনৈতিক দলের ভাষ্যে তৈরি হয়েছে, সেখানে কিছু ত্রুটি রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। অনেক জায়গায় চাঁদাবাজির ঘটনা শোনা যাচ্ছে। পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথভাবে প্রতিরোধ করতে পারছে না।
ঢাকা পোস্ট : আগামী বছরের প্রথমদিকে সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আপনারা কতটুকু প্রস্তুত?
আখতার হোসেন : জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখন পর্যন্ত প্রধান লক্ষ্য হিসেবে সংস্কার কার্যক্রম এবং বিচার প্রক্রিয়াকে দৃশ্যমান পর্যায়ে উন্নীত করাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমরা মনে করি, এই দুটি ধাপ সফলভাবে বাস্তবায়িত হওয়ার পরই নির্বাচনের বিষয়ে পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া উচিত। আমরা যদি নির্বাচন নিয়ে আগেই দলীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করতাম, তবে সংস্কারের আলোচনা এবং জাতির কাছে তা গুরুত্বের জায়গায় না পৌঁছানোর আশঙ্কা ছিল। এক্ষেত্রে, আমরা সংস্কার এবং বিচার কার্যক্রমকে প্রাধান্য দিয়েছি। নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ এখনো শুরু করিনি।
তবে আমাদের সর্বশেষ জাতীয় সমন্বয় সভায় সারা দেশের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য আহ্বান জানিয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করেছি এবং ইউনিয়ন পর্যায়েও কাজ চলছে। জনগণের সমর্থন পাচ্ছি। এনসিপি সম্পর্কে জানার আগ্রহ বাড়ছে। এখন আমরা নিবন্ধনের প্রায় দ্বারপ্রান্তে রয়েছি। সংস্কার এবং বিচার কার্যক্রমে দৃশ্যমান অগ্রগতি ঘটলেই আমরা নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করব। তখন আমরা জনগণের সমর্থন নিয়ে সফল হতে পারব বলে আশাবাদী।

ঢাকা পোস্ট : শোনা যাচ্ছে এনসিপি বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে। আপনারা কাদের সঙ্গে জোট করবেন। নাকি একা নির্বাচন করবেন?
আখতার হোসেন : আমাদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করে, নিজেদের শক্তির ওপর ভিত্তি করে আমরা নিজেদের কাঠামোর মধ্যে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। তবে বাংলাদেশে জোটকেন্দ্রিক রাজনীতি কোনো নতুন ঘটনা নয়। যদি দেশের স্বার্থে বা জাতীয় স্বার্থে জোটের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়, তবে আমরা যে কোনো দলের সঙ্গে জোট করতে প্রস্তুত। বর্তমানে, আমরা কোনো দলের সাথে জোট নিয়ে আলোচনা শুরু করিনি। নির্বাচনের রাজনীতিতে যখন আমরা পূর্ণাঙ্গভাবে প্রবেশ করব, তখন এই জোট বিষয়ক সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি পরিষ্কার ফয়সালা করব।
ঢাকা পোস্ট : একটি বিষয় শোনা যাচ্ছে যে, বিএনপির কাছে আপনারা ৫০টি আসন চেয়েছেন। এটি কি সত্য?
আখতার হোসেন : এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমাদের নির্বাচনী জোট নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সুতরাং এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই।
ঢাকা পোস্ট : বর্তমানে দেশে বিএনপি ও জামায়াতের মতো বড় দল থাকতে আগামী নির্বাচনে ভোটাররা আপনাদের কেন ভোট দেবে?
আখতার হোসেন : জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বাংলাদেশে একটা নতুন ধরনের রাজনীতি শুরু করেছে। আমরা পলিসিনির্ভর রাজনীতি উপহার দিতে চাই, যেখানে মতাদর্শিক দ্বন্দ্বের পরিবর্তে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সম্প্রীতির ভিত্তিতে রাজনীতি করা হবে। আমরা পেশিশক্তির নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে জনগণের পক্ষে প্রো-পিপল পলিসি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি।
এনসিপি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো উন্নয়নের কথা বলছে। যেখানে মানুষের মানবিক মর্যাদাকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। নাগরিক সেবা এবং নাগরিক সমস্যাগুলোর সমাধান করার রাজনীতি এনসিপি বাংলাদেশে প্রবর্তন করতে যাচ্ছে। পূর্বের রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতাকেন্দ্রিক ও মতাদর্শ ভিত্তিক রাজনীতি করেছে। যা শেষ পর্যন্ত জনগণের প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে। এনসিপি এখানে অন্য দলগুলো থেকে আলাদা। এজন্যই বাংলাদেশের জনগণ আমাদের গ্রহণ করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

ঢাকা পোস্ট : আপনারা প্রায়ই ভারতবিরোধী স্লোগান দেন। যদি ভারত বাংলাদেশের ব্যাপারে নীতিগতভাবে কোনো পরিবর্তন আনতে যায়, তাহলে আপনি কি মনে করেন এর ফলে আমাদের দেশে আমেরিকা বা চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পাবে?
আখতার হোসেন : ভারতের সাধারণ জনগণের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। যখন আমরা হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলাম, গণঅভ্যুত্থান চলছিল, তখন কলকাতায় ভারতের জনগণ আমাদের আন্দোলনের সমর্থনে রাস্তায় নেমে এসেছিল এবং স্লোগান দিয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ভারতের জনগণের কোনো বৈরিতা নেই।
প্রকৃত সংকট হলো দিল্লির বাংলাদেশ নীতি। তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে বৈষম্যমূলক এবং আধিপত্যবাদী, আগ্রাসনমূলক নীতি গ্রহণ করে। দিল্লি বাংলাদেশের জনগণের সাথে সম্পর্ক না রেখে একটি রাজনৈতিক দল (আওয়ামী লীগ) এবং তাদের সহযোগীদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে। বাংলাদেশের স্বার্থ উপেক্ষা করা হয়েছে। নদীর পানি নিয়ে চুক্তি হলে তারা একতরফাভাবে শর্ত আরোপ করেছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য তা মেনে নিয়েছে।
ভারত বাংলাদেশে তার প্রভাব বিস্তারে দাদাগিরি দেখিয়েছে। আমরা এ ধরনের মনোভাবের পরিবর্তন চাই। যদি ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায়, তবে আমরাও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বৈরিতা চাই না। তবে বর্তমান সময়েও ভারত সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে। যারা বাংলাদেশে গণহত্যা করেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল, ভারত যদি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সত্যিই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতো তবে তাদের বিচার বিভাগ এসব অপরাধীকে হস্তান্তর করতে পারত। কিন্তু তা তারা করেনি। এটি ভারতকে ভাবতে হবে। তারা বাংলাদেশের জনগণের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় নাকি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি বৈরিতা অব্যাহত রাখতে চায়!
আমরা মনে করি, ভারতকে তাদের নীতি পরিবর্তন করতে হবে। আঞ্চলিক বিষয়গুলো মাথায় রেখে তাদের নীতি আরও সমন্বিত ও বন্ধুত্বপূর্ণ হতে হবে।

ঢাকা পোস্ট : আপনার দলের আহ্বায়কের কাছ থেকে উপদেষ্টাদের ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে যে বক্তব্য এসেছে, আপনি কি তার সঙ্গে একমত?
আখতার হোসেন : উপদেষ্টারা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে দায়িত্ব পেয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সংস্কার সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা। যাতে ফ্যাসিবাদী কাঠামো পুনরায় ফিরে না আসে। যারা গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা। এ বিষয়ে তারা ধীরে ধীরে কিছু অগ্রগতি করেছে। তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যেমন- বিচার নিশ্চিত করা, সংস্কার বাস্তবায়ন করা এবং সামনে যে নির্বাচন হবে সেটি যেন একটি অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য, ফেয়ার নির্বাচন হয়—এগুলো নিশ্চিত করা তাদের প্রধান কর্তব্য।
কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আচরণ দেখে মনে হয়, তারা শুধু নির্বাচন আয়োজন করে ক্ষমতা হস্তান্তর করার মাধ্যমে নিজেদের দায়িত্ব শেষ মনে করবেন। সেফ এক্সিটের অর্থ এটা নয় যে তারা আসলে দেশ থেকে চলে যেতে চান, ব্যাপারটা এমন নয়। তারা আসলে তাদের উপরে অর্পিত যে দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব থেকে কোনোরকম একটা পালনের পর সেফ এক্সিট চান। শুধু ক্ষমতা হস্তান্তর করে দিয়ে তারা তাদের কর্তব্য সম্পূর্ণ হয়েছে বলতে চান।

ঢাকা পোস্ট : আগামী নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনারা কোন কোন বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেবেন?
আখতার হোসেন : যারা দীর্ঘ সময় ধরে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, নানা সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকে মানবতার পক্ষে কাজ করেছেন, যারা সাবেক শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, আমলা, সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন—এমন ব্যক্তিরাই আমাদের দলের জন্য আদর্শ প্রার্থী হতে পারেন।
আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বাংলাদেশকে নতুনভাবে বদলে দেওয়ার যে স্বপ্ন আছে, সেই স্বপ্নের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা। যারা তাদের কিছু সময় দেশের উন্নতি ও কল্যাণের জন্য ব্যয় করতে চান। আমরা এমন অনেক মানুষকে পেয়েছি যারা এনসিপির সাথে যুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক। এসব মানুষ দেশের পক্ষে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন এবং আমাদের দলের উদ্দেশ্য ও দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে তারা একমত।
নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরুর আগে আমরা মাঠের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে, প্রার্থীদের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত দক্ষতা বিচার করে দলীয় নমিনেশনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। যারা নিজেদের কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নতি ও পরিবর্তনের জন্য নিবেদিত, তাদেরকেই আমরা নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় তুলে আনব।
ঢাকা পোস্ট : অতীতে আওয়ামী লীগ থেকে বঞ্চিতরা যদি এনসিপির মনোনয়ন চান, সেক্ষেত্রে আপনার দল কী সিদ্ধান্ত নেবে?
আখতার হোসেন : বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পর্যায়ে যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের হাতে দেশের মানুষ যে নৃশংসতা ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, সেই বিষয়ে কোনো অনুশোচনা বা স্বীকারোক্তি তাদের নেই। আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিবাদী কাঠামো তৈরি করেছে, যা মানুষের উপর গুম, খুন, গণহত্যা চাপিয়ে দিয়েছে। এমন একটি দলের, যারা দেশের জনগণের উপর অমানবিক আচরণ করেছে, তাদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের কোনো অধিকার নেই। এমন লোকদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই।

ঢাকা পোস্ট : আপনার দলের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কী? আগামী পাঁচ বা দশ বছরের মধ্যে দল কোন দিকে এগোতে চায়?
আখতার হোসেন : আমরা যারা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠনের উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করেছি, তারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে এক নতুন রাজনীতির স্বপ্ন দেখেছি। একটি মধ্যমপন্থী, ন্যায়ভিত্তিক ও সংস্কারমুখী রাজনীতি করার স্বপ্ন দেখেছি। আমাদের দেশটি অসংখ্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে, সক্রিয়ভাবে ও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারছে না। বিচার বিভাগ, পুলিশ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিষ্ঠান, যেসব প্রতিষ্ঠান দেশের রক্ষাকবচ হওয়ার কথা ছিল, সেগুলো দলীয় লেজুড়বৃত্তিতে বিভক্ত বা ধ্বংসপ্রায়।
আমরা সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করতে চাই। যাতে জনগণ তাদের সেবা পেতে কোনো বাধা না পায়। বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাকে বিশ্ববাজারে উপস্থাপন করে, সীমান্তের বাইরেও দেশের বিকাশ নিশ্চিত করার পথে আমরা কাজ করব। একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়াই আমাদের রাজনীতির লক্ষ্য। আমরা সেই পথেই এগিয়ে যেতে চাই।
ঢাকা পোস্ট : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আখতার হোসেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।