Image description
 

ফেসবুকে মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ফেনীতে ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে ছয় কিশোরকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়েছে।

 

রোববার সন্ধ্যায় স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, প্রধান শিক্ষক, পুলিশ কর্মকর্তা ও উভয়পক্ষের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ঘটনাটি টাকার বিনিময়ে দফারফার চেষ্টা চালানো হয়।

 

এর আগে দুপুরে জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের নিজকুঞ্জরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম শামীম, ইমরান হোসেন, আরমান হাসান, রাফি, আরাফাত ও অনিক।

অন্যদিকে, অভিযুক্ত রাহাত উদ্দিন ভূঁইয়া ফেনী মহিপাল সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি। তিনি ছাগলনাইয়া উপজেলার বাসিন্দা।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন আগে আহতরা তাদের এক বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করে। সেখানে ছাত্রদল নেতা রাহাতের ছোট ভাই, নিজকুঞ্জরা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহাদ হোসেন আপত্তিকর মন্তব্য করেন।

 

এ নিয়ে জানতে চাইলে ফাহাদের সঙ্গে তাদের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে ফাহাদ বিষয়টি তার বড় ভাই রাহাতকে ফোনে জানায়। একপর্যায়ে রাহাত তার সহযোগীদের নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে ছুরি ও চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে বিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

 

পরে সন্ধ্যায় স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, প্রধান শিক্ষক, পুলিশ কর্মকর্তা ও উভয়পক্ষের অভিভাবকদের বৈঠকে প্রত্যেক আহতকে ১০ হাজার টাকা করে চিকিৎসা খরচ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং থানায় অভিযোগ না করার শর্তে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করা হয়।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, সভায় আমাদের বলা হয়েছে এটি যেহেতু বিদ্যালয়ের ভেতরের বিষয়, তাই যেন কোনো মামলা না করি।

সভায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক, পুলিশ, বিএনপি নেতা ও ছাগলনাইয়া উপজেলা ছাত্রদল নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা সিদ্ধান্ত দেন যে মামলা না করে ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা বাবদ ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে।

 

 

ভুক্তভোগী শামীম বলেন, ‘আমরা শুধু জানতে চেয়েছিলাম কেন ফেসবুকে বাজে মন্তব্য করেছিল। বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রধান শিক্ষকের কক্ষে গেলে রাহাত ও ফাহাদসহ কয়েকজন ছুরি-চাপাতি নিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। পরে স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করে বারৈয়ারহাট কমফোর্ট হাসপাতালে ও পরে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।’

 

 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ভেতরে সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমান শিক্ষার্থীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থেকে ঘটনাটি ঘটেছে। উভয়পক্ষের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে পুলিশ কর্মকর্তা এসে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছেন। ফাহাদের বিষয়ে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।’

 

ভুক্তভোগীদের টাকা দেয়ার শর্তে মীমাংসার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি অবগত নন।

 

অভিযুক্ত রাহাত উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে। স্থানীয় ঘোপাল তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক উপস্থিত থেকে মীমাংসা করে দিয়েছেন। তারা সবাই ছোট ছেলে। নিজেদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও মনোমালিন্য হয়েছে, অন্য কিছু নয়। আমার নেতৃত্বে কোনো হামলা হয়নি, আমি একাই বিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম।’

 

ছাগলনাইয়ার ঘোপাল তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লুৎফুল কবির বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মীমাংসার চেষ্টার বিষয়ে আমার জানা নেই। শিক্ষকরা যদি এমন কিছু করে থাকেন, তবে সেটি তাদের নিজস্ব বিষয়।’