Image description

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে বিএনপি অন্যতম প্রধান স্টেকহোল্ডার। অথচ বিএনপির দেওয়া প্রস্তাবগুলোর কোনোটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বরং দলটি যেগুলোর বিরোধিতা করেছে, কমিশনের চূড়ান্ত প্রস্তাবে সেগুলোকেই রাখা হয়েছে। ফলে কমিশন এখন কার্যত ‘অনৈক্য কমিশন’-এ পরিণত হয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। কিন্তু ঐ সুপারিশে বিএনপির মতামত ও প্রস্তাব উপেক্ষা করা হয়েছে। এমনকি বিএনপির ‘নোট অব ডিসেন্ট’ যুক্ত করার প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করা হয়নি। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দলটি। 

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।  

 

বিএনপি মনে করছে, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মতামতের প্রতিফলন স্পষ্ট, যা সরকারের অবস্থানের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। দলটির অভিমত, সরকার ও ঐকমত্য কমিশন মিলে বিএনপিকে প্রক্রিয়া থেকে পরিকল্পিতভাবে দূরে সরিয়ে রাখছে।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এ বিষয়ে শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করবে। পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়াও জানাবে দলটি।

ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, আগামী সংসদ নিয়মিত কাজের পাশাপাশি প্রথম ২৭০ দিন (৯ মাস) ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে কাজ করবে। এই সময়ে গণভোটে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। তবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন না হলে প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা এই প্রস্তাবকে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ‘লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার (এলএফও)’ এবং আইয়ুব খানের ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাদের মতে, কমিশনের প্রস্তাবে ঠিক একইভাবে কিছু দলের মতামত জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, যা জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা। 

 

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ১৭ অক্টোবর ২৫টি রাজনৈতিক দল যে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে, মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) কমিশনের দেওয়া সুপারিশের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। আমরা মনে করি, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করাই এর মূল উদ্দেশ্য। 

অন্যদিকে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রেফারিকে আমরা কখনো গোল দিতে দেখিনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ঐকমত্য কমিশন, সরকার ও আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল একই পক্ষ হয়ে গেছে।

বিএনপি নেতাদের অভিমত, ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে ঐক্যের বদলে বিভাজন সৃষ্টি করছে, যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি হতে পারে।