কুমিল্লার চান্দিনায় হাটে হাঁড়ি ভাঙল জামায়াতে ইসলামী। সংসদ-সদস্য প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে চরম বিবাদে জড়িয়েছে দলটির মোশারফ গ্রুপ এবং ব্যারিস্টার শাকের গ্রুপ। হাতাহাতি, সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, দলটির রক্ষণশীলতার পর্দা থেকে বেরিয়ে এসেছে ক্ষোভের স্ফূলিঙ্গ। অতীতে জামায়াতের নেতাকর্মীদের এমন বিভক্তি চোখে না পড়লেও হঠাৎ এমন দৃশ্য দেখে হতচকিত হয়ে পড়েন এলাকাবাসী। দলের রীতিনীতি, আদর্শ উপেক্ষা করে দুটি গ্রুপ এখন প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। এদিকে চান্দিনায় জামায়াতের দুটি পক্ষকে একই মোহনায় মিলিত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন দলের সিনিয়র নেতারা। দ্রুতই এ দ্বন্দ্ব নিরসন করে একীভূত হয়ে কাজ করার দৃশ্য গণমাধ্যমে তুলে ধরা হবে বলে জানান সিনিয়র নেতারা।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চান্দিনায় জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মনোনয়ন ঘিরে দলটির অভ্যন্তরে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। কুমিল্লা-৭ সংসদীয় আসনে দলটি মাওলানা মোশারফ হোসেনকে প্রার্থী ঘোষণা করে। এতে ওই উপজেলায় জামায়াতের নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
জামায়াত মনোনীত প্রার্থীকে তৃণমূল কর্মীরা ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে নানা অপবাদ দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ-সদস্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের সঙ্গে জামায়াত প্রার্থী মোশারফ হোসেনের সখ্যতার অভিযোগ করেছেন নেতাকর্মীরা। ফলে তাকে ওই আসনে প্রার্থী হিসাবে জামায়াত নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারছেন না বলে তারা জানান।
গত সোমবার চান্দিনায় জামায়াতে ইসলামীর কুমিল্লা উত্তর জেলা আয়োজিত পাঁচ দফা দাবিতে গণমিছিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে জামায়াতের দুটি গ্রুপের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। ওই কর্মসূচিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যারিস্টার মোস্তফা শাকের উল্লাহ গ্রুপের সঙ্গে মনোনয়নপ্রাপ্ত মোশারফ হোসেন গ্রুপের হাতাহাতি এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ সময় ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মোশারফ হোসেনের হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। ‘দল বিক্রি চলবে না, আওয়ামী দোসর প্রার্থী মানি না’-স্লোগান দিতে থাকেন শাকের গ্রুপের অনুসারীরা।
দলীয় সূত্র জানায়, এমপি প্রার্থী নিয়ে বেশ কিছুদিন যাবৎ নেতাকর্মীরা অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিল। তাদের অভিযোগ প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে সাংগঠনিক নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। তৃণমূলকে উপেক্ষা করে মাওলানা মোশাররফকে এমপি প্রার্থী করা হয়েছে।
মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যারিস্টার মোস্তফা শাকের উল্লাহ বলেন, মনোনয়ন দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
চান্দিনা উপজেলা শিবিরের সাবেক সভাপতি সাজিদ আল আমিন সোহাগ বলেন, দলের মনোনয়নপ্রাপ্ত মোশারফ হোসেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ-সদস্য প্রাণ গোপাল দত্তের ঘনিষ্ঠ লোক। প্রাণ গোপালের সঙ্গে উঠান বৈঠক করেছেন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান তপন বকসীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তার অনেক ছবি রয়েছে। একজন আওয়ামী লীগের দালালকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
চান্দিনা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এখানে দলের গঠনতন্ত্রের বাইরে কিছুই করা হয়নি। তবে ব্যারিস্টার মোস্তফা শাকের উল্লাহ সমর্থিত নেতাকর্মীরা তা মানছে না। সোমবার গণমিছিলে তা প্রকাশ পেয়েছে। আমরা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য কাজ করছি। আশা করছি শিগ্গিরই সবাই এক হয়ে মাঠে কাজ করবে।
জামায়াতে ইসলামীর চান্দিনা উপজেলার নায়েবে আমির ও জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী মাওলানা মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা এখন দুই ভাগে বিভক্ত। তারা আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে তা অবাস্তব। আমি আদর্শিক এবং রাজনৈতিক আপস করিনি। স্থানীয় উন্নয়নমূলক আলোচনায় অংশ নেওয়াকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। কারণ আমি একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান, যে দলই ক্ষমতায় আসুক দাওয়াত দিলে আমাকে সেখানে যেতে হয়। তা ছাড়া উন্নয়নমূলক কাজে আমার অংশ নেওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ছবি উঠেছে।
কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের আমির আব্দুল মতিন বলেন, চান্দিনায় জামায়াতের বিরোধ শিগ্গিরই মিটে যাবে। এটা ছোটখাটো বিষয়। আমরা আদর্শের রাজনীতি করি। এখানে স্বার্থের জন্য কেউ রাজনীতি করে না। আমরা এক হয়ে মিলেমিশে কাজ করব।
শীর্ষনিউজ