ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদ, ধর্ম বিদ্বেষ এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে গত ৯ মে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে ‘ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)’। তবে এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দল হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেনি প্লাটফর্মটি। ফলে নির্বাচন কমিশন থেকে দল হিসেবে নিবন্ধনও পায়নি এ প্লাটফর্ম। তারপরও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক জোটের অধীনে অংশ নেবেন আপ বাংলাদেশের উদীয়মান ও পরিচিত নেতারা এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, রাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন, সামাজিক সুবিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠাকরণ এবং ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সামাজিক চুক্তির বাস্তবায়নের ভিশন নিয়ে কাজ করছে আপ বাংলাদেশ। তবে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদেরকে গোছানোর খুব একটা সময়-সুযোগ পায়নি তরুণদের এ প্লাটফর্ম। যার কারণে নির্বাচন কমিশনে আবেদন না করায় নিবন্ধন ও বা প্রতীক কোনোটাই মেলেনি।
“আমাদের প্লাটফর্মের কিছু ব্যক্তি বা নেতা নির্বাচনে অংশ নেবে। আমরা নিজ এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ অবস্থানসহ বিভিন্ন কিছু যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা করার চেষ্টা করছি” - আলী আহসান জুনায়েদ, আহ্বায়ক, আপ বাংলাদেশ।
সূত্রে জানা গেছে, সার্বিক বিবেচনায় সারাদেশে অন্তত ২০টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনায় রয়েছে আপ বাংলাদেশ। তারা দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল বিএনটি ও জামায়াত এই দুই বলয়ের বাইরে তৃতীয় বলয়ের অধীনে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টায় আছেন। এ প্রেক্ষিতে তারা এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণ সংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, নাগরিক ঐক্যসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে। বিশেষ করে, এসব সংগঠনের সমন্বয়ে সম্ভাব্য জোটে ঢুকতে চেষ্টা করছেন এ আপ বাংলাদেশের নেতারা।
এর আগে, গত ২২ জুন নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করার সময় শেষ হয়। এরপর থেকে আবেদনগুলো প্রাথমিক বাছাইয়ের কাজ শুরু করে ইসি। তারও আগে গত ১০ মার্চ নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ইসি। প্রথমে আবেদনের শেষ সময় ছিল ২০ এপ্রিল। বিভিন্ন দলের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পরে আবেদনের সময় ২২ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
নেতাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি ও জোটে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে জানতে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের কথা হয় আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদের সঙ্গে। তিনি বলেন, আপ বাংলাদেশ রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করেনি। এজন্য আমাদের কোনো প্রতীক নেই এবং দলীয়ভাবে নির্বাচনেরও সুযোগ নেই। তবে আমাদের প্লাটফর্মের কিছু ব্যক্তি বা নেতা নির্বাচনে অংশ নেবে। আমরা নিজ নিজ এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের অবস্থানসহ বিভিন্ন কিছু যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা করার চেষ্টা করছি। আপাতত ২০-২৫ জন যোগ্য প্রার্থী নিয়ে আমাদের এগোনোর পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের বলয়ের বাইরে আমরা একটি তৃতীয় বলয় (জোট) গড়ে তুলে সামনে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছি। মোটামুটি অনেক দলের সাথেই এ ব্যাপারে আমাদের কথা হয়েছে। ইতোমধ্যেই এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে আমরা একটি প্রোগ্রাম করেছি। এর বাইরে গণসংহতি, নাগরিক ঐক্য, এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদসহ অন্যদের সঙ্গেও আমরা আলাপ করছি।
আপ বাংলাদেশের প্রধান প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আপ বাংলাদেশ এখনো পার্টি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেনি, আর নিবন্ধনের জন্য আবেদনও করেনি। তারপরও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের নেতৃবৃন্দ অংশ নেওয়ার সর্বোচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা করা হচ্ছে। তবে আমাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের পরিকল্পনা নেই, জোটের মাধ্যমেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। জোটের বিষয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, এবি পার্টি, গণ সংহতি আন্দোলনসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী যারা:
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হবেন, প্লাটফর্মটির এমন কিছু পরিচিত মুখ ও আলোচনায় থাকা ব্যক্তিদের নাম ও আসন সম্পর্কে এক বিশ্বস্ত এক সূত্র দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছে। তারা হলেন- আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ (ঢাকা- ৮/ নারায়ণগঞ্জ- ২), সদস্য সচিব আরেফিন মোহাম্মদ হিজবুল্লাহ (নারায়ণগঞ্জ- ৩), প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত (ঢাকা- ১১), প্রধান সংগঠক নাঈম আহমাদ (বাগেরহাট-৩), মুখপাত্র শাহরীন সুলতানা ইরা (ঝিনাইদহ- ২) এবং কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল আলীম (নরসিংদী- ২)।
এর বাইরে, প্রার্থী হিসেবে আরও থাকতে পারেন- কেন্দ্রীয় সদস্য মিনহাজুর রহমান রেজভী (কক্সবাজার- ৩), যুগ্ম প্রধান সংগঠক আব্দুল আজিজ (গাজীপুর-৬), কেন্দ্রীয় সদস্য জাহিদূর রহমান (মুন্সিগঞ্জ- ১), ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আহ্বায়ক মোঃ জসীম উদ্দিন (ঢাকা- ১), ঢাকা মহানগর উত্তর আহ্বায়ক আহম্মদ করিম চৌধুরী (ফেনী- ১), ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সদস্য সচিব কাজী সালমান (ভোলা- ২), যুগ্ম প্রধান সংগঠক ফায়াজ শাহেদ (চট্টগ্রাম -১১), কেন্দ্রীয় সদস্য মহিউদ্দিন হাসান (লক্ষ্মীপুর- ২), সিরাজগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক মোঃ আব্দুস সবুস তালুকদার (সিরাজগঞ্জ- ১) এবং ফরিদপুর জেলা আহ্বায়ক মোরশেদুল ইসলাম আসিফ (ফরিদপুর- ৩)।
প্রসঙ্গত, আপ বাংলাদেশের ভিশন- ১৯৪৭ - ১৯৭১ - ২০২৪ এর আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে, বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন, সমাজের সর্বস্তরে যোগ্য ও নৈতিক নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠা, সামাজিক সুবিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠাকরণ, ও ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সামাজিক চুক্তির পুনর্বহাল এর মাধ্যমে বৈষম্যহীন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করা।
অন্যদিকে, তাদের মিশন- পিলখানা, শাপলা ও জুলাই গণহত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধের বিচার, ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ, পাচারকৃত হাজার হাজার কোটি টাকা দেশে ফিরিয়ে আনা এবং জুলাইয়ের আহত যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারকে আর্থ-সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার দাবিতে জনমত ও রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলা।