Image description
 

বছরের পর বছর আদালতের দ্বারে ঘুরে জমির দখল ফেরত পাওয়ার দীর্ঘ অপেক্ষার দিন শেষ হতে চলেছে। ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এবং এর আওতায় প্রণীত ২০২৪ সালের বিধিমালা কার্যকর হওয়ায় এখন মাত্র তিন মাসের মধ্যে বেদখল জমি ফেরত পাওয়া সম্ভব হবে।

 

সরকার আশা করছে, এই আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত মামলার জট, দালালচক্রের দৌরাত্ম্য এবং প্রশাসনিক দুর্নীতি কমে আসবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ দ্রুত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবেন।

নতুন আইন অনুযায়ী, জমি জোরপূর্বক দখল হওয়া অবস্থায় জজ কোর্টে মামলা করার প্রয়োজন নেই। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সরাসরি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে পারবেন। অভিযোগ পাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট প্রাথমিক তদন্ত করে প্রয়োজনে পুলিশ বা স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিতে পারবেন। পুরো প্রক্রিয়াটি সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে।

 

বিধিমালার ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, জমি দখলচ্যুত ব্যক্তি নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করবেন। আবেদনপত্রে জমির তফসিল, খতিয়ান, দাগ নম্বর, দলিল, নামজারি খতিয়ান, করের তথ্য, জরিপ নথি এবং ছবি বা ভিডিও প্রমাণ সংযুক্ত করতে হবে।

 

আবেদন পাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিপক্ষকে ১৫ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে নোটিশ দেবেন। এরপর মাঠপর্যায়ের তদন্ত ও শুনানির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রয়োজনে একতরফা আদেশের মাধ্যমে জমির দখল ফেরত দেওয়া সম্ভব। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দখল ফেরত না দিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় জোরপূর্বক দখল পুনরুদ্ধার করা হবে।

দখল হস্তান্তরে বাধা দিলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা অথবা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। প্রতিটি আবেদন সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। দায়িত্বে অবহেলা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে যদি একই বিষয়ে কোনো মামলা দেওয়ানি আদালতে চলমান থাকে, সেক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করা যাবে না। তবে আদালত চাইলে সেই মামলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠাতে পারবেন দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য।

এই নতুন আইন ভূমি মালিকদের জন্য খুলে দিয়েছে ন্যায়বিচারের নতুন দিগন্ত—যেখানে আর দীর্ঘ অপেক্ষা নয়, মাত্র তিন মাসেই মিলছে নিজের জমির ন্যায্য দখল।