Image description

সম্প্রতি একটি টেলিভিশন টকশোতে নিজের জন্ম না হলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জন্ম হতো না বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন। তার ভাষ্যে, ‘এই রাশেদ খাঁনের জন্ম না হলে আপনার এনসিপির জন্ম হইত না’। এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশিরের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার সময় এমন দাবি করেছেন তিনি। বিষয়টি বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে এর ব্যাখ্যায় রাশেদ খাঁন বলছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এনসিপির বাইরে অন্য ব্যক্তি ও দলগুলোর অবদান অস্বীকার করার প্রতিবাদে ‘স্বতস্ফূর্তভাবে’ এমন মন্তব্য বেরিয়ে এসেছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে আলাপকালে এমন ব্যাখ্যা দেন রাশেদ খাঁন। এর আগে গত রবিবার (১৯ অক্টোবর) বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘চ্যানেল আই’ -এর টকশো টু দ্য পয়েন্টে শিশিরের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হন তিনি। এ সময় জয়নাল আবেদীন শিশিরকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি রাশেদ খাঁনকে গুগলে সার্চ করলে বাংলায় পাবে, আর আমাকে গুগলে সার্চ করলে সারা পৃথিবীর মানুষ জানতে পারবে আমার পরিচয় কী।’ এর প্রতিক্রিয়ায় মন্তব্যটি করেন রাশেদ খাঁন। বাগবিতণ্ডার একটি ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সমালোচনার মুখে পড়েন রাশেদ খাঁন।

তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই নুরুল হক নুর ও রাশেদ খাঁনদের ছাত্রসংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন সংগঠনটির তৎকালীন সহ-সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। পরে ৪ অক্টোবর ডাকসুর এই নেতার নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’।  ছাত্রসংগঠনটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব পদে ছিলেন এনসিপির বর্তমান আহ্বায়ক  নাহিদ ইসলাম। এছাড়া ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এই সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ছিলেন।

সম্প্রতি আলোচনার জন্ম দেওয়া মন্তব্য প্রসঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এনসিপির একজন নেতা আমাকে প্রশ্ন করে যে আমার কী যোগ্যতা আছে। তিনি আমাকে নানানভাবে কটাক্ষ করেন। তার প্রেক্ষিতে আমি বলি যে রাশেদ খানের জন্ম না হলে এনসিপির জন্মই হতো না। এটা বলার কারণটা হলো- ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন আমরা করেছি। সে আন্দোলনে সর্বপ্রথম আমি অ্যারেস্ট (গ্রেপ্তার) হই। ওই সময়ে আমি ১৫ দিন পুলিশের রিমান্ডের নির্যাতনের শিকার হয়েছি, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন। আরও অতিরিক্ত তিন দিন, সর্বমোট ১৮ দিন আমি পুলিশের হেফাজতে ছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে জেল থেকে যখন জামিন পাই, ওইদিনই আমি আমার বাড়িতে না গিয়ে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গিয়েছি এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছি। যতক্ষণ না প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, আমরা আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছি। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন যদি সফল না হত, তাহলে ২৪ সালে কোটা ফিরে আসার কোন ব্যাপার ছিল না এবং আবারো কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার কোন সুযোগ ছিল না। অর্থাৎ এদেশে গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং সেই আন্দোলন আমাদের হাত ধরে সফল হয়েছে। আমরা সে আন্দোলন সফল করতে গিয়ে জেল, জুলুম, রিমান্ড, নির্যাতনের শিকার হয়েছি।’

রাশেদ খান বলেন, ‘আমার সামনে সে সময় দুইটা অপশন ছিল। এমবিএ ফাইনাল সেমিস্টারের পরীক্ষায় বসব নাকি আমি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিব? আমার এমবিএ ফাইনাল সেমিস্টারের পরীক্ষা বাদ দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বকেই বেছে নিয়েছি। অর্থাৎ আমি আমার ক্যারিয়ার পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছি।’

 

‘এখন এনসিপির একজন নেতা- যাকে আসলে বাংলাদেশের কয়জন চেনে সেটি নিয়ে আমি আর প্রশ্ন করতে চাই না, সে হঠাৎ করে যদি আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তখন এ ধরনের ভাষা আসলে স্বতস্ফূর্তভাবে নিজের অজান্তেই চলে আসে। এটা এক ধরনের মনস্তাত্বিক প্রতিবাদ, অটোমেটিক্যালি আসে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন আমরা সফল করেছি, ২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমাদের তো ভূমিকা আছে, গণঅভ্যুত্থানে আমাদের তো ভূমিকা আছে, তাই না? যারা ছাত্র প্রতিনিধি, যারা এনসিপির নেতা, ওই সময় যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা তারাও অনেকে জানে, আমাদের সভাপতি নুরুল হক নূর কেন গ্রেপ্তার হল। আমার বাসায় আমাকে গ্রেপ্তার করার জন্য দুইবার অভিযান চালিয়েছে। আরও অনেক ইতিহাস আছে, সব ইতিহাস আমি এখন বলতে চাচ্ছি না। যখন আমাদের এই অবদানকে অস্বীকার করা হয়, আমাদেরকে অবজ্ঞা করা হয়, ছোট করা হয়, তখন আসলে নানান ধরনের আলোচনা চলেই আসে।