
আওয়ামী লীগকে সমর্থন জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের সাবেক প্রতিমন্ত্রীপুত্র ও কিছুদিন আগে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা সাবেক নেতা অ্যাডভোকেট আবু আহমেদ ফয়জুল করিম মুবিন।
তিনি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এখনো দেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’ উল্লেখ করে বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা এদেশে আসবেন কিংবা চলে এসেছেন।’
বুধবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে নিজের ফেসবুক আইডিতে লাইভে এসে তিনি এসব কথা বলেছেন।
ফেসবুক লাইভে ফয়জুল করিম মুবিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য কিছুদিন আগে শোনা গেছে। উনি বলেছেন, দেশে আসবেন। তাহলে দেশ ও দেশের বাইরে থাকা প্রতিটি বাঙালি ও বাংলাদেশি আপনারা অবশ্যই বিশ্বাস করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশে আসবেন কিংবা চলে এসেছেন। আমি পাগলের প্রলাপ বকতে পারি, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা পাগলের প্রলাপ বকার মতো মহিলা না। এটা বাঙালি এবং বাংলাদেশি সকলেই জানেন। তাই প্রত্যেককে অনুরোধ করবো চিন্তা-চেতনা ও দেশপ্রেমের ভিত্তিতে মন্তব্য করবেন। কে জানে আজকের এই বক্তব্য কাল আপনার ভবিষ্যৎ নির্ণয় করবে। তাই আসুন প্রতিহিংসা দূর করে দেশ ও সমাজ গঠনে একে অপরের পাশে থাকি।’
ফয়জুল করিম মুবিন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ব্যতীত, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি ব্যতীত এদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি, ইতিপূর্বেও না। এবং যখনই হয়েছে তখনই কেউই এদেশের মসনদে থাকতে পারেনি। এবং সবাইকে অনুরোধ করবো, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মী এবং সমর্থকবৃন্দ, যারা বসে আছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে আসবেন, তখন আপনি ভোকাল হবেন, না। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটতে চলছে না। যে বা যারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি, দেশের পক্ষের শক্তি, ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে আছেন, তারা আজই কথা বলবেন।’
এরপর ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তব্য শেষ করেন সাবেক এই বিএনপি নেতা।
অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম মুবিন দীর্ঘদিন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি জেলা বিএনপির উপ-দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব, কিশোরগঞ্জ পৌর বিএনপির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কিশোরগঞ্জ শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তার বাবা মরহুম ফজলুল করিম ছিলেন কিশোরগঞ্জ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও তৎকালীন সরকারের প্রতিমন্ত্রী (১৯৭৮-১৯৮২ মেয়াদে)।
স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে তার আওয়ামী লীগে সমর্থনকে কেন্দ্র করে আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ বলছেন, এটি বিএনপির জন্য বড় ধাক্কা, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা মনে করছেন, তার মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদের যুক্ত হওয়ায় সংগঠন আরও শক্ত হবে।
এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইলে একাধিক বার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে তার এ ঘোষণার পর স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে অভিনন্দন জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।
কিশোরগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আশফাক জাগো নিউজকে বলেন, ‘যেহেতু তিনি সাবেক মন্ত্রী সন্তান ও জন্মসূত্রে বিএনপি করেন তাই আমরা একটু সময় নিচ্ছি। অনেক সময় মানুষের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা থাকতে পারে। আমরা তাকে পর্যবেক্ষণ করছি। কিছুদিন পরে তাকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসা করবো। সমস্যা এমন মনে হলে তাকে বহিষ্কার করা হবে।’
যে কারণে বিএনপি থেকে পদত্যাগ
অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম মুবিন গত ৫ অক্টোবর তার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। পদত্যাগপত্রে তিনি লেখেন, আমি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ বিশ্বাসী, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি, শহীদ জিয়ার আদর্শ সততায় মুগ্ধ, তার আরেক আদর্শ বহুদলীয় গণতন্ত্রের বিশ্বাসী একজন সাধারণ বিএনপি পরিবারের সন্তান। আমার নিজের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা, সামাজিক প্রেক্ষাপট গভীরভাবে বোঝার দূরদৃষ্টির অভাব, জাতীয় আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো নেতার আস্থাভাজন হওয়ার অপারগতা, অনেক সিনিয়র যোগ্য নেতাদের উপদেশ ধৈর্য অভাব থাকায়, আমি সুস্থ সজ্ঞানে ৫/১০/২০২৫ বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান প্রিয় মাতৃভূমিতে বিগত ১৭ বছরের মাঝে সবচেয়ে ভালো থাকাবস্থায় আমি কিশোরগঞ্জ পৌর বিএনপি সদস্য পদ হতে এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম।
ফয়জুল করিম মুবিন আরও লেখেন, বিগত ২০০৩ -২০০৪ সালে ওয়ালীনেওয়াজ খান কলেজ শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরবর্তী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে অদ্য পর্যন্ত বিএনপি আমাকে নানা পদে যোগ্য মনে করেছে, তার জন্য বিএনপির সব সম্মানিত নেতৃবৃন্দর প্রতি রইলো শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ত্যাগী কর্মীদের পাশে চলা মুহূর্ত চির স্মরণীয় থাকবে। উক্ত পদত্যাগ করায় কোনো নেতার কাছ থেকে চাপ বা বল প্রয়োগ নেই। আমার এই সিদ্ধান্তে আমার কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী মনে কষ্ট পেলে আমি করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। তরুণ নেতৃত্ব বেগবান হোক। আগামীতে যদি যথাযথ দলের নীতিনির্ধারক কখনো দলের প্রয়োজনে ডাকেন এবং আমার উপলব্ধিতে যথাযথ মনে হলে দলের জন্য অবশ্যই চেষ্টা করবো।
এরপর ৯ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলীর (এপিপি) পদ থেকে পদত্যাগ করেন অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম মুবিন।