Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশাল সদর-৫ আসনে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও বাসদসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা ব্যাপক গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। অধিকাংশ দলের প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এখনো ঘোষণা করা হয়নি। দলের মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যেই নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগসহ দলের হাইকমান্ডে চালাচ্ছেন জোর লবিং। এমনকি মনোনয়ন নিশ্চিত করতে অনেকেই যোগাযোগ রাখছেন লন্ডনে। তবে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল ভাবিয়ে তুলেছে মহানগর বিএনপি নেতাকর্মীদের।

বর্তমানে বরিশাল বিএনপিতে চারটি সক্রিয় গ্রুপ ও একাধিক উপগ্রুপ থাকায় অনেকটা বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে বিএনপির সাংগঠনিক ভীত। যে কারণে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের পর তার ওপর দলীয় কোন্দলের প্রভাব ফেলবে আগামী সংসদ নির্বাচনে। নির্বাচনে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে ঐক্যবদ্ধ বিএনপির প্রশ্নে দলের নেতাকর্মীরা কতটা এক হতে পারবে সে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সব মহলেই।

দীর্ঘদিন ধরে বিভক্ত বরিশাল মহানগর বিএনপি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করা যেমন কঠিন হবে তেমনি দলের মনোনয়ন পাওয়া নেতার পক্ষে নির্বাচনি মাঠ গোছানো হবে আরো কঠিন। বৃহৎ দলটির নেতৃত্বের এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থার সুযোগ নিতে চাচ্ছে ইসলামি দলগুলো। বিশেষ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতারা মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। সমমনা দলগুলো ঐক্যবদ্ধ ব্যানারে নির্বাচন করলে সদর আসনটি বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক সচেতন মহল।

এই আসনটিকে বরিশালের সবচেয়ে মর্যদাপূর্ণ আসন হিসেবেই ধরা হয়। যুগ যুগ ধরেই এ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৯৭৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বরিশাল সদর-৫ আসনে কখনোই জয় পায়নি আওয়ামী লীগ। সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস এ আসনে বিএনপির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর মহানগর বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার হাল ধরেন বরিশাল বিএনপির। তার একক নেতৃত্ব বরিশাল ছিল বিএনপির দুর্গ। তবে পতিত আওয়ামী লীগের সময় সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতা, দলে একক আধিপত্য ও স্বজনপ্রীতিসহ নানা কারণে সরোয়ারের বলয় থেকে বেরিয়ে গেছেন প্রভাবশালী বিএনপি নেতারা।

ইতোমধ্যেই মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান খান ফারুক, সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার জিয়া, মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ ও মহানগর বিএনপির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন সরোয়ারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে তৈরি করেছেন নিজস্ব বলয়।

এছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য ও এক সময়ের তুখোড় নেত্রী অ্যাডভোকেট বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন দীর্ঘদিন আগে সরোয়ারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নিজস্ব রাজনৈতিক বলয় তৈরি করেছেন। এর আগে তিনি সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের সঙ্গে ছিলেন। এছাড়া অনেক ত্যাগী ও রাজনীতিতে পোড় খাওয়া নেতাকর্মী দলীয় রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় রয়েছেন।

সূত্র জানায়, এই আসন থেকে প্রার্থী বাছাইয়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান খান ফারুক কেন্দ্রের ডাকে সাক্ষাৎকার দিয়ে এসেছেন।

এর বাইরে এ আসন থেকে প্রার্থী হতে মরিয়া বিএনপির চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বর্তমানে পদ স্থগিত) অ্যাডভোকেট বিলকিস আক্তার জাহান শিরীন, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা এবায়েদুল হক চাঁন, জেলা দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিন ও মহানগর বিএনপির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন। ইতোমধ্যে এসব প্রার্থী নির্বাচনি গণসংযোগে মাঠে রয়েছেন।

এদিকে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কাজে লাগাতে চাইছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থীরা। এ আসনে আরো ছয়মাস আগে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহ-সেক্রেটারি জেনারেল আলহাজ অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল ও ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।

এছাড়া এ আসনে বাসদ নেত্রী ডা. মনিষা চক্রবর্ত্তী প্রার্থী হচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নানা কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নগরবাসীর কাছে অনেকটা সুপরিচিত মুখ তিনি।

বরিশাল সদর-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মো. রহমাতুল্লাহ বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এ আসনে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে আছেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহ-সেক্রেটারি ও বরিশাল-৫ আসনের জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মুয়াজ্জম হোসাইন হেলাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনি নির্বাচনি মাঠে আছেন। ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। জামায়াতে ইসলামের মাধ্যমেই সে পরিবর্তন আসুক এমন প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের। তিনি আশাবাদী আগামী সংসদ নির্ববাচনে জনগণ বিপুল ভোটের মাধ্যমে তাকে বিজয়ী করবে।