Image description
 
এনসিপির একটা প্রবণতা হচ্ছে নির্বাচনে তারা উইনিং জোটে থাকতে চায়। তাদের পারসেপশনে বিএনপি কিংবা জামায়াতের মধ্যে যে দল জিতবে বলে মনে হচ্ছে, তার সাথেই জোটে যাবে।
এই প্রবণতার ২টা কারণ।এনসিপির কিছু নেতা ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছে। তারা উপদেষ্টা হয়েছে, নির্বাচনের পরে তারা মন্ত্রী হয়ে আরো ৫ বছর থাকতে চায়। কেউ কেউ হয়ত দুর্নীতিতেও জড়িয়ে গেছে, সেগুলো প্রকাশ হোক তারা চায় না। আদর্শ ও নীতির চেয়ে ক্ষমতায় যাওয়াটা এইসব নেতাদের জন্য প্রায়োরিটি হয়ে গেছে। পুরো দলকেও তারা সেভাবে মেনিপুলেট করতেছে। ক্ষমতার স্বাদ এমন একটা জিনিস, এটা পেয়ে বসা খুব স্বাভাবিক। স্ট্রং মোরাল না থাকলে এই লোভকে রেজিস্ট করা যায় না।
 
এনসিপি একধরণের ক্ষমতাকেন্দ্রীক রাজনীতির দিকে আগাচ্ছে। ক্ষমতায় থাকার কারণে এনসিপির বাই বেরাদার কোরামের লোকেরা প্রচুর বিজন্যাসের সুযোগ সুবিধা, প্রজেক্ট পাবে। বিভিন্ন লেভেলে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করার সুযোগ পাবে। মানুষ এনসিপিতে যোগ দেওয়ার জন্য ও উপরের পদ বাগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করবে। কারণ এনসিপিতে ঢুকলে ফায়দা আছে এবং বিভিন্ন নমুনার প্রটেকশন পাওয়া যাবে। ফলে বিএনপি আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে যে পেট্রোন-ক্লায়েন্ট সিস্টেম অর্থাৎ দেওয়া-নেওয়ার রাজনীতি, এনসিপি আগামী ৫ বছরে সেই রাজনীতিতেই আস্তে আস্তে মার্চ করে ঢুকে যাবে।
এই পেট্রোন-ক্লায়েন্ট সিস্টেমটাই আমাদের রাজনীতির মূল বিষফোঁড়া। এটাই প্রশাসনকে দুর্নীতিগ্রস্থ করেছে এবং দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। রাষ্ট্রের উপর থেকে নিচ সব জায়গাতেই পেট্রন-ক্লায়েন্ট সিস্টেমে চলছে। এটাকে ভাঙ্গাই ছিল নয়া বন্দোবস্তের রাজনীতির অন্যতম প্রধান কাজ। অথচ বেশি ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি করতে গিয়ে এনসিপি আগের সেই সিস্টেমেরই পার্ট হয়ে যাচ্ছে।
 
এনসিপি যদি নয়া বন্দোবস্তের রাজনীতি করতেই না পারে, তাদের রাজনীতি যদি সেই পুরনো রাজনীতিতেই ফিরে যায়, তাহলে বিএনপিকে বাদ দিয়ে মানুষজন এনসিপিকে কেন বেছে নিবে? আলাদাভাবে এনসিপির আর দরকার কি? দেশের মানুষ একাত্তর বেচার রাজনীতিকে লালকার্ড দেখাইছে জুলাই দিয়ে আবার বিক্রিত হওয়ার জন্য না। জুলাই বেচে বেশিদিন রাজনীতি করা যাবে না।
সবসময় উইনিং পার্টির সাথে জোট করে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার প্রবণতা ছিল জাতীয় পার্টির। তাদের কাছে জোট করার ক্ষেত্রে ইস্যু কিংবা নীতির কোন গুরুত্ব ছিল না, আসল প্রায়োরিটি ছিল ক্ষমতার একটু শেয়ার পাওয়া। তাদের রাজনীতির কী পরিণতি হয়েছে দেখুন।এনসিপির উচিত ছিল বিরোধী দলের রাজনীতিটা করা, নয়া বন্দোবস্তের ফোর্স আকারে রাজপথ দখল করে রাখা। জামায়াতের ব্যাপারে যদি রিজার্ভেশন থাকে, তাদের সাথে জোটে যাওয়ার দরকার নাই। সমমনা দল যেমন এবি পার্টির সাথে জোটে যেতে পারত। সংসদে যাওয়ার জন্য নিম্নকক্ষে পিআর চাইতে পারত কিংবা উচ্চকক্ষের পিআরের মাধ্যমে রিপ্রেজেন্টেশনে সন্তুষ্ট থাকতে পারত।
 
এই নির্বাচনে ভাল করতে না পারলে এনসিপির রাজনীতি দাঁড়াবে না, এই ধারণা সঠিক না। একটা আসন না জিতেও রাজনীতির দখল রাখতে পারবেন, যদি আপনারা নেতৃত্ব, বয়ান ও নীতির জায়গায় ঠিক থাকেন।এনসিপি জনতার কাতার ছেড়ে দিয়ে ক্ষমতার কাতারে চলে গেছে। জনতার কাতারের সেই জায়গাটা দখল করে নিচ্ছে জামায়াত ও শিবির। এর হাতেনাতে ফলাফল আমরা ডাকসু, জাকসু, চাকসু, রাসকুতে দেখতে পেলাম। জুলাইতে শিবিরের যেই লেভেলের কন্ট্রিবিউশন, জুলাইয়ের স্টেকহোল্ডার ও নয়া বন্দোবস্তের বয়ানটাও জামায়াত ক্যাপচার করে নিতে পারবে। জামায়াতের ক্ষেত্রে দেখলাম যে, তারা জিতে ক্ষমতায় যেতে পারলে খুশি, হেরে বিরোধী দল হলেও খুশি। কিন্তু তারা নয়া বন্দোবস্তের রাজনীতি ছাড়বে না।
এই রাজনীতিটাই এনসিপির কাছ থেকে চাইছিলাম। এনসিপি যদি তাদের ইউনিক সেলিং পয়েন্টগুলো ধরে রাখতে না পারে, তারা চোরাগলির ভিতরে হারিয়ে যাবে। তবে মানুষের চাহিদা রয়েই যাবে, সেই ফাঁকা ও বিশাল মাঠটা অন্য কোন দল এসে দখল করবে।
 
আহমেদ মুসাফফা