
বাড়িভাড়া ভাতা ২০ শতাংশ বৃদ্ধিসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন, ইনকিলাব মঞ্চ, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, এনসিপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু), এবি পার্টি, বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরাম. ঢাবি সাদা দল, বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন, বাংলাদেশ মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন (বিএমজিটিএ) সহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন শিক্ষকদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এসব দল ও সংগঠনের একাত্মতা নিশ্চিত করতে পেরেছে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস, যদিও সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) শিক্ষকদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, অল্প বেতনে শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্রধান উপদেষ্টার একমাত্র কাজ হবে শিক্ষকদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। সময় থাকতে দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। সামনের নির্বাচনে শিক্ষকদের অনেক কাজ রয়েছে। অতএব, নির্বাচনের আগে তাদের দাবি নিয়ে সরকারের কাজ করা উচিত।’ শিক্ষকদের আন্দোলন পুলিশ দিয়ে দমানোর চেষ্টারও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের সাথে এ ধরনের আচরণ কাম্য নয়।’
একই দিন শিক্ষকদের আন্দোলনকে যৌক্তিক উল্লেখ করে একাত্মতা প্রকাশ করে খেলাফত মজলিস, এনসিপি ও ইনকিলাব মঞ্চ। খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, শিক্ষকদের দাবির সঙ্গে আমরা একমত প্রকাশ করছি। সরকারের উচিত তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দাবি মেনে নেয়া। শিক্ষকদের লাঠিপেটা করা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদি, দেশে সবচেয়ে বেশি মানবেতর জীবনযাপন করেন শিক্ষকরা। প্রতিটি পদে পদে তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়। খালি মুখে মুখে শিক্ষকদের সম্মান দেয়া হয়। বাস্তবে তার উল্টো। ইনকিলাব মঞ্চ শিক্ষকদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি।
শিক্ষকদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘একটা নতুন দেশ গড়তে যাচ্ছি আমরা। এত মানুষ রক্ত দিয়েছেন, তারপরও অপমানিত হওয়ার জন্য নয়। শিক্ষক কেন, একটা সাধারণ মানুষকেও রাস্তার মধ্যে কুকুরের মতো পেটাবেন, এই রকম দেশ চাই না। আপনাদের এই আন্দোলনের সঙ্গে আমরা আছি।’
শিক্ষকদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শিক্ষকদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মূখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, দেশ গড়ার কারিগর আমাদের সম্মানিত শিক্ষকদের দাবি মেনে নিন। এর আগে রবিববার (১২ অক্টোবর) শিক্ষকদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়েছিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
শিক্ষকদের দাবির প্রতি সমর্থন জানান ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের আন্দোলনের প্রতি আমাদের সমর্থন আছে। আপনাদের দাবি আমাদেরও দাবি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই শিক্ষকেরা আর ঘরে ফিরে যাবেন না।’
সোমবার রাত ৯টায় শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়ে ডাকসুর নেতৃবৃন্দ শিক্ষকদের তিন দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানান। ডাকসু নেতারা শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলার নিন্দা জানান। তারা বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে পুলিশ লীগের এমন আচরণ আমাদের ব্যথিত করে। প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের হামলায় রাষ্ট্র থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। যারা এই হামলার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদেরকে অতিদ্রুত বিচারের মুখে আনতে হবে। ডাকসুর পক্ষ থেকে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ হাজার শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমরা শিক্ষকদের দাবি আদায়ের জন্য জানিয়ে গেলাম।
এবি পার্টিও একাত্মতা জানিয়েছে শিক্ষকদের আন্দোলনে। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষকদের ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচির প্রস্তুতি সমাবেশে দলটির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, ‘শিক্ষকদেরকে যদি আপনারা দেখভাল না করেন, রাষ্ট্র দেখভাল না করে, তাদের ন্যায্যভাবে শ্রমের মূল্য না দেয়, সম্মানের সঙ্গে বেতন-ভাতার সুযোগ সুবিধা না হয়, তাহলে সেই পাঠদান থেকে বিজ্ঞানী আসবে না। হাসিনার মতো টাউট বাটপার আসবে। এই রাষ্ট্রের অপশন খুব পরিষ্কার।’ তিনি শিক্ষকদের দাবি দ্রুত মেনে নেওয়ার আহবান জানান।
এদিকে আজ মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে সচিবালয় অভিমুখে মার্চ টু সচিবালয় শুরু করেন আন্দোলকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা। দুপুর দেড়টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নতুন এ সময়সূচি ঘোষণা করা হয়। শিক্ষকরা সচিবালয় অভিমুখে অগ্রসর হলে রাজধানীর শিক্ষা ভবন এলাকায় মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষক ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা।
এর আগে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি আজ দুপুর ১২টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল। শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, তারা প্রজ্ঞাপন না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। আসতে পারে আমরণ অনশন কর্মসূচির মত ঘোষণাও।