Image description

Nazmul Hoque Nayeem 
 
গতকাল পলাশীতে উদ্বোধন হল আবরার ফাহাদ স্মৃতিস্তম্ভ /আগ্রাসন বিরোধী আট স্তম্ভ । এর পিছনের গল্প টা অনেকের জানা উচিত বলে মনে করি ,না হলে কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে পারে গল্পগুলা। আর যেহেতু ভিত্তি প্রস্তর বা নাম ফলকে লিখা নাই গল্পটা, হারিয়ে যাওয়ার আগে ডিজিটাল রেকর্ড থাকা ভাল। 
কম্পিটেশনে জমা পড়া মোট ৪ টি প্রাইমারী ডিজাইন থেকে এই ডিজাইনটি ফাইনাল করেন উদ্যোক্তাগন। অন্যান্য প্রাইমারী ডিজাইন গুলো বুয়েটিয়ান আর্কিটেক্ট সাঈদ আহমেদ (১৯৯৩-৯৪), আর্কিটেক্ট সাদ সিদ্দিকী (২০১৪-১৫), সেজান হোসাইন (২০১৯-২০) থেকে প্রাপ্ত।এটার ফাইনাল আর্কিটেকচারাল ডিজাইনে ছিলাম আমি  স্থপতি নাজমুল হক নাঈম । স্ট্রাকচারাল ডিজাইনে ছিলেন  সাবেক বুয়েটিয়ান ইঞ্জিঃ তাইফুর রহমান ও ইঞ্জিঃ মাসুদুর রহমান । ডিজাইনের থ্রিডি ভিজ্যুয়ালাইজেশনে ছিল ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্ট এর সাবেক ছাত্র  স্থপতি উৎস । 


মূল কনসেপ্ট টি ছিল এমনঃ  আট টি পিলার আট টি আইডিয়া বা ধারণা কে ধারন করবে।   
১। মানবিক মর্যাদা ২। সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ৩। দেশীয় শিল্প ,কৃষি ,নদী,বন, বন্দর রক্ষা ৪। অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা ৫। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ৬। গণ- প্রতিরক্ষা ৭। গণতন্ত্র ৮। সার্বভৌমত্ব 


এই আট টি ধারণা একে অপরের সাথে রিলেটেড এবং ধাপে ধাপে সেগুলা আমাদের সার্বভৌমত্বের দিকে  নিয়ে যায়। 
প্রতিটি পিলার কে এমন ভাবে ডিজাইন করা যেন দেখে মনে হয় সুপার ন্যাচারাল কিছু শূন্যে ভেসে আছে। পিলার এর নিচের অংশে আছে কালো একটি বেইস যা শোকের প্রতীক। পিলার গুলা কিছু কালো সাপোর্ট (অরিজিনাল ডিজাইনে যা মেটালের ছিল এবং অনেক চিকন ছিল)  দিয়ে সেই বেইসের সাথে সংযুক্ত যেন রাতের বেলা এদের ভেসে থাকা কিছু প্রতীকি অবয়ব মনে হয় যারা অসম্ভব সাহসের  প্রতীক। পিলারের মাঝের কনক্রিট অংশ টা আবরার এর মত চরিত্র
গুলোর দৃঢ়তার প্রতীক যারা শত প্রতিকূলতায় টিকে থাকে তাদের আদর্শে। উপরের জং ধরা মেটালের অংশে আছে কিছু ছিদ্র যা শোষকের আঘাতে আর বুলেটে জর্জরিত শোষিতের দেহকে তুলে ধরে। জং ধরা মেটাল মনে করায় আবরারের মত অসংখ্য শহীদ আর নির্যাতিতদের কথা যাদের রক্ত শুকিয়ে গেলেও তারা আমাদের মনে ভাস্বর হয়ে আছে অনন্ত আসীম কালের জন্য। রাতের বেলা সেই ক্ষত বিক্ষত দেহ ই আবার ঠিকরে বের করে আলো যা নতুন পথিকদের পথ দেখায়। উপরের দিকে ছুড়ে দেয়া আলো মনে করায় তাদের অনন্ত অসীমের পথে যাত্রার কথা যা দূর থেকেও অনূপ্রেরণা জাগায়। 


এই উদ্যোগে শুরু থেকে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেছেন  এম. ওয়ালি উল্লাহ (সেশন ২০১৩-১৪), শামসুজ্জামান সম্রাট (সেশন ২০১৬-১৭), আলী আম্মার মুয়াজ (সেশন ২০১৬-১৭), আবরার ফাইয়াজ সহ অনেকে।সিটি কর্পোরেশন,বুয়েট,ট্রাফিক বিভাগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে কাজটির গুরুত্ব বুঝানো এবং দ্রুত বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করেছেন তারা। বিশেষ করে সম্রাট নিঃস্বার্থ ভাবে এত জায়গায় গিয়েছে এই কাজের জন্য তা না উল্লেখ করলে অন্যায় হবে।সে এই কাজ না করলে এই কাজ টি আদৌ হত কিনা সন্দেহ আছে। 


এন সি পি নেতা আখতার হোসেন ও তার টিম পিছনে কাজ করেছেন প্রজেক্টটি বাস্তবায়নের জন্য।নাম করনে এবং আইডিয়া দিয়ে সাহায্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া নিজে তত্বাবধান করেছেন কাজটি সম্পন্ন করতে দ্রুত সময়ের ভিতর। সিটি কর্পোরেশন এর একঝাক ইঞ্জিনিয়ার,ঠিকাদার এবং নির্মাণ শ্রমিক দিন রাত কাজ করে বাস্তবায়ন করেছেন  নির্দিষ্ট দিনের ভিতর। 
সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আসলে কাজটি সম্পন্ন হয়েছে নানা প্রতিকুলতার ভিতরেও। তাদের সকলের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ।