Image description
 

নিজস্ব ভোটব্যাংক ও আওয়ামী লীগের ভোট আয়ত্তে এনে আগামী নির্বাচনে নিজেদের অন্যভাবে তুলে ধরতে চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা নির্ধারণ না হলেও পুরোদমে মাঠ গোছাচ্ছে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী। ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সারা দেশ চষে বেড়াচ্ছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। আওয়ামী লীগবিরোধী দলগুলো এক  সুতায় গাঁথার চেষ্টা করছে দলটি। এ ছাড়া সারা দেশে নেতৃত্বহীন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের টার্গেট করে নিজেদের নীতি-আদর্শ তুলে ধরছে। আওয়ামী লীগ-অধ্যুষিত এলাকায় তাদের প্রভাববলয়ে থাকা এলাকাগুলোতে সাংগঠনিক চমক দেখাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। আশা করছে বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ-অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে খুবই ভালো করবে তারা। বিশেষ করে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে জামায়াতের সাংগঠনিক শক্তি দিনদিন বেশ মজবুত হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘরে ঘরে জামায়াত তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর, কোটালীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় তারা কার্যক্রম চালাচ্ছে। শেখ হাসিনার নিজস্ব নির্বাচনি এলাকায় জামায়াতের অনেক রুকন রয়েছেন। সেখানে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম এখন ভালোভাবে চলছে। এমনকি গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন।

গোপালগঞ্জের ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যারা মুখ খুলতে পারতেন না, তারাও এখন সক্রিয়। মাদারীপুরে শাজাহান খানের এলাকায় জামায়াতের রাজনীতি করা ছিল খুবই ভয়ানক। এসব এলাকায় আওয়ামী লীগ নিজস্ব রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল। এসব এলাকায় ভিন্নমতের বসবাস ছিল অনেক কঠিন। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে এসব এলাকায় জামায়াত সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণের মাঝে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছে। জামায়াত নেতারা আওয়ামী লীগ-অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে চষে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের সভা-সমাবেশে ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। সামাজিক কর্মকান্ডে ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। জামায়াত নেতারা বলছেন, এলাকাবাসী বলছেন, তারা আওয়ামী লীগ-বিএনপির শাসন দেখেছে। আগামীতে জামায়াতে ইসলামীর শাসন দেখতে চায়। এসব এলাকায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থেকে আওয়ামী লীগ শাসনামলের দুর্নীতি-দুঃশাসনের কথা তুলে ধরছেন। পাশাপাশি জামায়াত রাষ্ট্রীয় ক্ষতায় এলে কীভাবে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করবে তা তুলে ধরছেন। তাঁরা বলছেন, এসব নির্বাচনি এলাকা শুধু শেখ হাসিনা, শাজাহান খান, নিক্সন চৌধুীর এলাকা নয়, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লাদের নির্বাচনি এলাকা। এসব এলাকায় জামায়াতের শহীদ পরিবারের সদস্যসহ দলের অন্যরা তাদের সাংগঠনিক শক্তি দেখাবে। এসব এলাকায় ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে জনসভায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি ছিল অসম্ভব। জামায়াতে ইসলামী আওয়ামী লীগ-অধ্যুষিত এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা লাভ করবে বলে দলটির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

জানতে চাইলে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা কোনো দল বা নির্বাচনি এলাকা টার্গেট করে কাজ করছি না। বাংলাদেশের সব মানুষের কাছে যাচ্ছি। তাদের কথা শুনছি। আমাদের কথা তুলে ধরছি। কে কোন দলের তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের নীতি-আদর্শ শুনে মানুষ এগিয়ে আসছে। তাদের স্বাগত জানাচ্ছি। তবে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, খুনি, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজের জামায়াতে ইসলামীতে জায়গা হবে না।’ তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ১৫ বছরে আমরা স্বাভাবিক কর্মকান্ড চালাতে পারিনি। এতে হতাশ হইনি অনুপ্রেরণা লাভ করেছি। মুক্ত পরিবেশে নতুন উদ্যমে উজ্জীবিত হয়ে কাজ করছি।’ জানা গেছে, নেতৃত্বহীন আওয়ামী লীগের ভোটারদের কাছে টানার লক্ষ্যে সারা দেশে মাঠে সরব রয়েছেন জামায়াত নেতারা। তাঁদের মূল লক্ষ্য আগামী নির্বাচনে ইতিহাস সৃষ্টি করা। সে জন্য এখন থেকেই মানবিক ও সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে জনমত তৈরির সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে দলটি। জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনি লড়াইয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়। শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে দলটি প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পায়নি। তারপরও আগামী নির্বাচনে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে থাকবে জামায়াতে ইসলামী, এমনটিই মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা।