Image description
 

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনয়ন পেয়ে আলাদিনের চেরাগ হাতে পান দেবহাটা উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের শিমুলিয়া গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন সাহেব আলী। রাতারাতি সব বদলে যেতে শুরু করে তার। নির্বাচনে জয়লাভ করে বেশভুষা পরিবর্তন হতে থাকে । এক সময়ের ভূমিহীন সমিতির সদস্য থেকে কয়েক বছরের ব্যবধানে কোটিপতি বনে যান তিনি। অথচ কয়েক বছর আগেও ঠিকমতো সংসার চালানো কঠিন ছিল সাহেব আলীর।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১২ সালে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবর রহমানের হাত ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন সাহেব আলী। লেখাপড়া খুব বেশি না জানলেও বুদ্ধিতে তিনি বেশ পটু। সে কারণে অল্প দিনে সাধারণ কর্মী থেকে চলে আসেন মূল দলে। 

এরপর কৌঁশলে বাগিয়ে নেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ। নেতৃত্বে তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়ে অল্প দিনে দলীয় নেতাকর্মীদের মন জয় করে নেন। সেই সুবাদে দলীয়ভাবে নৌকার টিকিট পেয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। গেল নির্বাচনে আলমগীর হোসেন সাহেব আলী ১ হাজার ২০১ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। 

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার, জমি দখল, অবৈধ ব্যবসায় মধ্যস্থতাকারীসহ একাধিক অপকর্মে নিজেকে জড়িয়ে গড়ে তুলেছিলেন এক সিন্ডিকেট। এর বাহিরে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর বিভিন্ন ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে নামমাত্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছেন। 

 

স্থানীয় সংসদ-সদস্য, উপজেলা প্রশাসন, দলীয় নেতাদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে তুলে নীরবে এসব কাজ চালিয়ে যাওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে জন্মনিবন্ধনে নয় ছয় কাজ চালিয়েছেন তিনি। এমনকি টাকার পরিমাণ অনুযায়ী কাজ আগে পড়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। রাতের আঁধারে খোদ পরিষদ ভবনে চলে নানা আসর। এসব কথা সবার জানা থাকলেও প্রতিবাদ করার সাহস নেই কারোর কারণ চেয়ারম্যানের রয়েছে পৌষ্য বাহিনী। যাদের দিয়ে অসাধ্য কাজ সাধ্য করেন তিনি। 

এসব বাহিনীর সহযোগিতায় এবং সরকারি টাকা আত্মসাতের ফলে নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে কুঁড়ে ঘর ছেড়ে কোটি টাকার বাড়িতে ওঠেন তিনি। যা রীতিমতো মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সামান্য আয়ের টাকা দিয়ে এমন বিলাসবহুল বাড়ি ও আসবাবপত্র ক্রয় কিভাবে সম্ভব সেটাই প্রশ্ন তাছাড়া নির্বাচনীয় হলফনামা দেখলে মিলবে এই কালো টাকার উৎসের সন্ধান। বিলাসী জীবনের জন্য ভোটের পর ২য় বিয়েও করেছেন তিনি। 

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুল ঠিকানা ব্যবহার করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। বসবাস করেন শিমুলিয়ায় অথচ ভোটার এলাকা ঢেপুখালি। এছাড়া কাজ না করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎসহ সরকারি পানির ৩শ ড্রামের সরকারি ফি এর ৯ লাখ টাকা, ল্যাট্রিন দেওয়ার জন্য ২শ পরিবার থেকে ৬ লাখ টাকা, ৭০টি নলকূপ দেওয়ার জন্য ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণ অভিযোগ করেন। 

একই সঙ্গে পরিষদের ১% বরাদ্দের টাকায় ২টি যাত্রীছাউনি নির্মাণ করার কথা থাকলেও কোনো কাজ না করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। গেল ৫ আগস্টের পর তিনি পালিয়ে থাকায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের বাসিন্দারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। সেই সঙ্গে তার পদটি শূন্য হওয়ায় সেখানে প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তার এই অপকর্মের বিচারের দাবি করেন স্থানীয় বাসিন্দা।