
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট বিভাগের চারটি জেলার অধিকাংশ সংসদীয় আসনে এখন সরব জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। প্রার্থীরা তৃণমূল পর্যায়ে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। পোস্টার-ব্যানার, ঘরোয়া সভা, মাহফিল, ধর্মীয় আলোচনা ও সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে পৌঁছাচ্ছেন তারা।
দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সিলেট বিভাগের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই মনোনীত প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়েন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের অন্তত ৮টি আসনে জমিয়তের প্রার্থীরা তুলনামূলকভাবে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট-৪, ৫ ও ৬ আসন বিশেষভাবে আলোচনায় আছে।
প্রার্থীরা দলীয় পরিচয়ের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা, সামাজিক যোগাযোগ ও উন্নয়নমুখী ভাবমূর্তি গঠনে গুরুত্ব দিচ্ছেন। প্রচারণায় তারা ‘শোষণ ও দুর্নীতিমুক্ত ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রগঠন’ এই স্লোগানকে সামনে এনেছেন।
জানা যায়, সিলেটে জমিয়তের সাংগঠনিক ভিত্তি ঐতিহাসিকভাবে শক্তিশালী। বিশেষ করে পূর্ব সিলেটের কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের গ্রামীণ অঞ্চলে তাদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। অতীতের নির্বাচনগুলোতেও দলটি এসব এলাকায় শক্ত অবস্থানে ছিল। সে ধারাবাহিকতায় বর্তমানে তাদের ভোটব্যাংক আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
জমিয়তের প্রচার সম্পাদক মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী যুগান্তরকে বলেন, ‘জমিয়ত এখন আর শুধু ধর্মীয় সংগঠন নয়, বরং একটি সুসংহত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এবার সিলেটের অন্তত ছয় থেকে আটটি আসনে আমরা ভালো ফলাফল বয়ে আনব, ইনশাআল্লাহ।’
দলের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জমিয়তের অভ্যন্তরে একক নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আলোচনা যেমন চলছে, তেমনি বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনের বিষয়েও আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামী’র সঙ্গে কোনো সমঝোতা, জোট বা যুগপৎ কর্মসূচিতে যেতে রাজি নয় দলটি। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বিএনপির দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী হিসেবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গেই নির্বাচনী সমঝোতায় যেতে পারে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জমিয়তের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক আসন্ন নির্বাচনে সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। স্থানীয় ভোটারদের মতে, এবারও যদি তিনি ধানের শীষ প্রতীক পান, তাহলে তার জয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি।
সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনে জমিয়তের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা ফখরুল ইসলাম। এখানে জমিয়তের সাংগঠনিক অবস্থান শক্তিশালী। ব্যক্তিগতভাবে ফখরুল একজন তরুণ সমাজসেবক হিসেবে সব মহলে সমাদৃত। উন্নয়নমূলক নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
এছাড়া সুনামগঞ্জ-৩ আসনে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আলেম মাওলানা হাম্মাদ আহমদ গাজীনগরী, সিলেট-৪ আসনে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, হবিগঞ্জ-৪ আসনে হেকিম নুরুজ্জামান আসাদী, হবিগঞ্জ-২ আসনে মুফতি এখলাছুর রহমান রিয়াদ, সুনামগঞ্জ-১ আসনে মাওলানা তফাজ্জুল হক আজিজ, সুনামগঞ্জ-২ আসনে ড. মাওলানা শোয়াইব আহমদ এবং মৌলভীবাজার-৪ আসনে মাওলানা শেখ নুরে আলম হামিদী জমিয়তের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে প্রচারনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সিলেট ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনী মাঠে জমিয়ত এখন বেশ সক্রিয় ও আত্মবিশ্বাসী অবস্থানে রয়েছে। প্রচারণায় শৃঙ্খলা, তৃণমূল কর্মীদের উৎসাহ এবং তরুণ প্রজন্মের সম্পৃক্ততা সব মিলিয়ে তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সুপরিকল্পিতভাবে। তবে শেষ পর্যন্ত এই তৎপরতা কতটা ভোটে রূপ নেবে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনী ফলাফল পর্যন্ত।