কল্পনা করুন, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক করছেন। আর ঠিক তার ডান বা বাম পাশে বসে আছেন মোহাম্মদ এ আরাফাত; যে চেয়ারটি দলের সাধারণ সম্পাদকের জন্য নির্ধারিত।
আওয়ামী লীগে এটা প্রতিষ্ঠিত যে, সভাপতির পরেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ পদ হলো সাধারণ সম্পাদক। আর ওবায়দুল কাদেরের উত্তরসুরী হিসেবে ওই পদে উড়ে এসে জুড়ে বসা মোহাম্মদ এ আরাফাতকে বসাতে ছক কষেছিলেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে খোঁজ নিয়ে ঢাকা টাইমস জানতে পেরেছে, রীতিমতো প্ল্যান করেই আরাফাতকে আওয়ামী লীগের কমিটির সদস্য পদে বসানো হয়। কোনোদিন আওয়ামী লীগের সভা, সমাবেশ, কর্মসূচিতে হাজির না থাকা আরাফাত দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়াতে, তখন বিস্মিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা।
ঢাকা-১৮ গুলশান আসনের উপনির্বাচনে আরাফাতকে মনোনয়ন দেওয়ার পর সেই বিস্ময়ের মাত্রা আরও বাড়ে। হিরো আলমের কাছে প্রায় পরাজিত আরাফাতকে ওই উপনির্বাচনে জেতাতে তৎকালীন রাষ্ট্রযন্ত্রের তৎপরতা ছিলো নজরকাড়ার মতো।
একাধিক সূত্রে ঢাকা টাইমস নিশ্চিত হয়েছে, ওই উপ-নির্বাচনে আরাফাতকে জেতাতে ওয়াকিল কমিশনার খ্যাত গুলশান আওয়ামী লীগের ধনাঢ্য নেতা ওয়াকিল উদ্দীনকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এমনকি উপনির্বাচনে দলের মনোনয়ন বোর্ড বসার আগের দিন ওয়াকিলকে ডেকে নেন শেখ হাসিনা। তাকে স্পষ্ট জানান, জয় চায়, আরাফাত এমপি হবে। তুমি বিষয়টি সেইভাবে নেবে এবং তোমার দায়িত্ব পালন করবে। ওয়াকিল নিজেই ছিলেন মানোনয়নপ্রত্যাশী। তবে নেত্রীর আদেশে ওয়াকিল কমিশনারও বুঝে যান, তাকে কি করতে হবে।
উপনির্বাচনে জিতিয়ে আনার পর আসে ২০২৪ এর নির্বাচন। সেই ভোটের পর আরও বড় তারকা বানিয়ে দেওয়া হয় আরাফাতকে। একতরফা সাজানো নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষিত আরাফাতকে মন্ত্রিসভার সদস্য বানান শেখ হাসিনা। দায়িত্ব দেন তথ্য প্রতীমন্ত্রীর।
সরকার ও আওয়ামী লীগের অনেক কর্মসূচিতে আরাফাতই হয়ে উঠতে থাকেন অন্যতম প্রধান মুখ। সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পিতভাবে হাজির করা হতে থাকে আরাফাতকে। সরকার ও আওয়ামী লীগের অনেক নীতি-নির্ধারনী বক্তব্য প্রচার করে নিজের অধিকতর গুরুত্ব বুঝিয়ে দিতে থাকেন।
একদিকে জয়ের প্ররোচনা, আরেকদিকে শেখ হাসিনার প্রশ্রয়ে আরাফাত হয়ে উঠতে থাকেন অপ্রতিরোধ্য।
লক্ষ্য করবেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে যখন শেখ হাসিনা সরকার ছাত্র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার এক ইভেন্ট করালেন সেখানেও যথারীতি মধ্যমনি সেই আরাফাত।
হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সুনিপুন পরিচালনায় আরাফাত ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদের দিকে যখন ধাবমান তখনই সব স্বপ্ন চুরমার করে দিল ৫ আগষ্ট।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে পতন ঘটে হাসিনা সরকারের। আওয়ামী লীগেরও। শেখ হাসিনা-জয়ের এই আরাফাত ডিজাইনে কতটা সায় ছিল শেখ রেহানার? তা অবশ্য জানা যায় না।