
দেশে নির্বাচনের হাওয়া বইছে জোরেশোরে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাজনৈতিক দলগুলো। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে এবার ভোটের মাঠে থাকছে না ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। তাই নির্বাচনের মাঠে দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীই এবার একে অপরের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে বসে নেই ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। বড় দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পাশাপাশি তারাও যে যার মতো আসন ধরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি তাদের যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের জন্য কিছু আসন ছেড়ে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে এসব আসন ভাগ হবে। এটা মাথায় রেখে ছোট দলের একঝাঁক বড় নেতা প্রচারেও নেমে পড়েছেন।
২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে ২০ দলীয় জোট ভেঙে দিয়ে সমমনাদের নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে নামে বিএনপি। সে সময় তাদের সঙ্গী হয় গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের শরিক দলগুলো। এর বাইরে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, আমার বাংলাদেশ-এবি পার্টি, গণফোরাম, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট-এনডিএম বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে রাজপথে নিজ নিজ প্ল্যাটফর্ম থেকে সরব ছিল।
সূত্র জানায়, গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকদের মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব (লক্ষ্মীপুর-৪), নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া-৪), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক (ঢাকা-৮), গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬), ভাসানী জনশক্তি পার্টির সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু (জামালপুর-৫) এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইউম (কিশোরগঞ্জ-৫) আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে আ স ম আব্দুর রব যদি নির্বাচনে অংশ না নিতে পারেন সেক্ষেত্রে তার স্ত্রী জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে প্রার্থী হবেন।
এছাড়া ১২ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার (পিরোজপুর-১), বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা (কিশোরগঞ্জ-৫), জাতীয় পার্টি (জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন (কুষ্টিয়া-২), দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট নবাব আলী আব্বাস খান (মৌলভীবাজার-২), বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর-১), জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা রশীদ বিন ওয়াক্কাস (যশোর-৫), উবাইদুল্লাহ ফারুক (সিলেট-৫), খেলাফত মজলিসের আব্দুল বাছিত আজাদ (হবিগঞ্জ-২) এবং ড. আহমদ আবদুল কাদের (হবিগঞ্জ-৪) আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অবশ্য খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামপন্থিদের জোটে গেলে তাদের জন্য আর আসন ছাড়বে না বিএনপি।
এদের বাইরে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (চট্টগ্রাম-১৪), দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা-৭), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ (ঢাকা-১৭), গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর (পটুয়াখালী-৩), দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান (ঝিনাইদহ-২), গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী (ঢাকা-৬), এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু (ফেনী-২), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট-এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ (ঢাকা-১৩), গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া (হবিগঞ্জ-১), জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের অন্যতম প্রধান শরিক দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টি- এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (নড়াইল-২) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকার হেভিওয়েট প্রার্থী মাশরাফি বিন মুর্তজার বিপক্ষে লড়েছিলেন। কর্নেল (অব.) অলি আহমদ নির্বাচন না করলে (চট্টগ্রাম-১৪) আসনে তার ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক সানি প্রার্থী হবেন।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক যুগান্তরকে বলেন, আমি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচন করব। এ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছি। এটা আমার নিজের এলাকা।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে বলেন, তাকে কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসন থেকে নির্বাচনের বিষয়ে মৌখিক সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। আশা করি চূড়ান্ত মনোনয়নও পাব।
তিনি আরও বলেন, এখন বিএনপি যদি এ আসনটি আমার জন্য ছেড়ে দেয়, তাহলে জেতার ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য আসন ছেড়ে দেওয়া ও নির্বাচনের পর সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করার যে প্রতিশ্রুতি বিএনপির রয়েছে, সেটা তারা পূরণ করবে বলে আমি মনে করি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় মোটামুটি সবার মধ্যে এই ধারণা কাজ করছে যে, বিএনপি ছাড় দিলে বিজয় প্রায় নিশ্চিত। সে কারণে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপির কাছ থেকে নিজেদের আসন আদায় করে নিতে। এক্ষেত্রে কার ভাগ্যের শিকে ছিঁড়বে, সেটা নির্ভর করছে বিএনপির হাইকমান্ডের ওপর। তবে ভোটের মাঠে ছোট দলের বড় নেতারা নেমেছেন কোমর বেঁধে।