
চলমান সংস্কারপ্রক্রিয়ার নিজেরই সংস্কারের প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, এক বছর ধরে সংস্কারপ্রক্রিয়া চলমান থাকলেও কোনো ধরনের সমাধানে পৌঁছাতে পারছে না। মূলত কমিশন প্রথাগত পদ্ধতি থেকে বের হতে পারছে না দেখে কোনো সমাধান আসছে না।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ’ শীর্ষক এক সংলাপ অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন আবদুল মঈন খান। আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আমাদের ওপর জোর করে একটা একনায়কতন্ত্র চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল যে বাংলাদেশে সবাইকে একইভাবে চিন্তা করতে হবে। কোনো ভিন্নমত থাকতে পারবে না।’ আজকেও কি সবাইকে ঐকমত্যে নিয়ে এসে আমরা গণতন্ত্র উদ্যাপন করব—এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আমি এ ধারণায় বিশ্বাস করি না।’
চলমান সংস্কারপ্রক্রিয়া তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এখানে মতভেদ থাকতে পারে। প্রতিটি মানুষের ভিন্নমত থাকতে পারে। এ বৈচিত্র্যকে ধারণ করতে না পারলে আমি বিশ্বাস করি না যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কাজ করবে। শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে একমত হয়েছি। আর ১০টি, ২০টি বিষয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে। আমরা চিন্তিত হবো সব বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল ও ১৮ কোটি মানুষ একমত হয়—তাহলে আমি চিন্তিত হয়ে যাব, এটা ভেবে যে দেয়ার ইজ সামথিং রং (এখানে কোনো ঘাপলা আছে)।’
ইংরেজি একটা প্রবাদ উল্লেখ করে মঈন খান বলেন, ‘ইউনিটি ইন ডাইভারসিটি (বৈচিত্র্যেই ঐক্য)। সব কাগজে সই করব, সবকিছু বাস্তবায়ন করব, সংবিধান ছুড়ে ফেলব, নতুন সংবিধান করব—এগুলো যদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আসে আসবে। তাতে আপত্তি করব না। কিন্তু জোর করে কারও ওপর চাপিয়ে দেওয়ার দরকার নাই।’
আজকে এ প্রশ্নগুলো যদি আগস্ট বিপ্লবের পরে না এসে যদি আগে আসত তাহলে বাংলাদেশের মানুষ ভিন্নভাবে চিন্তা করত বলে মনে করেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মঈন খান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের মনস্তত্ব কেমন, সেটা তো জানেন। তারা এক দিকে অধৈর্য, আরেক দিকে ইমোশনাল। এ দুটো জিনিস এক হয়ে গেলে তখন মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। সেটা হয়েছেও।’
অন্তর্বর্তী সরকারের বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের ওপর আস্থা রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেন মঈন খান। তিনি বলেন, ‘এ আস্থাটা কিন্তু পারস্পরিক। আজকে সরকার যে একটা কনভেনশনাল সংস্কারপ্রক্রিয়া অনুসরণ করে এসেছে এবং সর্বশেষে কোনো সমাধানে আসতে পারছে না, তার মূল কারণ হচ্ছে তারা কনভেনশন থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। সে কারণে আমি বলছি সংস্কারপ্রক্রিয়াকে সংস্কার করা প্রয়োজন।’
আলোচনায় ইতিমধ্যে সংস্কারের সুপারিশগুলোর ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বিষয়ে মতৈক্য হওয়ার কথা উল্লেখ করে মঈন খান বলেন, ‘আমরা এটা কেন ধরে নিচ্ছি জাতীয় সব বিষয়ে আমাদের একমত হতে হবে।’ তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এ বিষয়ে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। সেখানে ভোটাররা যাকে ভোট দেবে, তারাই সরকার গঠন করবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে মঈন খান বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতদ্বৈততা থাকতে পারে। আমরা সেগুলো সামনাসামনি বসে আলাপ করব। এখানে দ্বন্দ্বের কিছু নেই। আমরা যদি এ পারস্পরিক আস্থা না রাখি তাহলে আমি মনে করি, কোনো সংস্কারে কাজ হবে না।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে নিরাপত্তা বিশ্লেষক, জ্বালানিবিশেষজ্ঞ, সাবেক কূটনীতিক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিজিএসের প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান।