Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে এমন ঘোষণা দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা জানান। এরপর থেকে দেশজুড়ে নির্বাচনি উত্তাপ ছড়াতে শুরু করে। এই উত্তাপ এখন বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ নিয়ে দেশটির পার্লামেন্টেও কথা উঠেছে।

 

এদিকে নির্বাচনে অংশ নিতে জামায়াতে ইসলামী প্রায় সব আসনে প্রার্থী সিলেক্ট করেছে। অন্যদিকে বিএনপিও নির্বাচনি প্রার্থী নির্ধারণের জন্য মাঠে জরিপ চালানো শুরু করেছে।

 

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনার পটভূমিতে দিল্লিতে একটা প্রশ্ন ঘুরেফিরেই আসছে– বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি এখন কী হওয়া উচিত?

জামায়াত এমন একটি দল, যাদের ইসলামী চিন্তাধারার কারণে ভারত চিরকাল তাদের রাজনৈতিকভাবে অস্পৃশ্য মনে করে এসেছে–এমনকি জামায়াতের সঙ্গে সংস্রব আছে বলে বিএনপি-র সঙ্গেও ভারত বহুদিন সম্পর্ক পর্যন্ত রাখতে চায়নি। কিন্তু বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় জামায়াতের যে শক্তিবৃদ্ধি হচ্ছে সেই লক্ষণ স্পষ্ট, বিভিন্ন পাবলিক ইউনিভার্সিটির ছাত্র সংসদের নির্বাচনেও তারা দাপুটে জয় পেয়েছে। খবর বিবিসি বাংলা।

এই প্রেক্ষাপটে দিল্লিতেও কোনো কোনো পর্যবেক্ষক মনে করছেন, জামায়াত এখন সে দেশে সম্পূর্ণ নতুন চেহারার একটি দল, ‘কার্যত তারা যেন জামায়াত ২.০’!


শ্রীরাধা দত্ত যেমন মনে করিয়ে দিচ্ছেন, জামায়াতের নবীন প্রজন্মের নেতারা জিনস বা টি-শার্ট পরেও টেলিভিশন টক শোতে আসছেন– নতুন নতুন ধ্যানধারণার কথা বলছেন।

সম্প্রতি ঢাকা সফরে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের সঙ্গে বৈঠকের সূত্র ধরে তিনি বলছিলেন ‘আমি ড: তাহেরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ধরুন আপনারা সরকার গড়ার মতো সংখ্যা পেয়ে গেলেন, তাহলে কি দেশে শরিয়া আইন আনতে চাইবেন?’

‘উনি তখন বললেন, এটা আবার কোথায় শুনলেন? আমরা কবে কোথায় বলেছি জিতলে আমরা বাংলাদেশে শরিয়া আইন আনবো!’

‘আমি ১৯৭১র কথাও জিজ্ঞেস করেছিলাম, কারণ বহুকাল ধরেই আমরা জানি মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা কী ছিল।’

‘তিনি তখন বললেন, মতিউর রহমান নিজামি বা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মতো নেতারা কিন্তু প্রকাশ্যেই একাত্তরে জামায়াতের অবস্থানের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন! আমরা ওটা স্বীকার করেছি!’

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তেও জামায়াতের নতুন নেতৃত্ব আগ্রহী বলে তিনি ধারণা করছেন।

‘জামায়াতের যুক্তি হলো, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাদের আপত্তির জায়গাটা হলো শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের পুরো অর্জনটা তার নিজের বলে হাইজ্যাক করে নিয়েছিলেন! তারা এটাও বলছেন যে ভারত যে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী, তা স্বীকার করতেও জামায়াতের কোনো দ্বিধা নেই!’

‘চট্টগ্রাম অস্ত্র পাচার মামলাই বলি বা ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যেকার অন্য নানা ভারত-বিরোধী ঘটনা – ওনারা এটাও বললেন যে ওগুলোতে জামায়াতের কারও হাত ছিল, এরকম একটা প্রমাণ দেখান!’

ফলে জামায়াতকে নিয়ে শ্রীরাধা দত্তর উপসংহার, ‘ওরা আসলে দারুণ ‘চার্ম অফেনসিভ’, কথায় আপনাকে মুগ্ধ করে দেবে– কিন্তু আসলে ওরা বাস্তবে কী করছে সেটা অবশ্য অন্য গল্প! আর ভারতকেও সেটা বুঝেই পা ফেলতে হবে বলে তার পরামর্শ।

তবে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও হর্ষবর্ধন শ্রিংলা কিন্তু কিছুতেই মানতে রাজি নন বাংলাদেশের জামায়াত আসলে কখনো তাদের চরিত্র পাল্টাতে পারে!

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে গণহত্যার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘তাদের হাতে আসলে রক্ত লেগে আছে – এটা আমাদের বুঝতে হবে!’

আর জামায়াত হলো আসলে মুসলিম ব্রাদারহুডের অংশ– এরা সেই একই মুসলিম ব্রাদারহুড, যারা বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিশরসহ পৃথিবীর নানা দেশেই আছে।’

‘যেমনটা বলে না, চিতাবাঘ আসলে কখনোই তাদের গায়ের ডোরা বদলায় না – এখানেও বক্তারা অনেকেই নিশ্চয়ই একমত হবেন – জামায়াতও আসলে কখনোই পাল্টাবে না!’

এই যুক্তির ভিত্তিতেই তার বিশ্বাস – জামায়াতের অতীতের যা ট্র্যাক রেকর্ড, তাতে ভারত কখনোই তাদের বিশ্বাস করতে পারে না।

শ্রিংলার কথায়—এখানে আমাদের আসলে একটা সীমারেখা টানতেই হবে ... তারা মুখে কী বলছে সেটা শোনা একটা জিনিস, আর বাস্তবে কী করছে সেটাও দেখা দরকার।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভারতকে যে একটা কঠিন সংকট আর প্রবল দ্বিধার মধ্যে ফেলেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।