বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচনের দাবিতে সরব হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারও নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে। ইতোমধ্যে ৬টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে ৪ টির পক্ষ থেকে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এরপর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ এসব প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সংলাপের পর নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করা হবে বলে জানা গেছে।
রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্কারকে কেন্দ্র করে গঠিত ৬টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে ৪ টির পক্ষ থেকে বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ৬টি কমিশনেরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
রিজওয়ানা হাসান জানান, কাজের সুবিধার জন্য ছয়টি কমিশনের কাজের মেয়াদ এক মাস বাড়ানো হয়েছে। ছয়টি কমিশনেরই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে প্রকাশ করা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সংলাপ করা হবে।
এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণতন্ত্রমঞ্চ, কমিউনিস্ট পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্যসহ বেশিরভাগ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। এসব দলের নেতাদের ভাষ্য- সরকার দেশ চালাতে পারছে না। দ্রুত নির্বাচন না দিলে দেশ আরও বড় সংকটের মধ্যে পড়বে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দ্রুত নির্বাচনের দাবি হতে পারে সরকারকে চাপে রাখার একটি রাজনৈতিক কৌশল।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান মঙ্গলবার বলেছেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু প্রয়োজনীয় বিষয়ে সংস্কার শেষে নির্বাচনের কথা বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা নির্বাচনের দাবি করতেই থাকবে। কারণ, নির্বাচিত সরকারই প্রকৃত প্রতিনিধিত্বশীল সরকার। সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট বুধবার (আজ) জমা হওয়ার কথা রয়েছে। রিপোর্ট জমা হলে এগুলোর ওপর আলোচনা হবে। এরপর বিএনপির অবস্থানটা আরও ভালোভাবে জানা যাবে। এই মুহূর্তে তো সব পরিষ্কার না। তবে বিএনপি যেহেতু বৃহৎ রাজনৈতিক দল এবং জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর, কাজেই তারা এই ধরনের দাবি জানাতেই থাকবে। তারা সে কৌশলই নিয়েছেন বলে আমার মনে হয়।’
আরও অনেক দলও দ্রুত নির্বাচন চায়- এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক হাসানুজ্জামান বলেন, ‘যদি ধরে নিই, ২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হবে, তাহলে এটা দীর্ঘসময় হয়ে যায়। কাজেই তারা একটা দাবি জানাবেন এবং সরকারের ওপর একটা চাপ সৃষ্টি হয়, যাতে নির্বাচনের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যদিও সব দল একরকম কথা বলছে না। জামায়াত সুনির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে দাবি জানায়নি। অন্যান্য দলের অবস্থানও জানা যায়নি।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন যারা করেছেন, তাদের সবার সঙ্গে আমরা এরই মধ্যে কথা বলেছি। তারা প্রত্যেকে বলেছেন, নির্বাচন দ্রুত হওয়া দরকার। এই ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কারও দ্বিমত নেই। সমমনা দল, বাম দল, ডান দল, যতগুলো আছে- সবাই দ্রুত নির্বাচনের কথা বলেছে। এরই মধ্যে সিপিবি দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে স্ট্যাটমেন্ট দিয়েছেন। আর জামায়াতে ইসলামী যে নির্বাচনের ব্যাপারে যে পার্থক্য খুব বেশি আছে, দেখি না। গত কয়েক দিন আগেও উনি (দলটির আমির শফিকুর রহমান) বলেছেন, নির্বাচন করা দরকার, আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা দরকার। তাই পার্থক্য কোনো দেখছি না।’ বলা বাহুল্য, মির্জা ফখরুল ইসলাম এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দাবিতে তার দলের সঙ্গে অন্যান্য দলের বৃহত্তর ঐক্যের অবস্থানকে পরিষ্কার করতে চেয়েছেন।
দ্রুততম সময়ে নির্বাচন হবে- এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ‘সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। এটা চলতেই থাকবে। আমরা প্রথম দিন থেকেই বলে আসছি, এই সরকারের একটা কাজ হলো ভালো নির্বাচন করার জন্য যা যা সংস্কার করা দরকার, তা দ্রুততার সাথে শেষ করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা। সুতরাং, এই বিবেচনায় সংস্কার কমিটি যদি বুধবার ভালো খবর দেয়, তাহলে এটা ভালো খবর হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এ ক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছাটুকু গুরুত্বপূর্ণ। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার তো দেশ চালাতে পারছে না। এই ধরনের পরিস্থিতি যত লম্বা হয়, তত সরকারের জন্য, তথা দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন ভোটের খসড়া তালিকা পেশ করেছে। ২০ তারিখ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার চেক করবেন। পুরো নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজটা এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে শেষ করা সম্ভব। সরকার চাইলে বছরের মাঝামাঝিতেই করা সম্ভব।আস