Image description

সমন্বয়ক পরিচয়ে রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের দুই ছাত্রীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদানকারী একটি প্রতিষ্ঠান। অভিযুক্ত ওই দুই ছাত্রী হলেন সমাজ বিজ্ঞানের মাস্টার্সের জাকিয়া ও ইসলামের ইতিহাসের মাস্টার্সের শিফা। তারা কলেজের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের ৯২৮ নম্বর ও ৯০৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী।

এ ঘটনায় অভিযুক্তদের ইন্ধনদাতা হিসেবে কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রেহেনা আক্তার শিরিনের নাম এসেছে। এ ছাড়া এই ঘটনায় সহযোগিতার অভিযোগ উঠছে হলের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করা কলেজের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধেও। চাঁদাবাজির এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাহফিল আরাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গত ৭ জানুয়ারি কলেজ অধ্যক্ষ বরাবর অভিযোগপত্রে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদান প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘৪ ডিসেম্বর সিফা ও জাকিয়া নামের দুই ছাত্রী সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে বঙ্গমাতা হলে ইন্টারনেট সংযোগ চালু রাখতে দেড় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দিলে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে এবং অন্য আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে জানিয়ে অভিযোগপত্রে বলা হয়, অন্য প্রতিষ্ঠান এর চেয়ে বেশি টাকা দেবে তাদের। পরে আরেকটি ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ওই হলে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার কাজ করে। এতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হব বলে মনে করছি।’

এ অভিযোগের পর ১২ জানুয়ারি ঘটনার তদন্তে জন্য ইডেন কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শামসুন নাহার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বঙ্গমাতা ছাত্রীনিবাসে ইন্টারনেট-সংক্রান্ত বিষয়ে উদ্ভূত সমস্যা সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য নিম্নলিখিত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন ইতিহাস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মাহফিল আরা বেগম, অধ্যাপক সুফিয়া আখতার ও ড. নাহিদ মনসুর। ওই কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিষয়টি তদন্তপূর্বক একটি প্রতিবেদন অধ্যক্ষ বরাবর দাখিল করতে হবে।

চাঁদাবাজির ঘটনার প্রতিবাদকারী বঙ্গমাতা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘৯ জানুয়ারি রাতে অভিযুক্ত জাকিয়া ও শিফার চাঁদা চাওয়ার স্ক্রিনশটের ফটোকপি আমাদের হাতে আসে। পরের দিন সকালে আমরা বিষয়টা হল সুপার অধ্যাপক আসমাকে অবহিত করি। তিনি সেদিন রাতেই একটা মিটিং ডাকেন। সেখানে  অভিযুক্ত আসমা-শেফা উপস্থিত হয়। অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা বলে, একদিন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন ইন্টারনেট সংযোগকারীর লোক আমাদের টাকা দেয়। পরে আমাদের অনেকের কাছে টাকা লেনদেনের একটা ভিডিও ইন্টারনেট কোম্পানি দেয়। সেখানে দেখি ইন্টারনেট সংযোগকারী কাছে টাকা দাবি করছে। এ ঘটনার অডিও, ভিডিও সবকিছু রেকর্ড পরবর্তীতে আমরা পেয়েছি। পরে আমরা অধ্যক্ষ বরাবর দাবি করি। এ বিষয়ে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

ইডেন কলেজের বঙ্গমাতা হলের আরেক শিক্ষার্থী সাদিয়া বলেন, ‘তারা কিছু টাকা দাবি করেছিল ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া প্রতিষ্ঠানের কাছে। কিন্তু সংযোগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান যে পরিমাণ টাকা দিতে রাজি হয়েছিল ওরা তা নিতে চায়নি। আরও বেশি চেয়েছিল। পরে ওদের কথোপকথন ভাইরাল হয়ে ধরা পরে।’

চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ইডেন কলেজের দুই ছাত্রীর সঙ্গে বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে একটি অডিও ক্লিপ ও ভিডিও ফুটেজে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর টাকা চাওয়ার প্রমাণ এই প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।

চাঁদাবাজির এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর পক্ষে ইন্ধনদাতা হিসেবে অভিযোগ ওঠা ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক রেহেনা আক্তার শিরিন বলেন, ‘ওরা আমার সাথে দুইটা প্রোগ্রাম করছে। তখন গ্রুপ ছবি তুলেছিল আর ছাত্রদল করবে, সে জন্য আসছে। কিন্তু তারা এমন অকারেন্স করছে, তা আমি জানতাম না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আসছে, এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। এ ঘটনার সাথে আমি কোনোভাবেই জড়িত নই। ওদের বিরুদ্ধে ডকুমেন্টস আছে। যা শাস্তি হওয়ার ওরা পাবে। তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আমি টিচারদের সাথে কথা বলব। ওদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নাই।’  

দুই ছাত্রীর চাঁদাবাজির কাজে সহযোগিতার অভিযোগ ওঠা ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষক সাহাতাব উদ্দিন বলেন, ‘আমি এ ঘটনার পরিস্থিতির শিকার। তদন্ত কমিটির কাছে সব ডকুমেন্ট দিয়েছি। আপনারা তদন্ত কমিটির কাছে জেনে নিতে পারেন।‘

তিনি আরও বলেন, ‘তদন্ত কমিটি কাজ করছে। আমাদের কলেজে একসাথে চারটি পরীক্ষা চলছে। এ জন্য তদন্ত কমিটি অধ্যক্ষ কাছে থেকে সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। আমি এখন তদন্ত কমিটিতে কাজ করছি।‘

প্রাথমিক তদন্তে চাঁদাবাজির সত্যতা পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট দেব। তখন জানতে পারবেন। আমরা সবাইকে ডেকে কথা বলছি, সময় লাগছে।’