Image description

রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজে সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু না করা, স্নাতকে আসন সংখ্যা না কমানোসহ একাধিক দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হলেও একটি অংশের ছাত্রীরা অভিযোগ তুলেছেন, শিক্ষকরা তাদের কাউকে জোরপূর্বক আবার কাউকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কর্মসূচিতে নিয়ে এসেছেন। তবে শিক্ষকদের এমন কর্মকাণ্ডের কথা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে অস্বীকার করেছেন কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শামছুন নাহার।

অপরদিকে কর্মসূচির আয়োজক দাবি করা ছাত্রীদের আরেকটি পক্ষ বলছে, তারা শুধু নিজেদের দাবির বিষয়টি জানাতে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছেন। এর বাইরে তারা কোনো পক্ষের বিষয় মাথায় নিতে চান না। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে কলেজ গেটের সামনে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে প্রায় শতাধিক ছাত্রী অংশ নিয়েছেন।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ছাত্রীরা বলছেন, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি কার্যক্রমের সঙ্গে ইডেনসহ অন্যান্য কলেজগুলোর স্নাতকে অতিরিক্ত হারে সিট কমানোর কথা শুনেছি। এতে দেশের নারীশিক্ষার অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হবে। এছাড়া ইডেনে ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষা চালু করা হলে বয়সের ব্যবধানের কারণে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা-শৃঙ্খলা বাধাগ্রস্ত হবে। এসব দাবি নিয়েই মূলত আমরা মানববন্ধনে অংশ নিয়েছি।

অন্যদিকে জোরপূর্বক এ কর্মসূচিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগ তোলা ছাত্রীদের পক্ষটি বলছে, ক্যাম্পাসের সামনে অনুষ্ঠিত আজকের কর্মসূচিতে তাদের কোনো সমর্থন ছিল না। তাদের ওপর বিভিন্ন ধরনের চাপ প্রয়োগ করে এ কর্মসূচিতে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের ধারণা, কিছু স্বার্থান্বেষী শিক্ষক নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে ছাত্রীদের ব্যবহারের অপচেষ্টা করছেন। তারা শিক্ষকদের এমন ‘প্রতারণামূলক’ আচরণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের ইতিহাস বিভাগের এক ছাত্রী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিভাগের প্রায় সব শিক্ষক এ কাজে জড়িত ছিলেন। আজ আমি ফাইনাল ইয়ারের টেস্ট পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে ম্যামরা মেয়েদের মাধ্যমে একটি নোটিশ দেন যে, কিছুক্ষণ পর একটি মানববন্ধন হবে। ইডেনের ঐতিহ্য ধরে রাখার উদ্দেশ্যে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

শিক্ষকদের উদ্ধৃতি করে ওই ছাত্রী বলেন, ‘যারা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে চাও, তারা খাতা জমা দিয়ে আন্দোলনে চলে যেও। তোমাদেরকে আমরা পাস করিয়ে দেব।’ এরপর অনেক মেয়ে এই আন্দোলনে চলে যায়। আর যারা যেতে চায়নি, তাদের অনেককে ম্যামরা রেজিস্ট্রেশন নম্বর মার্ক করে রাখা, সিসিটিভি দেখে শনাক্ত করাসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইডেন কলেজের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান মাহফিল আরা বেগম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ছাত্রীদের এমন অভিযোগ সত্য নয়। আমি আজকে শ্রেণিকক্ষেই যাইনি। যারা আজকের কর্মসূচিতে গিয়েছে, তারা নিজ উদ্যোগেই গিয়েছে। আমাদের হাজার হাজার ছাত্রী। বিভিন্ন মত ও আদর্শের ছাত্রী রয়েছেন। আজকে যারা কর্মসূচি করেছেন, তারা কিন্তু সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে না। তারা চায়, ইডেন যেভাবে আছে সেভাবেই তার ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষা করে এগিয়ে যাক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষকরা এতদিন বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়ার জন্য আন্দোলন করতে। কিন্তু সেটাতে কেউ রাজি হয়নি। আর এখন জোর করে ঐতিহ্য ধরে রাখার নাম করে আন্দোলন করাচ্ছেন। ছাত্রীদের টেস্ট পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার হলে এসে তারা বলেছেন, একটা প্রশ্ন লিখে আন্দোলনে যাও। আমরা পাস করিয়ে দেব। ঐতিহ্য রক্ষার আন্দোলন হলেও আমাদের বলেছেন, ক্যান্টিনের খাবারের মান বৃদ্ধির আন্দোলন।

‘উনারা কোনোভাবেই চান না ভার্সিটির কার্যক্রম শুরু হোক। উনারা প্রত্যেকটা ক্লাসে ঐতিহ্য ধরে রাখার সবক দিচ্ছেন এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করতে বাধ্য করছেন।’

কর্মসূচির আয়োজক দাবি করা কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী নওশীন আঞ্জুমের কাছে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস কর্মসূচির বিস্তারিত জানতে চেয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্র্যাক্টিসিং মুসলিম। ইডেন মেয়েদের কলেজ জেনে এখানে ভর্তি হয়েছি। এখন এটা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধীনে যাচ্ছে। আমরা শুনেছি, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হলে ইডেন কম্বাইন্ড প্রতিষ্ঠান হয়ে যাবে। যেটা আমরা চাই না। আমাদের দাবির বিষয়টি এর আগেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি। আজ আমরা আবার আনুষ্ঠানিকভাবে দাবির বিষয়টি তুলে ধরেছি।’

‘ইডেনের ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষার’ ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচি থেকে একাধিক দাবি তুলে ধরা হয়েছে। সংক্ষেপে এগুলো হলো: নারীদের উচ্চশিক্ষার জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত ইডেনে সহশিক্ষা চালু না করা; অনার্সের সিটসংখ্যা অতিরিক্ত হারে না কমানো এবং ইডেনে ইন্টারমিডিয়েট চালু না করা।

এই কর্মসূচিতে ছাত্রীদের জোরপূর্বক নিয়ে আসা হয়েছে, একটি অংশের ছাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আঞ্জুম বলেন, ‘সাত কলেজের পুরো ব্যাপারটার সঙ্গে অনেকগুলো পক্ষ জড়িত। অনেকের হয়তো অনেক ধরনের স্বার্থ থাকতে পারে। কিন্তু আমরা আমাদের মতো করেই দাবি জানিয়েছি। আমি বলব, আমাদের দাবির উপর কারো ভর করা কোনোভাবে প্রত্যাশিত নয়। যারা অভিযোগ করেছেন... যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তাদের উচিত অভিযুক্তদের সঙ্গে ব্যাপারটা নিয়ে ডিল করা।’

ইডেন কলেজ ছাত্রীদের কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র নাঈম হাওলাদার বলেন, ঐতিহ্য রক্ষার আন্দোলন করা ছাত্রীদের পক্ষটির সঙ্গে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির কার্যক্রমের বিরোধীতা করা শিক্ষকদের দাবি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।

ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শামছুন নাহার বলেন, ‘ছাত্রীরা ১৫২ বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্বতা রক্ষার দাবিতে আজকে একটি কর্মসূচি করেছেন। শত বছর ধরে ছাত্রীরা এখানে যেভাবে পড়ালেখা করে আসছেন, সেটাতে যেন কোনো ধরনের বাধা না আসে, তারা সে দাবি জানিয়েছেন।’

চাপ প্রয়োগ করে ‘ঐতিহ্য রক্ষার’ আন্দোলনে নিয়ে আসা হয়েছে, একটি অংশের ছাত্রীদের এমন অভিযোগের বিষয়টি অধ্যক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি সরাসরি তা অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, ‘বলপ্রয়োগ বা চাপ প্রয়োগ করে ছাত্রীদের এ কর্মসূচিতে আনার কথা না। ছাত্রীদের সঙ্গে এমন আচরণ করার প্রশ্নই আসে না। আমার সহকর্মীরা এমন কোনো কাজ করেননি। সাত কলেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া অনেক আগে শুরু হয়েছে। শিক্ষকরা যদি এ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে জড়ো করতেন, তাহলে তো অনেক আগেই সেটা করার সুযোগ ছিল। সেটা এখন কেন? আমার কাছে যতটুকু তথ্য রয়েছে, ছাত্রীরা আজকের কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে। যদি কোনো শিক্ষক ছাত্রীদের সঙ্গে এমন আচরণ করে থাকেন, তাহলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’