Image description
 

ডাকসু মূলত অ্যালার্মিং কল। আর এই কল বিএনপির জন্য। বিএনপির প্রাচীনপন্থী নেতারা চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের ট্রেন্ডটা ধরতে পারেননি। স্পিরিটটা বুঝতে পারেননি। তারা তাদের সতেরো বছর আগের চিন্তাতেই আছেন। লিখেছিলাম তাদের বোধোদয় ঘটাতে। অথচ তাদের অবস্থা হয়েছিল ‘উল্টো বুঝলিরে রাম’। 

সাবধান করেছিলাম. আমি এবং আমরা যারা লোকাল পলিটিক্স থেকে গ্লোবাল পলিটিক্সের ট্রেন্ড বিষয়ে টুকটাক জ্ঞান রাখি। আমাদের কথাকে তারা উপেক্ষা করেছেন এবং কোনো ক্ষেত্রে অস্বীকারও করেছেন। অথচ বিএনপি’র মতন একটি দল, যারা সতেরো বছর ধরে মজলুম ছিল, তাদেরই এসব আত্মস্থ করার কথা ছিল, করেনি। বিএনপি’র এই পরাজয়, রাজনীতির জন্য অশনি সংকেত। মধ্যপন্থী রাজনীতির জন্য ডাকসু’র এই পরাজয় সত্যিকার অর্থেই অ্যালার্মিং কল। 

বিএনপি’র প্রাচীনপন্থীরা রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের বাতিল ধারাটাকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছিল। সেই পুরানো বয়ান, যা মূলত দেশের নাগরিকদের বিভক্ত করেছিল। শেখ হাসিনার যে উচ্চারণের পর গণবিস্ফোরণ ঘটেছিল, পরিণতিতে পালাতে হয়েছিল তাকে। হাসিনার সেই পরাজয় থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত ছিল। বোঝা উচিত ছিল, জেনারেশন জেড চায় না জাতি বিভক্ত থাকুক। 

আওয়ামী লীগের মূলত কোনো রাজনীতি ছিল না। তাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদ ছিল বাতিল চিন্তা। সারাবিশ্বে জাতিবাদী চিন্তা পরিত্যাজ্য হয়েছে অনেক আগেই। গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মিশেলের অদ্ভুত তত্ত্ব তো শুরু থেকেই বাতিল মাল। 

মূলত আওয়ামী লীগ দাঁড়িয়ে ছিল রাজনৈতিক ট্যাবুর উপর। সেই ট্যাবুটা ছিল, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’। মানুষকে ‘রাজাকার’ ট্যাগ দিয়ে জাতিকে বিভক্ত করা এবং বিভক্ত জাতিকে শাসন করার চাণক্য কৌশল। কিন্তু জেনারেশন জেড বিভক্ত জাতি দেখতে চায়নি। তাই প্রতিবাদ উঠেছিল ‘তুমি কে, আমি কে রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’। 

একটু খেয়াল করলেই আমাদের প্রাচীনপন্থী রাজনীতিবিদরা দেখতে পেতেন, জেনারেশন জেড জানে, রাজাকার একটা গালি, কিন্তু সেই গালি যারা দেয় তারা স্বৈরাচার। মাইন্ড ইট, যারা এই গালি দেয়, তারা স্বৈরাচার। জেনারেশন জেড-এর চিন্তার এই ফর্মেশনটা বুঝতে ভুল করে ফেলেছিল বিএনপি’র প্রাচীনপন্থী নেতারা। যে ভুলের পরিণতি ডাকসু’র এই ফলাফল। 

ডাকসু’র ফলাফল যারা শিবিরের বিজয় ভাবছেন, তারাও ভুল করছেন। এটা মূলত শিবিরের বিজয় নয়, যারা আবার জাতিকে বিভক্ত করতে চাইছিল, তাদের জন্য জবাব। শিবির এখানে উপলক্ষ্য মাত্র। শিবিরের মুরুব্বি সংগঠন জামায়াত যদি মনে করে, এটা তাদের প্রতি মানুষের একচ্ছত্র সমর্থন, সেটা হবে অনেক বড় বোকামি। 

এটা মূলত ওয়ার্মিং কল, শুরুতেই তা বলেছি। আর এই কল বিএনপির জন্য। এদেশের মানুষ রাজনীতির সাথে ধর্মকে মেশায় না। শিবির যদি মনে করে, তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সংস্কৃতি তার সাথে ধর্মকে ব্লেন্ড করে দেবে, প্রচলিত সংস্কৃতির বিরুদ্ধাচারণ করবে, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দু’দিনেই ছুড়ে ফেলবে তাদের। 

শিবির যদি এটা বুঝে এবং জুলাই স্পিরিটটাকে অনুধাবন করতে পারে, তবে তারা এটা করবে না। কিন্তু ভয় হলো জামায়াতকে নিয়ে। তাদের প্রাচীনপন্থী নেতারা যদি শিবিরকে বাধ্য করার চেষ্টা করে, তাহলে পরিণতি খারাপ হবে। জামায়াত আবার ব্যাকফুটে চলে যাবে, যেমন ছিল এতদিন। 

ডাকসু’র এই ফলাফল বিএনপির জন্য একটা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে নিজেদের শুধরে নেয়ার। আমি বরাবরই বলি, প্রতিটি অমঙ্গলের মধ্যেই কোনো না কোনো মঙ্গল নিহিত থাকে। বিএনপির জন্যও এই পরাজয়ে মঙ্গল নিহিত রয়েছে। সেই মঙ্গল হলো, তারা যেন জুলাই স্পিরিটকে ধারণ করার চেষ্টা করে। 

আওয়ামী লীগের চিন্তা যা জেনারেশন জেড পরিত্যাগ করেছে, সেটা বুঝতে পারা জরুরি। নেপালের দিকে তাকান, জেনারেশন জেড কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করছে না। ক্ষমতাশীন ও ক্ষমতাহীন সব দলেরই কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে তারা। এই আগুন মূলত পুরানো ধারণাকে জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য। এসব যেন বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা চিন্তায় নেন। বিশেষ করে বিএনপি’র প্রাচীনপন্থী নেতারা যেন ইউটোপিয়া থেকে বেরিয়ে আসেন। ইউটোপিয়াতে বাস করলে ফলাফল এই হয়, ডাকসু’র মতন। অবস্থা হয় নেপালের মতন। এখনো সময় আছে, শুধরে নিন। 

নোট: ডাকসুতে বিজয়ের জন্য অভিনন্দন, সাদেক কায়েম। আপনার বিগত ভূমিকা জানি, জুলাইয়ের হিরো আপনি। কিন্তু আপনার মূল দল মানুষের ভয়ের কারণ অনেকটাই। এই ভয় থেকে মানুষকে বের করে আনুন।