Image description

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল। আজ (বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) সাদিক কায়েম বলেছেন, যারা একসঙ্গে নির্বাচন করেছি, তারা সবাই আমাদের উপদেষ্টা।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের আমানতের যথাযথ হক আদায় করব। স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। যেকোনো সমস্যায় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকব। সবার জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলা হবে। সব ধর্ম ও মতকে সমন্বয় করে আমরা কাজ করব। বিশেষ করে নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।’

ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ইশতেহার বাস্তবায়ন হলেই সত্যিকারের বিজয় হবে। বিজয় মিছিলের পরিবর্তে সারাদেশে শোকরানা দোয়া অনুষ্ঠান হবে। এছাড়া শহিদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও তাদের কবর জিয়ারত করার কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।’

এদিকে, নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম ফরহাদ বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক কোনো বিজয় মিছিল হবে না। শিক্ষার্থীদের দেয়া আমানত রক্ষা করাই এখন প্রধান দায়িত্ব। এটা আনন্দের বিষয় নয়, বরং আমানত রক্ষার পরীক্ষা। এটি শিবিরের বিজয় নয়, শিক্ষার্থীদের বিজয়। সকল মত ও দ্বিমতের ঊর্ধ্বে গিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করব।’

ডাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণার প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) সর্বমোট ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৮৯ ভোট। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন পেয়েছেন ৩ হাজার ৬৮১ ভোট।

এছাড়া ভিপি পদে আব্দুল ওয়াহেদ ২৭, খালেক ১ হাজার ১০৩, আরিফুল ইসলাম ২৩, আল আমিন ইসলাম ১০, আসিফ আনোয়ার ৫, উমামা ফাতেমা ৩৩৮৯, সাদেক হোসেন ৩৯, জালাল আহমদ ৮, জাহিদ হাসান ১৭, তাহমিনা আক্তার ২৬, দ্বীন মো. সোহাফ ৬, মার্জিয়া হোসেন ৩৫, মাহাদি হাসান ৯, আবু তৈয়ব ১০, দেলোয়ার ১২, আজগর ৬, জামাল উদ্দিল, খালেদ ৫০৩, শফিক রহমান ৬, বিন ইয়ামিন মোল্লা ১৩৬, আবুল হোসেন ৭, ইয়াসিন আরাফাত ৬২, উজ্জ্বল হোসেন ৬, নাঈম হাসান ২৪, নাসির উদ্দীন মুদাব্বির ৩, রাসেল মাহমুদ ৭, সুজন ১, শামীম ৩৮৮৩ ও ইমি ৬৮ ভোট পেয়েছেন।

জিএস পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী এস এম ফরহাদ ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী তানভীর বারী হামীম ৫ হাজার ২৫৭ ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে প্রতিরোধ পর্ষদের প্রার্থী মেঘমল্লার বসু পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৪৯ ভোট।

জিএস পদে আরাফাত ৪ হাজার ৪৪, সাদী ২৭১, অনয় ৭৫, মাহমুদুল ৮৪, মেঘ ৪ হাজার ৯৪৯, আবু বাকের মজুমদার ২ হাজার ১৩১, মাহিন সরকার ৩৭ ও হামিম ৫ হাজার ২৮৩ ভোট পেয়েছেন।

এজিএস পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী মহিউদ্দীন খান পেয়েছেন ৯ হাজার ৫০১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪ ভোট। এ পদে বাকি প্রার্থীদের মধ্যে অদিতি ৩৬৭, আকাশ বিশ্বাস ২২২, আরমানুল হক ১৮৬, আলাউদ্দিন ১৩৬, আশরেফা খাতুন ৯০০, আদিল ৮৩, জাহেদ ২৪২ ও তাহমিদ আল মুদ্দাসিসর ৩ হাজার ৮ ভোট পেয়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ১০ হাজার ৬৩১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত ফাতেমা তাসনীম ঝুমা। ৭ হাজার ৮৩৩ ভোট পেয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে নির্বাচিত ইকবাল হায়দার। এছাড়াও ক্যাফেটেরিয়া ও কমনরুম সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন উম্মে সালমা। আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত চোখ হারানো জুলাই যোদ্ধা জসিম খান।

সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মোসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক সানজিদা আহমেদ তন্বী, ক্রীড়া সম্পাদক পদে আরমান হোসেন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে আসিফ আব্দুল্লাহ, সমাজসেবা সম্পাদক পদে এবি জুবায়ের এবং ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে মাজহারুল ইসলাম নির্বাচিত হয়েছেন।

এছাড়াও সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তাজিনুর রহমান, নিত্যা নন্দ পাল, মাজারুল ইসলাম, আনাস ইবনে মুনির, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, বেলাল হোসেন অপু, শাহিনুর রহমান, আফসানা আক্তার, রায়হান উদ্দিন, সর্বমিত্র চাকমা, সাবিকুন্নাহার তামান্না।

এর আগে মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষে গণনা শুরু হয়। ডাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণা নিয়ে ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়। সারাদিন বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ শেষ হয়।

সকাল ৮টা থেকে আটটি কেন্দ্রে শুরু হওয়া ভোট গ্রহণ শেষ হয় নির্ধারিত সময় বিকেল ৪টায়। তবে ৪টার পরও যারা লাইনে ছিলেন তাদের ভোটগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

এবার ডাকসুতে ২৮টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৪৭১ জন। আর ১৮টি হল সংসদে নির্বাচন হবে ১৩টি করে পদে। হল সংসদের ২৩৪টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ১ হাজার ৩৫ জন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এবার ভোটারদের ৪১টি ভোট দিতে হবে। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার।