
৫ আগস্টের ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ অভিহিত করে এর জন্য ‘কালো শক্তি’ দায়ী—বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের এমন মন্তব্যের জেরে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয় দলটি। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বরাবর লিখিত এক চিঠিতে শোকজ নোটিশের জবাব দেন তিনি।
চিঠিতে ‘কালো শক্তি’র ব্যাখ্যায় বিএনপি চেয়ার পারসনের এ উপদেষ্টা বলেন, ‘এরপর (জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর) থেকে জামায়াত-শিবির এবং এনসিপি একসঙ্গে বলতে শুরু করল- ১৯৪৭ হলো প্রথম স্বাধীনতা এবং ২০২৪ ইং হলো দ্বিতীয় স্বাধীনতা, আর ১৯৭১ হলো ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া (সূত্র: বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা)। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মনে হলো- এসব অশ্রাব্য এবং মিথ্যা তথ্য শুনার আগে আমার মৃত্যু হওয়া উচিত ছিল। তাই জীবন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের সত্য কথাগুলো বলতে শুরু করলাম এবং জামায়াত-শিবিরকে ‘কালো শক্তি’ চিহ্নিত করে এনসিপিকে তাদের সহযোগী বলতে শুরু করলাম। তারাই এখন দেশের সমস্ত প্রশাসন, অর্থ এবং বিশ্ববিদ্যালয় দখল করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সবশেষে বলতে চাই- মানুষ এখন বুঝতে শুরু করেছে জুলাই আন্দোলনের দুটি রূপ ছিল। প্রথমতো ‘বিএনপিসহ জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতৃত্বে’ ‘গণআন্দোলন’; যার লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারকে পরাজিত করে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করা। যার প্রধান স্লোগান ছিল- ‘এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি’। কিন্তু আমি যাদেরকে অন্ধকারের ‘কালো শক্তি’ বলেছি তারা হলো জামায়াত-শিবির; যারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গণআন্দোলনের ফসলকে কুক্ষিগত করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র এবং শক্তি সৃষ্টি করছে। জাতীয় নির্বাচন তাদের কাছে গৌন ব্যাপার।’
প্রসঙ্গত, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে এবার ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান। এবং এর জন্য ‘দায়ী’ করলেন ‘কালো শক্তি’ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে।
সম্প্রতি একটি টকশোতে এসব কথা বলেন ফজলুর। তার অভিমত,দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করার ‘ষড়যন্ত্র’ করে আসছে জামায়াত।
তিনি বলেন, ‘যারা ৫ আগস্ট ঘটাইছে, কালো শক্তি, সেই কালো শক্তির নাম হলো জামায়াতে ইসলাম, তাদের যে অগ্রগামী শক্তি তার নাম হইলো ইসলামি ছাত্রশিবির, যাকে সারজিস আলমরা, যারা ওই এইটার অভিনয় করছে, ৫ই আগস্টের অভিনেতা যারা, আমি তাদেরকে নেতা বলতে আর চাই না, তাদের আমি অভিনেতা বলব, সেই আলবদর, আল শামস, জামায়াতে ইসলাম আমরা মনে করেছিলাম ৫৪ বছর পর পূর্বপুরুষের পরাজয়ের গ্লানি তারা ভুলে গেছে, কিন্তু না সেই পরাজয়ের গ্লানি দ্বিগুণ আকারে তাদের মধ্যে এসেছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, জামায়াত ‘চক্রান্ত করে’ দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এবং তাদের পেছনে ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রও’ আছে। তিনি বলেন, ‘তারা চক্রান্ত করে নিজেদের এই দেশে প্রতিষ্ঠিত করেছে, সেই প্রতিষ্ঠার পেছনে জাতীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আছে। সে ষড়যন্ত্রের বহিপ্রকাশে তারা এমন একটা শক্তি হয়ে দাঁড়াইছে যে তাদের এখন অর্থ-বিত্ত সবকিছু আছে।’
তিনি মনে করেন অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের ক্ষমতাতেও এখন জামায়াতই আছে। তবে দলটি এটাও জানে তারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। জামায়াতের প্রধান প্রতিবন্ধক হচ্ছে বিএনপি।
ফজলুর রহমান যোগ করেন, ‘সেই কারণে তারা নির্বাচনে যেতে চায় না। নির্বাচনে যেতে চায় যদি তারা সামনে বিএনপিকে ধ্বংস করতে পারে। কারণ বিএনপি পাহাড়ের মতো তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ভোটের বেলায়। বিএনপি নির্বাচন হলেই আল্লাহর রহমতে দুই তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে পাস করবে।’