
জমে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের প্রচারণা। গতকাল ৪৭১ জন চূড়ান্তভাবে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার পর এ প্রচারণা শুরু হয়। চূড়ান্ত তালিকা ৯টি প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবির (ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট) প্রার্থীদের মধ্যে। শিক্ষার্থীদের ভাষায় ‘জুলাই সম্মুখযোদ্ধা ছাত্রদল’ ও ‘গুপ্ত ছাত্রলীগ হিসেবে পরিচিত শিবির’ (ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট) প্রার্থীর মধ্যে মূল লড়াই হবে। ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ও জিএস শেখ তানভীর বারী হামীম জুলাই আন্দোলনের সন্মুখ সারিতে ছিলেন। মুজিববাদী ছাত্রলীগ ঢাবি ক্যাম্পাসে যখন আন্দোলনকারীদের উপর আক্রমন করে তখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আবিদুল ইসলাম খানের ‘প্লিজ কাউকে ছেড়ে যাবেন না’ বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল। আর ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ব্যানারে নির্বাচনের মাঠে নামা ছাত্রশিবির ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েমের ২০১৮ সালের ছাত্রলীগের ব্যানারে মিছিলে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগান সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুধু তাই নয় টিভি টকশোতে সাদেক কায়েমের বক্তব্য ‘২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ক্যাম্পাসের সবাই জানতো আমি শিবিরের সভাপতি; কখনো নিজের পরিচয় গোপন করিনি’ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাসছে। আবার বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থী প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবদুল কাদেরের লেখা ‘চাঁদাবাজী নয়, অভ্যুত্থানের পর সাদিক কায়েম শুধু প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দাবি জানায়’ নিয়ে তোলপাড় হয়।
আবার সাদিক কায়েমের রানিংমেট জিএম প্রার্থী এস এম ফরহাদ ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে গুপ্ত শিবিরই ছিল ভয়ঙ্কর ছাত্রলীগ এবং বিগত বছরগুলোতে শিবির নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের লুঙ্গির তলে রাজনীতি করেছে। এই দুই প্যানেল ছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ ব্যানারে ভিপি আব্দুল কাদের, জিএস আবু বাকের মজুমদার, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য ব্যানারে ভিপি উমামা ফাতেমা, জিএস আল সাদী ভূঁইয়াঁ, প্রতিরোধ পর্ষদ ব্যানারে ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি, জিএস মেঘমল্লার বসু, ডাকসু ফর চেঞ্জ ব্যানারে ভিপি বিন ইয়ামিন মোল্লা, জিএস সাবিনা ইয়াসমিন, সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ ব্যানারে ভিপি ইয়াসিন আরাফাত, জিএস খায়রুল আহসান মারজান, সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ ব্যানারে ভিপি জামালুদ্দীন মুহাম্মদ খালিদ, জিএস মো. মাহিন সরকার, অপরাজেয় ৭১ অদম্য ২৪ ব্যানারে: ভিপি নাঈম হাসান, জিএস এনামুল হাসান আয়ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ডাকসু নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূলত নির্বাচনে ৫ প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল ও ইসলামী ছাত্রশিবির (ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট) প্রার্থীদের মধ্যে। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত চূড়ান্ত তালিকায় দেখা গেছে, প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রার্থীদের মধ্যে ২৮ জন স্বেচ্ছায় প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন। অপরদিকে, বাছাই প্রক্রিয়ায় বাদ পড়া ১০ জন প্রার্থী আপিল না করায় তাদের মনোনয়নপত্রও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ১৭ জন, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ১১ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৪ জন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ১৯ জন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১২ জন প্রার্থী হয়েছেন। তাছাড়াও গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৯ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১৩ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৭ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ১৫ জন, মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন এবং ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৫ জন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে সদস্য পদে। এবার মোট ২১৭ জন প্রার্থী সদস্য পদে লড়বেন। সবমিলিয়ে ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন ৪৭১ জন প্রার্থী। তবে নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে জুলিয়াস সিজার তালুকদার ও বায়েজিদ বোস্তামীকে প্রার্থী ও ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। জুলিয়াস সিজার প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং ন্যায়বিচার চেয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিরাপদ ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইনশৃংখলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রক্টর, ডিএমপি কমিশনারসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নির্বাচনী নিরাপত্তা, নির্বিঘেœ ভোট প্রদান ও গণনা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের দিনে সেনাসদস্যরা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সভার পর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, নির্বাচনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি প্রধান প্রবেশপথে সেনাসদস্যরা অবস্থান করবেন। ভোটগ্রহণ শেষে ফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রগুলো কর্ডন করে রাখবেন। গতকাল থেকেই ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন পোস্টার, লিফলেট ও হ্যান্ডবিল ব্যবহারে নির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। প্রচার চালানোর সময়সূচি অনুযায়ী প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রচার চালানো যাবে। তবে ছাত্রীদের হলে সময়সীমা রাত ১০টা পর্যন্ত নির্ধারিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইসলামী ছাত্রশিবির এবারের নির্বাচনে মরণকামড় দিচ্ছে। বিগত আশি ও নব্বই দশকে রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। ওই সময়ে রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের ত্রাস ও রগকাটা সংস্কৃতিতে আতকে উঠেছিল শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন গণমাধ্যমে সে ভয়াবহ লোমহর্ষক কাহিনী প্রচার হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম ধারার চেতনাধারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সেখানে কামড় বসাতে পারছে না শিবির। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল এবং মুক্তমনা শিক্ষার্থীরা কখনোই ছাত্রশিবিরকে প্রশ্রয় দেয়নি। এমনকি যুগের পর যুগ ধরে শিবিরের রাজনীতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অলিখিত নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুপ্তভাবে ছাত্রলীগে যায়গা করে নেয়। বিগত বছরগুলোতে ছাত্রলীগের যত সন্ত্রাস, হেলমেট বাহিনী, লাঠি বাহিনী তান্ডব চালিয়েছে তার বেশির ভাগই ছিল শিবিরের গুপ্ত সৈনিক। ঢাবির নাম প্রকাশে একজন শিক্ষার্থী জানায়, এবার শিবির যে ভাবেই হোক ডাকসুতে আসতে চায়। এ জন্য সংগঠনটি নারী প্রার্থীসহ ভিন্ন মতপথের প্রার্থী দেয়ার কৌশল কৌশল নিয়েছে। ঢাকসুর নিয়ন্ত্রণ শিবির নিতে পারলে সে নির্বাচনের প্রভাব আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পড়বে এমন চিন্তা থেকে কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছে। অন্যদিকে ছাত্রদল নিজেদের মতো করে প্রচারণা চালাচ্ছে। স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের উমামা ফাতেমা ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগদান না করা এবং মার্কিন পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করায় তিনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। আবার বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের আবদুল কাদের ও আবু বাকের মজুমদার শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। অন্যান্য ব্যানারে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারাও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরিতে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।
ঢাবি ক্যাম্পাসে এখন নির্বাচনী উৎসব চলছে। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর ছাত্রদল প্যানেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতি ফলক ‘স্মৃতি চিরন্তনে’ শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে প্রচরণা শুরু করেন। সংগঠনটির ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ একসাথে প্রচারণায় অংশ নেয়। এর আগে সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে প্রচার কার্যক্রম সূচনা করে বাম সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদ। এই প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি, জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু এবং এজিএস প্রার্থী মো. জাবির আহমেদ জুবেলের নেতৃত্বে প্যানেলটি শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল। সেখানে এই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা, জিএস প্রার্থী আল সাদী ভূঁইয়াসহ প্যানেলের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় উমামা ফাতেমা বলেন, ডাকসু যেন নিয়মিত এবং অনাড়ম্বরভাবে আয়োজিত হতে পারে, সেটি প্রশাসনকে দেখতে হবে। প্রচার-প্রচারণা এমনভাবে করব, যেন শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। অনেক প্রার্থী ১০-১৫ দিন আগ থেকেই অলিখিতভাবে প্রচারণা করেছে। আমরা বারবার বললেও প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা আশা করব, যে বিধিমালা তারা দিয়েছে, সেখানে যেন প্রশাসন থাকে।
এই প্যানেলের জিএস প্রার্থী আল সাদি ভূইয়া বলেন, আমরা নির্বাচন বানচালের শঙ্কা দেখছি। কারণ শিক্ষার্থীরা যেন তাদের প্রতিনিধি না পায়, তাই এক গোষ্ঠীর লোকজন কাজ করছে।
নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থীজোট। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি এলাকায় তারা কার্যক্রম শুরু করেন। এ সময় ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম বলেন, আমরা কেমন বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করতে চাই, সে রূপরেখা শিক্ষার্থীদের দেওয়া উচিত। কিন্তু আমরা যদি প্রোপাগান্ডা করি, ট্যাগিং এবং ফ্রেমিংয়ের রাজনীতি করি, তাহলে শিক্ষার্থীরা তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে একাডেমিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চাই আমরা। এখানে রাজনীতির নামে অপরাজনীতির কারণে শিক্ষার্থীদের রাজনীতির প্রতি অনিহা তৈরি হয়।
এদিন দুপুরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবর জেয়ারতের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত প্যানেল সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ। এসময় প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ইয়াসিন আরাফাত, জিএস প্রার্থী খাইরুল আহসান মারজানসহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। কবর জেয়ারতের পর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচরণা শুরু করে সংগঠনটি।
এসব প্যানেলের বাইরেও স্বতন্ত্রভাবে অনেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মোদ্দাসসীর চৌধুরী কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে প্রচারের কাজ করেছেন।
প্রচারণার প্রথম দিনেই ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের দুটি ব্যানার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে দুই ধাপে এ ঘটনা ঘটে। প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ব্যানার ভাঙচুরের ছবি ছড়িয়ে পড়ে।
সরেজমিনে গিয়ে চারুকলায় একটি ভাঙা ব্যানার পড়ে থাকতে দেখা যায়, যদিও ভেতরে আরেকটি ব্যানার তখনো অক্ষত ছিল।
এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের জিএস পদপ্রার্থী ও ঢাবি শিবির সভাপতি এসএম ফরহাদ বলেন, প্রচারণার প্রথম দিনই আমাদের ফেস্টুন ফেলে দেওয়া হয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। নির্বাচন কমিশনের উচিত দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা। এটা সন্দেহাতীতভাবে ফ্যাসিবাদী শক্তির কাজ।
জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ইসরাফিল প্রামানিক বলেন, আমরা অন্য একটা কারণে শাহবাগ থানায় ছিলাম খবর পেয়ে এসে এই ধরনের অবস্থা দেখতে পাই। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিষ্টার শামিম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, ডাকসু নির্বাচন জাতীয় রাজনীতিতে অনৈক্য বাড়াতে পারে। জাতীয় নির্বাচনের আগে ডাকসু নির্বাচনের আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি। আমি জসিমউদ্দিন হলের হাউজ টিউটর কোয়ার্টারে ২০ বছর থেকেছি। আমার মনে হচ্ছে ঢাবিতে শিবিরের আধিপত্য ইতিহাসের সর্বচ্চো পর্যায়ে। শিবির ১৫ বছর ছাত্রলীগের ভিতরে গুপ্তভাবে থেকে মদ খেয়েছে হেলমেট বাহিনী হয়ে ছাত্রদলকে হলছাড়া করেছে। ছাত্রদলের কাঠামো না থাকলেও হলগুলোতে শিবিরের গুপ্ত কাঠামো রয়েছে। শিবির সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় ডাকসু নির্বাচন দেয়া হয়েছে। ৬ মাস পর ভোট দিলে শিবিরের এতো প্রভাব থাকবে না। শিবির গুপ্তভাবে হলে থাকায় তাদের সমর্থন কেমন তা বোঝা দুস্কর। ছাত্রসংগঠনটি ক্যাডার ভিক্তিক রাজনীতি করায় শিক্ষার্থীদের পিছনে প্রচুর অর্থ খরচ করে। এটা ঠিক তড়িঘড়ির করে ডাকসু নির্বাচন দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে শিবিরকে সুযোগ করে দেয়া। তবে প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঢাবির শিক্ষার্থীদের ভুমিকা সবচেয়ে বেশি। আমার মনে হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা মওদুদী বাদী এবং জামায়াতের অনুসারি শিবিরকে ভোট দেবে না।