
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার অনুগত রক্ষণশীলদের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে লাখ লাখ চীনা শিক্ষার্থীকে মার্কিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির অনুমতি দিয়েছেন। তিনি তার প্রস্তাবের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ছয় লাখ চীনা শিক্ষার্থী আসতে পারে এবং তাদের আতিথ্য দিতে পেরে আমেরিকা সম্মানিত। ট্রাম্প সতর্ক করে বলেন, তাদের ছাড়া মার্কিন কলেজ ব্যবস্থা নরকে যাবে।
সোমবার ওভাল অফিসে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জায়ে মিউংয়ের সঙ্গে বৈঠকের সময় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “প্রেসিডেন্ট শি চাইবেন আমি চীনে আসি। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আপনারা জানেন, শুল্ক এবং নানা কারণে আমরা চীন থেকে প্রচুর অর্থ আনছি। আমি অনেক গল্প শুনেছি যে আমরা তাদের শিক্ষার্থীদের আসতে দেব না। কিন্তু আমরা তাদের শিক্ষার্থীদের আসতে দেব। আমরা এর অনুমতি দেব। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ—ছয় লাখ শিক্ষার্থী।”
চীনা ছাত্রদের অনুমতি দেওয়া পারস্পরিকভাবে লাভজনক উল্লেখ করে ট্রাম্প দাবি করেন, তাদের অনুপস্থিতি আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ধ্বংস করবে। তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, তারা না আসলে কী হবে? আমাদের কলেজ ব্যবস্থা খুব দ্রুত নরকে যাবে।”
ট্রাম্পের এই ঘোষণা তার প্রশাসনের কঠোর ভিসা নীতি এবং চীনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিভ্রান্তি আরও বাড়িয়ে তুলেছে। কারণ, দুই পরাশক্তি বর্তমানে বাণিজ্য ও প্রযুক্তি নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। একই সঙ্গে এ ঘোষণা ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ ঘাঁটির ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে আরেকটি বিভাজন তৈরি করেছে, যারা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রচার করেছিলেন এবং সাম্প্রতিক ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধে মার্কিন অংশগ্রহণের বিরোধিতা করেছিলেন।
এর আগে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দেশটিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস হিসেবে চীনকে উল্লেখ করে গত মে মাসে বলেছিলেন, পররাষ্ট্র দপ্তর চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করবে এবং নতুন আবেদনকারীদের যাচাইকরণ আরও জোরদার করবে। ফলে ছাত্র ভিসার জন্য নতুন যাচাইকরণ, হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করার পদক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আমেরিকায় পড়াশোনা সীমিত করার ভিত্তি প্রসারিত করার পর ট্রাম্প প্রশাসনের একটি নীতিকে বাদ দেওয়ায় মার্কিন রক্ষণশীলদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
নিজ রাজনৈতিক মহল থেকে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের মুখোমুখি হয়ে ট্রাম্প এই পরিকল্পনার সমালোচনাকে অপমানজনক বলে উড়িয়ে দেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত করেন, যা একটি বিস্তৃত কৌশলের অংশ। হোয়াইট হাউসে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি বলেন, “আমরা চীনের সঙ্গে খুব ভালোভাবে মিশে যাচ্ছি, এবং আমি প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক বজায় রাখছি। আমার মনে হয় এটা বলা খুবই অপমানজনক যে শিক্ষার্থীরা এখানে আসতে পারবে না।”
ট্রাম্প আরও বলেন, তিনি শিকে সরাসরি জানিয়েছেন যে চীনা ছাত্রদের শিক্ষিত করার জন্য আমেরিকা সম্মানিত। নিরাপত্তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রসঙ্গ টেনে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর শিক্ষার্থী ভর্তির তদারকি সমর্থনের কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমরা পরীক্ষা করি, আমরা সতর্ক থাকি এবং নজর রাখি কে আসছে।”সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, এপি
শীর্ষনিউজ