
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভেতরে ভেতরে জোরালো নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এরই মধ্যে নির্বাচনের ইশতেহার, প্রার্থী যাচাইসহ নির্বাচনী কলাকৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করেছে দলের বেশ কয়েকটি বিশেষ কমিটি। এসব কমিটি সরাসরি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে।
দলের উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, নির্বাচন নিয়ে জামায়াতসহ কিছু দলের বিরোধিতা চলমান থাকলেও প্রস্তুতিতে ঘাটতি নেই বিএনপির। বিশেষ করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার প্রণয়নের কাজ চলছে জোরকদমে। দলের একাধিক নেতার অংশগ্রহণ ও বিশেষজ্ঞদের টিম ইশতেহার প্রস্তুত করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এটা ঠিক। কিন্তু বিএনপি তার নির্বাচনী প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। সময় হলে দল সবকিছু সামনে আনবে।’
সংশ্লিষ্টরা উল্লেখ করেন, খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন-২০৩০, তারেক রহমানের ২৭ দফা ও পরবর্তীকালে সম্মিলিত ৩১ দফার ভিত্তিতেই চলছে ইশতেহার প্রণয়নের কাজ। জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে পরিবর্তিত প্রত্যাশার নিরিখে নতুন দিনের দেশ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি সামনে রেখে নির্বাচনী ইশতেহার সাজানো হচ্ছে। অন্যান্য নির্বাচনের চেয়ে এবারের ইশতেহারে ব্যতিক্রমী নির্বাচনী কিছু চমক থাকছে। বিশেষ করে দলের নেতা তারেক রহমান যানজট নিয়ন্ত্রণ, ময়লা-আবর্জনা ব্যবস্থাপনা, ভাষাকেন্দ্রিক ব্যবহারিক শিক্ষা, সুপেয় পানিবণ্টন ব্যবস্থা নিয়ে দেশবাসীকে নতুন পরিবর্তনের বার্তা দিতে আগ্রহী। এরই মধ্যে তার বক্তব্যেও বিষয়গুলো উঠে আসছে। তবে ইশতেহারে বাড়তি চমক কী থাকবে, তা এখনই সামনে আনতে প্রস্তুত নয় দলটি।
বিশেষ করে শাসনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বাধীন চলমান সংস্কার প্রস্তাবগুলোকেও ইশতেহারে জায়গা দেবে বিএনপি। এক্ষেত্রে বিএনপি যে সবার আগে সংস্কার নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করেছে, সে বিষয়টি দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে চান নেতারা। ইশতেহারে জেনজি-জেনারেশন জিরোর চাহিদা, তাদের স্বপ্ন, প্রজন্মের মধ্যে পার্থক্যবোধ কমিয়ে আনার জন্য নানা ধরনের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট একজন নেতা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘বিএনপি একটি বড় দল। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে সব ধরনের প্রক্রিয়াই দল করে। নির্বাচনি প্রস্তুতিও সেভাবেই চলছে। ভিন্ন ভিন্ন কমিটি সেগুলোকে সামনে রেখে কাজ করছে।’
প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সারা দেশে গোপনে বিশেষ একাধিক সেল সক্রিয় রয়েছে বলে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান। তিনি জানান, এরই মধ্যে সারা দেশে প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ চলছে। কে প্রার্থিতা করবেন, বিদ্রোহী প্রার্থী কেমন হতে পারে, আসনভিত্তিক প্রার্থীদের বাস্তব চিত্র কী, তা নিয়ে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করছেন বিশেষ সেলের সদস্যরা।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা জানান, সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতাও নেওয়া হচ্ছে। তবে কোন সংস্থা সহযোগিতা করছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দলের দায়িত্বশীলরা জানান, বিএনপির পাশাপাশি যুগপথে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর আসনেরও খোঁজখবর নিচ্ছে বিএনপি। আসন বণ্টনে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগ্রহ থেকে বিশেষভাবে এসব তথ্য সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সাইফুল হক জানান, নির্বাচনী আসন প্রস্তুতি নিয়ে বিএনপির ডেফিনেট কোনো আলোচনা হয়নি। গণতন্ত্র মঞ্চের শরিকদের বিষয়ে বিএনপির শীর্ষনেতৃত্বের আগ্রহ, উদ্দীপনা আছে।
তিনি জানান, নির্বাচনী পরিকল্পনা কেমন হবে, তা নিয়ে বিএনপি এখনো আলোচনা করেনি। তার দলের মধ্যেও নির্বাচনি ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু হয়নি বলে জানান তিনি। তবে তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন পরিচালনাবিষয়ক একটি কমিটি করেছি।’ তবে বিএনপির কাছে কত আসন চাওয়া হবে- এ নিয়ে দলীয়ভাবে কোনো আলোচনা শুরু হয়নি বলে জানান সাইফুল হক।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে জামায়াতের সঙ্গে জোট করার কোনো সুযোগ নেই। তবে যুগপৎ আন্দোলনে যারা ছিলেন, তাদের সঙ্গে জোট হতে পারে। এমনকি আগামী সরকারেও তারা থাকতে পারে। এছাড়া কয়েকটি ইসলামী ঘরানার দলের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে, তাদের সঙ্গেও জোট হতে পারে। তবে সেটি চূড়ান্ত নয়। এর বাইরে বিগত আন্দোলনে যারা ছিল, তাদের সঙ্গে জোট হতে পারে, সেটি আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হবে।’