
আগামী বছরের (২০২৬ সালের) ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এ লক্ষ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই মধ্যে ৮৩টি সংসদীয় এলাকার সীমানা নিয়ে এক হাজার ৭৬০টি দাবি-আপত্তির আবেদন জমা হয়েছে নির্বাচন কমিশনে। এসব দাবি ও আপত্তির বিষয়ে শুনানি শুরু হয়েছে। ২৪ অগাস্ট শুরু হওয়া এ শুনানি চলবে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত। এই চারদিন দাবি-আবেদন নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত সীমানা প্রকাশ করবে ইসি।
তবে, সীমানা নির্ধারণ নিয়ে ইসিতে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে, যা এর আগে দেখা যায়নি। বিএনপি ও এনসিপি নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি, মারামারি ও উচ্চবাক্য বিনিময় হয় খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সামনে। এমনকি ইসির প্রধান ফটক ভেঙে ফেলার ঘটনাও ঘটে।
রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১২টায় নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের উপস্থিতিতে শুনানি শুরু হয়। এসময় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার অনুসারী এবং এনসিপি নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি, মারামারি ও উচ্চবাক্য বিনিময় শুরু হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সামনে ইসি সচিব আখতার আহমেদ চেষ্টা করেও বিবাদ থামাতে পারেননি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিইসি।
সীমানা নিয়েই যদি এমন জটিলতা তৈরি হয়, তবে জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সীমানা নির্ধারণ নিয়ে ইসির সামনেই দলগুলোর শো ডাউন ও হুমকি-ধামকি দিতে দেখা গেছে। এমনকি ইসির প্রধান ফটক ভেঙে ফেলার ঘটনাও ঘটে। এতে করে ছোট দলগুলো শঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিত নিয়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২৪ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ২ ও ৩ আসন নিয়ে শুনানি চলাকালে এনসিপি নেতাকর্মী ও রুমিন ফারহানার অনুসারীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এতে এনসিপির তিনজন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। তারা হলেন- এনসিপি নেতা প্রকৌশলী আমিনুল হক চৌধুরী, মুস্তফা সুমন ও আতাউল্লাহ।
এনসিপি নেতা প্রকৌশলী আমিনুল হক চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, রুমিন ফারহানার লোকজন আমাদের আক্রমণ করেছেন। আমরা যারা এনসিপি করি তাদের ওপর ব্যাপক আক্রমণ করা হয়েছে। আমাদের অপরাধ হলো আমরা দাবি নিয়ে ইসিতে এসেছি। এ কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সামনে আমাদের পেটানো হয়েছে।
তিনি বলেন, সীমানা নিয়ে যদি আমাদের এভাবে পেটানো হয় তবে সামনে কী হবে আপনারা ভাবেন। সীমানা নিয়ে যদি আমাদের এভাবে মারতে পারে তবে জাতীয় নির্বাচনে কী হবে আপনারা চিন্তা করে দেখেন। আমরা বিষয়গুলো নিয়ে শঙ্কিত।
শুধু এনসিপি নয়, বিএনপিও শঙ্কিত জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা বলেন, এখনো জাতীয় নির্বাচন আসেনি। অথচ একটা সীমানা নির্ধারণ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে যিনি আছেন তিনি এলাকার মানুষকে পেটাচ্ছেন। সীমানা নিয়ে এলাকার মানুষকে পিটিয়ে পিটিয়ে স্বীকারোক্তি নিচ্ছেন। বিষয়টি আমরা নির্বাচন কমিশনে প্রেজেন্ট করেছি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে একটা সীমানা নিয়ে যদি দলের মধ্যে এমন একটা আচরণ দেখি, হু নোজ (কে জানে) নির্বাচনে কী হবে?
সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে মারামারির ঘটনাকে ভোটকেন্দ্র দখলের টেস্ট ম্যাচ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন পিক অ্যান্ড চুজ ভিত্তিতে গঠিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা আমাদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। আজকের ন্যক্কারজনক ঘটনায় পুরো বাংলাদেশ সাক্ষী হয়েছে যে আগামী নির্বাচন কেমন হতে পারে। সেই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কী হবে এবং বিএনপি কী ভূমিকা রাখবে আজ সেটি প্রমাণ হয়ে গেছে।
নির্বাচন কমিশনে মারামারির ঘটনাকে কেন্দ্র দখলের টেস্ট ম্যাচ উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, বিএনপির এক নেত্রী বলছেন, আমরা চাইলে এখানে গুন্ডা নিয়ে আসতে পারতাম। আমরা দেখছি নির্বাচন কমিশনের বাইরে লাঠিসোঁটা নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। শেখ হাসিনা বলতেন- ২০টি হুন্ডা, ১০টি গুন্ডা, নির্বাচন ঠান্ডা। তারাও একই পথে হাঁটছেন।
সীমানা নির্ধারণ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। নির্বাচন কমিশনে দলগুলো যে বিবাদে জড়িয়েছে তাতে করে ইসির দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে বলে দাবি করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, সীমানা নির্ধারণ ইসির দায়িত্ব, এটা নিয়ে রাজনৈতিক দলের বেশি কথা বলা উচিত নয়। সীমানা নিয়ে দলগুলোর নানানভাবে হস্তক্ষেপ দুঃখজনক ঘটনা। এটা শান্তিপূর্ণভাবে ইসি সিদ্ধান্ত নেবে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে ইসির দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। তবে আমরা আশাবাদী জাতীয় নির্বাচনে এ ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। মাঠে সেনাবাহিনী থাকবে, ফলে এমন ঘটনা ঘটিয়ে কেউ পার পাবে না। কেউ বিবাদে জড়াতে চাইলে ইসি ভোট বন্ধ করে দিতে পারবে। এতে রাজনৈতিক দলের নেতাদের বেশি ক্ষতি হবে।