Image description

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরগরম ময়মনসিংহের রাজনীতির মাঠ। জেলার ১১টি আসনের মধ্যে গত পর্বে দুটি ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া) এবং ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর ও তারাকান্দা) আসনের নির্বাচনি আবহের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ পর্বে রয়েছে জেলার পাঁচটি আসনের খবর। এগুলো হলো ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) ৪ (সদর), ৫ (মুক্তাগাছা), ৬ (ফুলবাড়ীয়া) ও ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের চিত্র।

আসনগুলোর ভোটের মাঠ গরম করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা অন্য ইসলামি দলের নেতারা জনতার প্রত্যাশা সঞ্চয় করছেন। সব দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ, তৃণমূলে সভা-সমাবেশ আর ভোটারের দোরগোড়ায় যাওয়া-আসার মধ্য দিয়ে ব্যস্ততায় দিন পার করছেন।

এই আসনে বিএনপির জন্য ফ্যাক্টর হবে সঠিক প্রার্থী নির্বাচন এবং অন্তর্কোন্দল সমাধান করা। অন্যদিকে বিএনপির পরই সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী জামায়াত। দল ঘোষিত একক প্রার্থী নিয়ে প্রচারে নির্ভার তারা। এ কারণে জনমুখী কর্মকাণ্ড হাতে নিয়ে সামনে এগোচ্ছে জামায়াত।

ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর)

গৌরীপুরকেন্দ্রিক এই আসনের সীমানা এখন পুরোপুরি একক উপজেলাভিত্তিক; ২০০৮ ও ২০১৪ সালে সীমা পুনর্নির্ধারণের পর আগের পার্শ্ববর্তী উপজেলার ইউনিয়নগুলো বাদ পড়েছে। বর্তমানে এ আসনের ভোটারদের মধ্যে প্রার্থী নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও তর্কবিতর্ক চলছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে দুর্দিনে দলের কর্মসূচিতে মাঠে থাকা অ্যাডভোকেট নূরুল হক এখন আলোচনার কেন্দ্রে। এই আসনে সম্ভাব্যদের তালিকায় ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইন ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণের নামও শোনা যাচ্ছে।

এদিকে জামায়াতে ইসলামী আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের উপজেলা আমির মাওলানা বদরুজ্জামানকে প্রার্থী ঘোষণা করে আগেভাগেই গণসংযোগে নেমেছে।

আসনটিতে বিএনপির রাজনৈতিক সমীকরণে এগিয়ে অ্যাডভোকেট নূরুল হক। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিতে ভূমিকা রাখেন তিনি। আইনের টেবিল থেকে রাজপথে আলাদা পরিচিতি রয়েছে তার।

অন্যদিকে গৌরীপুর বিএনপির রাজনীতিতে ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল ও আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণকে ঘিরে সমালোচনা দীর্ঘদিনের। স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার জেরে ইকবালকে একসময় দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। স্থানীয়রা জানান, ইকবাল দীর্ঘ সময় ঢাকাতেই বসবাস করেন।

হিরণকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের অভিযোগ, তিনি ‘গায়ের জোরে’ রাজনীতি করেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চললেও নিজ দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রয়াত উপজেলা বিএনপি সভাপতি মকবুল হোসেন বকুলের ওপর হামলা মামলায় তাকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছিল।

ময়মনসিংহ-৪ (সদর)

ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগের ভোটগুলো কোনদিকে যাবেÑতা নিয়েও দুশ্চিন্তায় জামায়াত-বিএনপি। তবে আওয়ামীদের ভোটের চিন্তা বাদ দিয়েই বিএনপি ও জামায়াত এই আসনে মাঠ পর্যায়ের জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে তুলেছে।

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ। দীর্ঘদিন ধরে দলের দায়িত্বশীল পদে থেকে ময়মনসিংহ অঞ্চলজুড়ে দলীয় তৎপরতা, আন্দোলন-সংগ্রাম এবং সাংগঠনিক কাজ পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।

তার পাশাপাশি আলোচনায় রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, যিনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে সক্রিয় এবং দলের কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ। তবে এজেডএম জাহিদ এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন কি নাÑতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ছাড়া দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার রোকনও এলাকার বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে নিজের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছেন। কঠিন সময়েও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো, রাজনৈতিক সততা ও আদর্শিক নিষ্ঠার কারণে তিনি ছাত্র-যুবসমাজের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।

গত এক যুগের বেশি সময় ধরে দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট ও দমন-পীড়নকালপর্বে রোকনুজ্জামান সরকার বারবার হয়রানির শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের শাসনামলে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে অসংখ্য মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা।

অন্যদিকে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হান্নান খানও বসে নেই। তিনি কেন্দ্রীয় কর্মসূচির আলোকে ইতোমধ্যে অনেক জনকল্যাণমূলক কাজ করে সাধারণ মানুষের ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তিনি ময়মনসিংহ বিভাগীয় টিমের দপ্তর ও মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বও পালন করছেন। তবে এত প্রার্থীর কারণে দলের অভ্যন্তরে ঐক্য ধরে রাখা এবং চূড়ান্ত মনোনয়নের পর সবাইকে একক নেতৃত্বের পেছনে ঐক্যবদ্ধ রাখা বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এদিকে জামায়াতে ইসলামী এবার সুসংগঠিতভাবে মাঠে নেমেছে। মহানগর জামায়াতের আমির কামরুল আহসান এমরুলের নেতৃত্বে সদ্য অনুষ্ঠিত কর্মিসম্মেলন দলটির সক্রিয়তা ও মাঠ পর্যায়ের প্রস্তুতির দিকেই ইঙ্গিত করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর কিছু নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে জামায়াতের ভোটব্যাংক এখনো উল্লেখযোগ্য এবং তারা নিজেদের কর্মিবাহিনীকে কাজে লাগিয়ে আরো প্রচার বাড়িয়েছেন।

গত এক বছর ধরে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও উপশহর এলাকায় তার নেতৃত্বে ধারাবাহিক দোয়া মাহফিল, সাংগঠনিক বৈঠক ও ধর্মীয় মূল্যবোধভিত্তিক সভার আয়োজন করে আসছে জামায়াত। ময়মনসিংহ সদরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দলটির সাবেক শিবির নেতা ও পেশাজীবীদের একটি সুসংগঠিত কাঠামো রয়েছে, যারা সোশ্যাল মিডিয়াতেও বেশ সক্রিয়। তারা এই আসনে ‘আদর্শিক নেতৃত্ব’ ও ‘ইসলামি কল্যাণ রাষ্ট্রের দর্শন’ নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে।

এই আসনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি), ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজসহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং আবাসিক এলাকার অবস্থান থাকায় এখানে তরুণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-কর্মচারী ভোটারের সংখ্যা অনেক। তাদের কাছে উন্নয়ন নয়, বরং কর্মসংস্থান, প্রযুক্তিনির্ভর সেবা, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব নগর ব্যবস্থা, গণপরিবহন এবং তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধাÑএসব বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ।

এ আসনে কে জয়ী হবেনÑতা নির্ভর করবে দলীয় ঐক্য, সঠিক প্রার্থী নির্বাচন, নগর ও গ্রামের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা এবং সবচেয়ে বড় কথা ভোটারদের মন জয় করার ওপর।

ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা)

মুক্তাগাছা আসনে প্রার্থিতা প্রত্যাশীদের মধ্যে জমে উঠেছে আলোচনা ও প্রস্তুতি। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, জাতীয় পার্টিসহ একাধিক দল এখন ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছে।

আসনটিতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে ইতোমধ্যে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. জাকির হোসেন বাবলু এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া হারুন।

স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, জাকির হোসেন বাবলু শুধু একজন সংগঠকই নন, বরং তিনি জেলার রাজনৈতিক নেতৃত্বে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন। ফ্যাসিবাদী সরকারের দমন-পীড়নের সময় তিনি ছিলেন নেতাকর্মীদের অবিচল সহযাত্রী। বিশেষ করে করোনাকালীন দুর্যোগে তিনি নিজের এলাকা ছাড়াও আশপাশের এলাকায় ব্যক্তিগত ও দলীয় উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী, ওষুধ, চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিয়ে মানবিক নেতৃত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি সমাজসেবায় সক্রিয় অংশগ্রহণ তাকে স্থানীয় জনমানুষের কাছে প্রিয় করে তুলেছে।

এদিকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। ইতোমধ্যে তিনি মুক্তাগাছায় গণসংযোগ ও মতবিনিময় করেছেন এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপি, ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন। দীর্ঘদিন ধরে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় এই তরুণ নেতা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং ছাত্ররাজনীতির সাংগঠনিক পুনর্জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষ করে ২০২৩ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তিনি পরীক্ষিত নেতায় পরিণত হন।

অন্যদিকে জাকারিয়া হারুন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও জনগণের ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন, যা তার জনপ্রিয়তার অন্যতম প্রমাণ। তবে ‘মিথ্যা মামলার’ মাধ্যমে তাকে ২০১৫ সালে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ মুক্তাগাছা আসনে দলের প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এলাকায় দলীয় কর্মসূচি, জনসম্পৃক্ত আলোচনা সভা এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে ত্রাণ বিতরণসহ মানবিক কার্যক্রমে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছেন।

মুফতি হাবিবুর রহমান খেলাফত মজলিসের পক্ষে প্রার্থী হতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। দলের কর্মীরা জানান, তার দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণমুখী রাজনীতির প্রতি অটল।

এদিকে আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে পারলে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নেবেন সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি। তবে আওয়ামী প্রভাব না থাকায় এবার মুক্তাগাছায় জাতীয় পার্টির করুণ পরিণতি হবে বলে ভোটারদের অভিমত।

ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়ীয়া)

ফুলবাড়ীয়ার রাজনীতির মাঠ গরম রাখছেন প্রার্থীরা। ভোটারের দরজায় দরজায় ছোটা, সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা।

জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যেই মনোনয়ন দিয়েছে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির, শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক অধ্যক্ষ মো. কামরুল হাসান মিলনকে। শিক্ষকতা পেশার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা, দক্ষতা ও স্বাস্থ্যকে রাজনীতির কেন্দ্রে আনতে চান তিনি।

অন্যদিকে বিএনপিতে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা দীর্ঘ। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আখতারুল আলম ফারুক মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তার সঙ্গে মনোনয়ন দৌড়ে আছেন মোহাম্মদ আব্দুল করিম সরকার, যিনি ছাত্রদল থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্যসেন হল ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদকসহ ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। দীর্ঘ সাংগঠনিক পথচলার সঙ্গে আন্দোলন, গ্রেপ্তার ও কারানির্যাতনের অভিজ্ঞতা তার পরিচয়ের অংশ।

এ ছাড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মামুনুর রশিদ মামুন এবং উন্নয়নের রূপকার খ্যাত প্রয়াত সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শামছউদ্দিন আহমেদের ছেলে তানভীর আহমেদ রানা মনোনয়ন পেতে আশাবাদী। পাশাপাশি আলোচনায় আছেন অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. সাইফুল ইসলাম বাদল এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মনিরুল ইসলাম আখন্দ।

মাঠ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, গত ১৫ বছর মানুষ ইচ্ছেমতো ভোট দিতে পারেনি, পছন্দের জনপ্রতিনিধি বেছে নেওয়ার সুযোগও ছিল না। এখন পরিস্থিতি বদলেছে, স্বৈরাচারমুক্ত প্রেক্ষাপটে ভোট নিয়ে সাধারণ ভোটারের আগ্রহ দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। এই স্পেসকে কাজে লাগাতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রচারকাজ বাড়িয়েছেন।

এরই মধ্যে স্থানীয় বিএনপির একাংশ সংগঠনের শৃঙ্খলা নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছেন। গত ৪ আগস্ট রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতারুল আলম ফারুকের বিরুদ্ধে কমিটি গঠনে অনিয়ম, বিতর্কিত ব্যক্তিদের পদায়ন, চাঁদাবাজি ও দখলবাণিজ্যের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন ফুলবাড়ীয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য মো. সাইদুর রহমান। অভিযোগে বলা হয়, ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট গঠিত আহ্বায়ক কমিটির পর থেকে তিনি পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে একটি সভাও করতে পারেননি; ইউনিয়ন-ওয়ার্ডেও কমিটি হয়নি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরো বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

বিএনপিতে এসব টানাপোড়েনের বিপরীতে জামায়াতের জন্য মাঠ অনেকটা সহজ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার ও সচেতন নাগরিকরা।

ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল)

আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তবে এখনো বিএনপির তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রার্থী ঘোষিত হয়নি। তবুও ত্রিশালে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের অবস্থান জানান দিতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।

ত্রিশাল আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন। তিনি ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। তবে বিজয়ী হতে পারেননি। দলের দুঃসময়ে তৃণমূলে সক্রিয় থাকার কারণে তাকে ঘিরে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। লিটনের সমর্থকরা মনে করেন, তিনি মনোনয়ন পেলে এবারের নির্বাচনে আসনটি বিএনপির ঘরে তুলতে পারবেন।

অন্যদিকে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীনও মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পেলেও শেষ মুহূর্তে সেটি পরিবর্তন করে লিটনকে দেওয়া হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও এবারের নির্বাচনে আবারও মাঠে সক্রিয় তিনি। নিয়মিত মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন এবং দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।

ময়মনসিংহ মহানগরের নায়েবে আমির আসাদুজ্জামান সোহেলকে এ আসনের জন্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ইতোমধ্যে উপজেলার সব ইউনিয়নে গণসংযোগ চালাচ্ছেন সোহেল। ভোটারদের মন জয় করতে প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।

অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ত্রিশাল উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মো. ইব্রাহিম খলিল উল্লাহকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলে সক্রিয় রয়েছেন এবং সাধারণ মানুষের দোয়া ও সমর্থন চেয়ে ভোটের মাঠে রয়েছেন।

স্থানীয় নেতাদের মতে, লিটনের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস, ত্যাগ এবং চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে অবদানের কারণে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে দল উপকৃত হবে। অন্যদিকে জয়নাল আবেদীন জনপ্রিয় স্থানীয় রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রাখেন বলে জানান তার সমর্থকরা। তবে ত্রিশালে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়নের জন্য প্রবল প্রতিযোগিতায় রয়েছেন। জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনও তাদের অবস্থান জানান দিতে পুরোদমে মাঠে রয়েছে।