Image description

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খালেদ মাসুদ তালুকদার সোহেলের নিজের স্বীকারোক্তিমূলক একটি চাঁদাবাজির অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন পেইজ ও প্রোফাইলে অডিও রেকর্ডটি পোস্ট করলে মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

খালেদ মাসুদ তালুকদার সোহেলের এমন কাণ্ডে তীব্র সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে মাদারগঞ্জ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যেও।  

পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খালেদ মাসুদ তালুকদার সোহেলের বাড়ি মাদারগঞ্জ উপজেলার চাঁদপুর গ্রামে। তিনি পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আশরাফুর রহমানের ভগ্নিপতি। এছাড়াও তিনি মাদারগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর।

মাদারগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খালেদ মাসুদ তালুকদার সোহেলের সেই ভাইরাল হওয়া ৬ মিনিট ১০ সেকেন্ড অডিওতে ৩-৪ জনের কথোপকথন শোনা যায়।

কথোপকথনটি তুলে ধরা হলো-

‘এক ব্যবসা থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যে ৬ লাখ টাকা দিছে। আর তাছাড়া প্রতি মাসে ১ লাখ করে টাকা দেয়।’ এদিকে আরেকজন বলে ওঠেন- ‘তুমি তো ডিআইজির নামসহ পচায় ফেলছো। এর উত্তরে বিএনপি নেতা খালেদ মাসুদ তালুকদার সোহেল বলেন, ‘ডিআইজির নাম কইয়াই তো খাই আমি।’

এরপর হাসি তামাশা করে বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘আমি পৌর বিএনপির সেক্রেটারি আর ডিআইজির বইনতা, আমি খাব না তাইলে কেরা খাইব? এখন অনেকেই এসে বলে ভাই এইল্যা দেইখেন, তারপর আরেকজন ২ লাখ টাকা দিয়ে গেছে দেখবার জন্য, আমি দেখলাম। আমার ২ লাখ টাকা হজম হলো না?’

এদিকে তার এমন কথাতে আরেকজন বলে ওঠেন, ‘তুমি পৌর বিএনপির সেক্রেটারি, তুমি খাও এটা কি মানুষে জানে না কবার চাও? উত্তরে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমার অতহানি ক্ষমতা আছে তো তাই আমি খাই। তোমার নাই তাই তুমি খাবার পাওনা।’

হাসি-আড্ডার মধ্যে তিনি আবারও বলে ওঠেন, ‘ভাই আমার কি দোষ, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে ওসি আসছে, বলে ভাই ২ লাখ টাকা থাকলো একটু দেইখেন। আমি ২ লাখ টাকা নিয়ে ওর ভালো দেখলাম, শেষ। ওসিরা আমাক টাকা দিয়ে গেলে কি আমি না করমু?’

এদিকে হেসে আরেক নেতা বলে ওঠেন, ‘সুযোগ কি বার বার আসে? সে সময় বিএনপি নেতা সোহেল আবারো বলেন, ‘আমি হালাল করেই খাই। যে মনে করেন আমায় ৬ লাখ টাকা দিছে, সে প্রতি মাসে আমায় ১ লাখ করে টাকা দেয়, নইলে গাড়ি বন্ধ।’

‘ময়মনসিংহের সব বালু আমার এখান থাইকা নিয়ে যায়’। এ সময় আরেক জন বলে ওঠেন, ‘এগুলা সব বাবুল ভাই জানে?’ তিনি উত্তরে রাগান্বিত হয়ে বলেন, ‘বাবুল জানুক গা, বাবুলের থাইকা বাবুলের বাপ জানুক গা, তা আমার কী?  আমি আমার হেডামে চলি। আমি বাবুলের হেডামে কি আটকায় আছি? আমার ক্ষমতায় আমি আটকায় আছি। আমার নাম কইয়া চাঁন্দা তুলবার গেছিল ৩টারে আটকায় থুইছি জেলখানার মধ্যে। আমার ক্ষমতা আছে, আমি আটকামু না কি করমু? আজ ক্ষমতা আছে আজ দেখামু, কাল থাকব না কাল দেখামু না।’

অডিওতে বিএনপি নেতা সোহেলের কন্ঠে আরও শোনা যায়- ‘খামুই তো।’ এদিকে আরেক জন বলে ওঠেন, ‘আপনি তো সোহেল, একটা সংগঠনের সেক্রেটারি। উত্তরে তিনি বলেন, ‘বহিষ্কার করে দাও। ক্ষ্যামতা থাকলে চাঁন্দাবাজি করবার লাগছে, ধান্দাবাজি করবার লাগছে বলে বহিষ্কার করে দাও।’ আরেকজন বলেন, ‘সেদিন আমাগোরে মুখলেসে ধরছে, বলে সোহেলের নামে তো সেনাবাহিনীর কাছে থেকে আমাদের কাছে রিপোর্ট আইছে।’ পরে বিএনপি নেতা উত্তর দিয়ে বলেন, ‘কই সেনাবাহিনী তো আমাক কোনো দিন ডাকে না। আমার বিরুদ্ধে সরাসরি সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ দিয়েনছে। কয়েকজনে দিছে, কই সেনাবাহিনী তো আমাক কোনোদিন ডাহে না।’

আরেকজনে বলে ওঠেন, ‘তুমি নিজেই স্বীকার করছ ভাই সব, এর জন্য ধন্যবাদ। এটা শুনেই বিএনপি নেতা সোহেল বলেন, ‘আমি ৫ লাখ টাকার গাড়িতে চড়ি, আপনি ঠাপুর পান না? (বোঝেন না?) ’
 
এ বিষয়ে মাদারগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খালেদ মাসুদ তালুকদার সোহেল বলেন, আপনারা তদন্ত করবেন। মানে যেগুলা বলছি এইগুলা কতটুকু সত্য এটা আপনারা তদন্ত করবেন। মূল বিষয় হলো আমাকে ফল্টে ফালানোর জন্য আমাদের পৌর বিএনপির সভাপতি গফুর সাব এগুলো ছড়াচ্ছে। উনি শুধু এমপি প্রার্থী বাবুল সাহেবের কাছে বিচার দেয়। তুমি মেলা ট্যাহা কামাই করো। অমুক খান থাইকা টাকা পাও। তমুকখান থাইকা টাকা পাও খালি এগুলা খুচায়। পরে একদিন আমারে ধরছে, পরিকল্পনা করেই সম্ভবত আর কি। পরে বলছি এই যে অমুক খান থাইকা টাকা দেয়, তমুক খান থাইকা টাকা দেয়, ঘাটায় ঘাটায় টাহা দেয়, এমনে টাহা দেয়, সেমনে টাহা দেয়। বলছি শালা আরও শুনুক, শুইনা বিচার দেকগা।

তিনি আরও বলেন, আমি সোহেল তালুকদার যদি কোনো অন্যায় করে থাকি আপনারা তদন্ত করবেন। বের করবেন সোহেল তালুকদার একটা অন্যায় করছে কিনা? দুর্নীতি করে কিনা? চাঁদাবাজি করে কিনা? কারো কাছ থাইকা টাকা নেয় কিনা? এটা আপনারা দেখবেন। 

মাদারগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মঞ্জুর কাদের বাবুল খান বলেন, বিষয়টি শুনেছি, বিষয়টি নিয়ে দলীয়ভাবে তদন্ত করা হবে। প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।