
আজ বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিশ্ববরেণ্য ও খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। ২০২৩ সালে আজকের এই দিনে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (সাবেক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বিএসএসএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট বিকালে বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়লে আল্লামা সাঈদীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে কাশিমপুর কারাগার থেকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাঁকে বিএসএসএমইউতে পাঠানো হয়। সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন আল্লামা সাঈদী।
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুবার্ষিকীতে এক আবেগঘন ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিক আবদুর রহিম। স্মৃতিচারণামূলক এই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘চোখের সামনে সেই দৃশ্য এখনো যেন ভাসছে। তিনি গাড়ি থেকে নামলেন। হাসলেন! সবাইকে সালাম দিলেন। পাশে থাকা দুই ব্যক্তির প্রশংসা করলেন। বললেন, এরা আমার জন্য যা করতেছে। সেই সময় আমি গাড়ির সামনে লেপটে বসে গেলাম। পেছন থেকে আমাকে পুলিশ টানা হেঁচড়া করতেছে। সেই অবস্থায়ও আমি মোবাইলের রেকর্ড বন্ধ করিনি। আলহামদুলিল্লাহ! মাত্র ৩০ সেকেন্ড সময় পেয়েছি। এর মধ্যে আল্লামার পবিত্র হাসি মাখা মুখের সালাম দেওয়া ভিডিও এবং ছবি সম্পূর্ণ হয়ে যায়। এরপর পুলিশ আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। অল্প সময় তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন বুঝতে পারেনি। আর সেই হাসিমাখা সালাম দেওয়া ভিডিও ও ছবি ইতিহাস হয়ে যাবে তা একদিন আগেও ধারণা করতে পারেনি।’
সাংবাদিক আবদুর রহিম আরও লিখেছেন, “অবশেষে ১৪ই আগস্ট তিনি দুনিয়ার সফর শেষ করেছেন। তাঁর লাশ নিয়ে অনেক নাটক হয়েছে যা খুব কাছ থেকে দেখেছি। সেদিন পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে যেভাবেই হোক পিজি হসপিটাল থেকে আগে তার লাশ বের করতে হবে। পরিবারের সাথে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক বসছে। একই সঙ্গে কাজ থেকে এও শুনতেছি, ভক্তরা যদি যদি লাশ রাতের মধ্যে বের করতে না দেয় তাহলে হেলিকপ্টারে নিয়ে হলেও লাশ নিয়ে যাওয়া হবে। পরিবারকে দিয়ে এর মধ্যে তারা একটি ধোঁকার জাল বিছায়। ঢাকার মধুবাগে পরিবারকে লাশ দেখানো হবে। সাথে এও পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যেকোনোভাবে যদি শুধু হসপিটাল থেকে লাশ বের করে ফেলা যায় তাহলে টান দিয়ে লাশের গাড়ি বাড়িতে নিয়ে রাতের মধ্যে দাফন করা হবে। ধারণা করছি পুলিশের এই জালে তখন পরিবার ও আল্লামার রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা রাজি হয়ে যায়। লাশ বের করা হয়। তখন মুহূর্তে একদল সাঈদী ভক্ত গাড়ির সামনে শুয়ে যায়। তারা স্লোগান দিতে থাকে, ‘ঢাকা, ঢাকা, ঢাকায় আল্লামার জানাজা হবে’।”
ফেসবুক পোস্টে সাংবাদিক আবদুর রহিম জানান, ‘এই পাগল ভক্তদের দলীয় নেতাকর্মীরা পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও সরাতে পারেনি। ধীরে ধীরে প্রায় ফজরের সময় হয়ে যায়। তখন পুলিশ সকল ধরনের নিয়ম ভেঙ্গে হসপিটালের ভেতরে গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে থাকে। অল্প সময়ের মধ্যে পিজি হসপিটাল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে পুরো হসপিটাল যেন কাঁপতে থাকে। অনেক রোগী অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওই সময় সবাই বের হতে পারলেও আমি আটকে যাই। যেই ভবনে আল্লামার লাশ ছিল সেই ভবনে তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলাম। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর তিনজন সাংবাদিক গিয়ে আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়।’