Image description

২০১৯ সালে সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হল সংসদ নির্বাচনে সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে ছাত্রলীগের পূর্ণ প্যানেল জয়ী হয়েছিল। সেই নির্বাচনে হলটির সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে মো. জুলিয়াস সিজার তালুকদার মোট ৮৯৫ ভোট পেয়ে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সেই জুলিয়াস সিজার তালুকদার এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

আজ বুধবার (১২ আগস্ট) দুপুরে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের প্রথম দিন তিনি এই পদের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। পরে ফেসবুকের এক পোস্টে জুলিয়াস সিজার তালুকদার সবার দোয়া, ভালোবাসা ও সমর্থন চেয়েছেন। পোস্টে তিনি লেখেন, ডাকসুর ভিপি পদপ্রার্থী। সবার দোয়া, ভালোবাসা ও সমর্থন চাই।

এদিকে, ২০১৯ সালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে হল সংসদের জয়ী হওয়া এই নেতা বর্তমানে ডাকসুতে নির্বাচন করা নিয়ে ফেসবুকে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা বলছে, ওই নির্বাচনের পর হলের ছাত্র ফরিদ হাসানকে মেরে রক্তাক্ত করার ঘটনায় তৎকালীন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে ওই হলে প্রতিবাদ করতে গেলে সিজারের অনুসারীরা ডিম নিক্ষেপ ও মারধর করেছিল। এছাড়াও সিজার ছাত্রলীগের নিপীড়নের সঙ্গেও বিভিন্ন সময় জড়িত ছিলেন। তবে তার দাবি, ২০১৯ সালের পর তিনি আর ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত নয়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চের প্রতিষ্ঠা করেন পরে। তবে ২০১৭ সালে তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের একটি পদে ছিলেন।

২০১৯ সালে ছাত্রদলের ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী ও বর্তমানে শাখা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মো. আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক ফেসবুকে লেখেন, ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে জিএস পদে (ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম আমি। তখন হল সংসদে স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে নির্বাচন করেছিল ফরিদ। ফরিদকে মেরে কানের পর্দা ফাটিয়ে দিয়েছিলো ছাত্রলীগ, তার নেতৃত্বে ছিল জুলিয়াস সিজার তালুকদার। এসএম হলে কৃত্রিম লাইন তৈরি করে ভোটদানে বাধা প্রদান করার অন্যতম কারিগর সিজার আমাকে এসএম হলের অভ্যন্তরে ঢুকতে বাঁধা প্রদান করে। একজন প্রার্থী হিসেবে প্রত্যেকটি ভোটকেন্দ্রে পর্যবেক্ষণের অধিকার আমার ছিল সেখানে যে সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে অধিকার হরণ করা হলো সে এবারের ডাকসুতে ভিপি পদে মনোনয়ন সংগ্রহ করছে।

ঢাবি ছাত্র ও বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ লিখেন, জুলিয়াস সিজার অনেক অনেক পাপ করেছে লীগের বিরোধিতার আগে। সে ছিল অবৈধ ডাকসু ইলেকশনের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের এজিএস। একজনকে মেরে রক্তাক্ত করেছিল হলে। তার প্রতিবাদ করতে গেলে নুর-আকতার-ইমি আপুসহ যার গিয়েছিলেন তাদেরকে মারধর ও ডিম নিক্ষেপ করছিল। তার ফৌজদারি অপরাধের বিচার চাই আগে,তারপর ইলেকশন করতে পারবে সে।

ঢাবির সাবেক ছাত্র তুহিন খান লেখেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও একাধিক সন্ত্রাসী হামলায় নেতৃত্ব দানকারী ডিম সিজার এবারের ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে মনোনয়ন ফর্ম তুলছে আজ। ঢাবি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন, সিজার যদি বিচার এড়ায়ে ডাকসু করতে পারে, তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচন করতে অসুবিধা কই?

জানতে চাইলে ডাকসুর ভিপি পদপ্রার্থী সিজার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ২০১৯ সালের নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে আমি নির্বাচিত হয়েছিলাম। যেটা সবাই জানেন। তবে এরপর নুরদের ওপর যে হামলার ঘটনা ঘটেছিল সেখানে আমার কোনো সংশ্লিষ্টরা নেই। আমার অনুসারীও জড়িত ছিল না।

তিনি বলেন, এ ঘটনার পর থানায় মামলা-অভিযোগপত্রে আমার কোনো নাম নেই। এমনকি তৎকালীন ঢাবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনবার তদন্ত কমিটি আমাকে ডেকেছিল। কিন্তু আমার কোনো সম্পৃক্ততা পায়নি। এখন অনেকে সমালোচনা করে বলেন, আমি প্রত্যক্ষ নয় পরোক্ষভাবে এই ঘটনায় জড়িত ছিলাম।

ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৯ সালের পর আমি আর ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত নেই। এরপর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ প্রতিষ্ঠা করি এবং সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে কাজ করি। তবে তার আগে ২০১৭ সালে হলের ছাত্রলীগের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলাম।