
ঝালকাঠির রাজাপুরে একই সময় ও একই স্থানে বিএনপি ও যুবদলের দুই গ্রুপ পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। উপজেলা বিএনপির একাংশ জুলাই গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আগামীকাল ১৩ আগস্ট বুধবার বিকেলে উপজেলা মার্কেট চত্বরে র্যালি ও সমাবেশের আয়োজন করেছে। একই সময়ে উপজেলা চত্বরে “জুলাই/২৪ বিপ্লব” কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে উপজেলা যুবদল। এই দুই গ্রুপের একই স্থানে একই সময় সমাবেশ করার বিষয়টি চিঠি দিয়ে রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহুল চন্দ ও রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইসমাইল হোসেনকে জানালেও তারা নিরব রয়েছেন।
উপজেলা বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক ডেপুটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম। প্রধান বক্তা থাকবেন দলের নির্বাহী কমিটির সহ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এইচ. এম. সাইফ আলী খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঝালকাঠি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ হোসেন ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদৎ হোসেন।
অপরদিকে উপজেলা যুবদলের সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন ঝালকাঠি জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মো. রবিউল ইসলাম তুহিন। প্রধান বক্তা হবেন জেলা যুবদলের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. আনিসুর রহমান আনিস। সভাপতিত্ব করবেন উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. মাছুম বিল্লাহ পারভেজ এবং সঞ্চালনায় থাকবেন উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব সৈয়দ নাজমুল হক।
একই সময় ও স্থানে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাক দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শুরু হয়েছে তীব্র বাকযুদ্ধ। দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা নানা মন্তব্য ও পোস্টে একে অপরকে আক্রমণ করছেন। বিএনপির কিছু নেতা অভিযোগ করে বলছেন, আওয়ামী লীগের আমলে যেভাবে তারা বিএনপির কর্মসূচির সময় একই স্থানে সমাবেশ দিতেন, এখন যুবদলও সেই কৌশল নিচ্ছে।
উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা প্রথমে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছি। পরে শুনলাম একই স্থানে যুবদলও অনুমতি পেয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, মো. জাকির হোসেন মোল্লা যিনি যুবদলের সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক হয়ে চিঠিতে ঘোষণা দিয়েছে। তিনি একই সঙ্গে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও আছেন—এটা কীভাবে সম্ভব?”
যুবদল নেতা জাকির হোসেন মোল্লার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তালুকদার আবুল কালাম আজাদ সমাবেশের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তাকে কেউ বিষয়টি জানায়নি।
এ বিষয়ে রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহুল চন্দ বলেন, ‘কেউ আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নেয়নি। শুধু অবহিত করেছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দেখা হবে।’
রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইসমাইল হোসেন দাবি করেন, জেলা প্রশাসক ও ইউএনও’র নির্দেশে দুই গ্রুপকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. আশরাফুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনকে কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। কেন অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা তাদের কাছেই জানতে হবে।’
স্থানীয় রাজনৈতিক মহল আশঙ্কা করছে, ‘একই স্থানে একই সময়ে সমাবেশের কারণে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে দাঙ্গা বা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে।’