
বিগত ১৬ বছর গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী সবাই ‘জাতীয় বীর’ বলে গণ্য হবেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন এবং বিগত ১৬ বছরের স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে যারা প্রাণ দিয়েছেন, গুম হয়েছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন কিংবা স্থায়ী অঙ্গহানি বরণ করেছেন-তারা সবাই ‘জাতীয় বীর’।
রোববার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা সহায়তা জন্য এই কর্মসূচির আয়োজন করে সংগঠনটি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, শুধুমাত্র ২৪-এর জুলাই আগস্টের ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের ৩৬ দিনেই একটি ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে তা নয়। এই রক্তের সিঁড়ি তৈরি হয়েছে দীর্ঘ ১৬ বছরের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।
মানবাধিকার সংস্থার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, পুলিশি নির্যাতনসহ নানা প্রতিহিংসামূলক হামলায় ৭ হাজার ১৮৮ জন ভুক্তভোগী। এর মধ্যে ৭০৯ জন গুমের শিকার, তার মধ্যে অনেকে এখনো ফিরে আসেনি, আমার মত সৌভাগ্যবান নয়। ২ হাজার ৬৯৩ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার। জুলাই আন্দোলনে ১৪শ’র বেশি হত্যা, ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ গুরুতর আহত এবং প্রায় ৫ শতাধিক ব্যক্তি দুই চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন।
দুঃখ প্রকাশ করে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির নেতা বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এখনো সঠিক তালিকা প্রণয়ন করতে পারেননি। হাসপাতালের রেজিস্টার গায়েব, গণকবরের সন্ধান অজানা—তবুও উদ্যোগ নিতে হবে। শহীদ ও আহতদের প্রতি রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলোর দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাদের জন্য রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও দলীয়ভাবে আমাদের করণীয় রয়েছে এবং তা আমরা পালন করব,ইনশাল্লাহ।
মানসিক ও দৃষ্টিভঙ্গির সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তন করলেই হবে না; যারা রাষ্ট্র চালাবে এবং যারা নাগরিক—উভয়ের মানসিক পরিবর্তন জরুরি। শুধু সরকারের কাছ থেকে সব আশা না করে, জনগণকেও দেশের জন্য কী করা যায় তা ভাবতে হবে। স্বাধীনতায় শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন এবং ২০২৪ সালের আন্দোলনের শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে হলে মানবিক, কল্যাণমুখী ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়তে হবে। যারা আজ অন্ধত্ব বরণ করেছেন বা অঙ্গ হারিয়েছেন, তাদের সন্তানরা যেন কাঙ্ক্ষিত সমাজ ও রাষ্ট্র দেখতে পায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যতে যেন আর কোনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনর্জন্ম না হয়, সেজন্য রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানসিক সংস্কার অব্যাহত রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর, আমরা বিএনপি পরিবারে আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমন, উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল প্রমুখ।