
আগামী নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করলে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, সেগুলো নেতাকর্মীদের সামনে তুলে ধরেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রোববার বিকালে রাজশাহী মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামী নির্বাচনে দেশের অধিকাংশ জনগণের সমর্থন ধানের শীষ তথা বিএনপি পাবে। তারপর আমাদের সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের দায়িত্ব দেব, তারা দলের নীতি আদর্শকে জনগণের কাছে নিয়ে যাবে। আমরা সরকার গঠনে সক্ষম হলে আমাদের দেশকে গড়তে হবে। বিগত স্বৈরাচারী সরকার শিক্ষা, বিচার, আইনশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে তাদের নিজেদের স্বার্থে। আগামী নির্বাচনে আমরা জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করলে আমাদের এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে। যুবক-বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশে এবং বিদেশে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। সর্বস্তরে ভালো শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। এই শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন
উদারতা বিএনপির সবচেয়ে বড় গুণ: মঈন খান
উদারতা বিএনপির সবচেয়ে বড় গুণ: মঈন খান
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে দেশের জনগণ সমর্থন দেবেন। জনগণের সমর্থনে সরকার গঠনে সক্ষম হলে দেশকে গড়তে হবে। অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। কৃষি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব সেক্টরকে পুনর্গঠন করতে হবে। সবকিছু ঢেলে সাজাতে হবে। এজন্য বিএনপির সব নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জুলাইয়ে জনগণ যখন আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছে, সর্বস্তরের সব শ্রেণিপেশার মানুষ তখন রাজনৈতিক দলের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে রাজপথে নেমেছিল- সে সময় স্বৈরাচার হাজার হাজার মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে।
৩০ হাজারের বেশি মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন সারা জীবনের জন্য। কারও হাত নষ্ট, কারও পা নষ্ট হয়ে গেছে। তবে আমরা সফল হয়েছি। এদেশ থেকে স্বৈরাচারকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়েছি।
‘বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিএনপি এবং আরও অনেকগুলো গণতান্ত্রিক দল স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রাজপথে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার অব্যাহত রাখার জন্য আন্দোলন করেছিল।’
‘স্বৈরাচার জনগণের আন্দোলনের মুখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে, তারা এক যুগরেও বেশি সময় ক্ষমতা দখল করে ছিল’ উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, কীভাবে তারা গুম, খুন ও হত্যা শুরু করেছিল। আমরা দেখেছি বিরোধী মতের মানুষের বিরুদ্ধে কীভাবে মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। এ সম্মেলনে যারা উপস্থিত তাদের অধিকাংশ মানুষ মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়েছেন। শুধু বিএনপি নয়, বিএনপির বাইরেও বহু রাজনৈতিক দল আমাদের সঙ্গে ছিল, ছোট-বড় যেমন দল হোক না কেন, যারা মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সোচ্চার ছিল, প্রত্যেকের বিরুদ্ধে তারা মিথ্যা মামলা দিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, শুধু রাজনৈতিক দল নয়, রাজনীতির বাইরেও বহু সাধারণ মানুষ যারা বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও আমরা দেখেছি কীভাবে অত্যাচারের স্ট্রিম রোলার চালানো হয়েছে। আমরা দেখেছি, সেই সময় কীভাবে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সেটি যেকোনো নির্বাচনই হোক, জাতীয় পর্যায়ে প্রতিটি নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ভেঙেচুরে দেওয়া হয়েছিল। বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনীতিকরণ করে ধ্বংস করা হয়েছে। অর্থনীতি ধ্বংস করা হয়েছে। মেগা উন্নয়নের নামে মেগা দুর্নীতি করা হয়েছিল। কীভাবে অর্থ সম্পদ লুট করে পাচার করা হয়েছে তা আমরা দেখেছি।
এই নেতা বলেন, আমরা চেয়েছিলাম, আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষা করা। জনগণের শাসন, রাজনৈতিক অধিকার আমাদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। মূল উপায় হলো, জনগণের সরাসরি ভোট প্রয়োগের ব্যবস্থা করা। সেই ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণ নির্ধারণ করবে, কে আগামী দিনে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করবে।
তারেক রহমান বলেন, সরকার সেই পথে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, আগামী রমজানের আগে দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের ‘প্রথম অধিকার’ বাস্তবায়িত হবে। এখন ভোট হলেই হবে না; ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করলেই হবে না- আজ যারা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী আছেন, আপনাদের মধ্যে যখন আমার কথা হয়, তখন একটি কথা আপনাদের কাছ থেকে শুনতে পাই- সেই কথাটি হচ্ছে, আপনাদের গ্রামে হোক পাড়ায় হোক, সাধারণ মানুষ আপনাদের কাছে জানতে চায়, দেশের ভবিষ্যৎ কী। বিএনপি আগামীতে কী করবে। কেন মানুষ জানতে চায়? কারণ, বাংলাদেশের জনগণ- বিএনপির ওপরে আস্থা রাখতে চায়। যেহেতু আপনি বিএনপির নেতা এবং কর্মী, তাই জনগণ আপনাদের কাছে জানতে চায় দেশের ভবিষ্যৎ কী হবে।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে ফেলেছে বিগত স্বৈরাচারী সরকার। স্বৈরাচারের সময় এমনভাবে স্বাস্থ্যব্যবস্থা সাজিয়েছিল, যাতে পার্শ্ববর্তী একটি দেশে গিয়ে সেবা নিতে বাধ্য হয়। এদেশে হাসপাতাল ধ্বংস করে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। চিকিৎসার নামে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে দিত। আমাদের নিজস্ব চিকিৎসক ও নার্স গড়ে তুলতে হবে। যাতে দেশের মানুষ এই দেশের হাসপাতালেই চিকিৎসা পায়।
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ ফারাক্কার কারণে পদ্মা নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। সুজলা-সুফলা পদ্মা নদীর পানির অভাবে মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে যাব। জাতিসংঘে যাব প্রয়োজন হলে। আমাদের পানির ব্যবস্থা করতে হবে। খালগুলো সংস্কার করতে হবে যেন তারা পানি নিয়ে আবার ঝামেলা করলেও এখানে পানি থাকে।
তারেক রহমান বলেন, সামনে অনেক কাজ। সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ আমাদের নিতে হবে। ছোট ছোট কলকারখানা গড়ে তুলতে হবে। উৎপাদিত দ্রব্য দেশে ব্যবহারের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা দেখছি বিচার ব্যবস্থার জটিলতা, দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বছরের পর বছর মানুষকে কোর্টের বারান্দায় ঘুরতে হয়। আমাদের এ ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। যাতে মানুষ দ্রুত বিচার পায়। এ রকম আরও বহু চ্যালেঞ্জ আছে। কৃষির চ্যালেঞ্জ আছে। সঠিক সময়ে সার পৌঁছাতে হবে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। মানুষ যাতে স্বল্পমূল্যে পণ্য পায়, একইসঙ্গে কৃষকরা যেন সঠিক মূল্য পায়।
তারেক রহমান বলেন, এদেশকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। মানুষ এখন বিশ্বাস করে একমাত্র বিএনপির পক্ষেই সম্ভব ধীরে ধীরে এদেশকে গড়ে তোলা। মুরুব্বিদের নিশ্চয় খেয়াল আছে- ১৯৭৪ সালে কীভাবে দূর্ভিক্ষ ছেয়ে গিয়েছিল। পরে শহীদ জিয়ার আমলে খাদ্য উৎপাদন করার মাধ্যমে খাদ্য রপ্তানি করা হয়েছে। বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় দেশ। খালেদা জিয়ার সময় মেয়েদের শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে বিনামূল্যে করা হয়েছিল। আজ দেশের মানুষ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু এ চ্যালেঞ্জগুলো যদি মোকাবিলা করতে হয়, তাহলে আমাদের প্রথমে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকি, তাহলে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারব না। জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের।