Image description

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ১৭টি আবাসিক হলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

 

এদিকে ক্যাম্পাসের অধিকাংশ রাজনৈতিক সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলভিত্তিক রাজনীতি না করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। হলে ছাত্ররাজনীতি শুরু হলে পূর্বের মতো গণরুম, গেস্টরুম ফিরে আসবে বলে ধারণা করছেন অনেকেই৷ 

 

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ছাত্রদল হলে রাজনৈতিক কমিটি গঠন করে দীর্ঘদিনের শিক্ষার্থীদের প্রাণের চাওয়াকে উপেক্ষা করেছে। এতে গণরুম, গেস্টরুম কালচার ফিরে আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থি। ছাত্রদলের এ সিদ্ধান্ত ফ্যাসিবাদী কাঠামোকে পুনর্জীবিত করার চেষ্টা বলে মনে হয়, যা সব ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগঠন ও শিক্ষার্থীকে হতাশ করেছে।

 

জাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন, রাজনৈতিক সংগঠনগুলো রাজনীতি করুক, কিন্তু হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি রাজনীতি না চায়, তাহলে আমরা হলের রাজনীতি করব না। ছাত্রদলকেও বলব, শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতি গুরুত্ব দিতে।

 

গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা। গণঅভ্যুত্থানের পরও আমরা এ দাবিতে আন্দোলন করেছি। হলে ছাত্ররাজনীতি শুরু হলে আগের মতো গণরুম, গেস্টরুম ফিরে আসবে, যা আমরা চাই না। আমরা চাই হলে রাজনীতি বন্ধ হোক।

 

তবে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের (একাংশ) সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ইমন এ বিষয়ে বলেন, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক মতাদর্শের চর্চা থাকা উচিত। রাজনীতি এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ আলাদা বিষয়। হলে আলাদা রেগুলেশন এনে তা প্রয়োগ করলে অপব্যবহার হতে পারে, ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। ছাত্রলীগের কোনো হল কমিটি ছিল না, তবুও গণরুম ও গেস্টরুম কালচার কমেনি। ছাত্রদলের হল কমিটির পর যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তা রাজনৈতিক সচেতনতা বহির্ভূত প্রতিক্রিয়া বলে মনে করছি, বরং বর্তমান শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত কমিটিগুলো ভালো রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা বলে মনে করি।

 

ইতিহাস বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ বলেন, বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, হল পলিটিক্সের মাধ্যমে ছাত্রলীগ কিভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আমরা চাই না, পুরনো সেই কালচার ফিরে আসুক। তাই হলে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে এবং দ্রুত সব রাজনৈতিক দলের ঘোষিত কমিটিগুলো বাতিল করতে হবে।

 

হল কমিটি ঘোষণার ব্যাপারে জাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জাহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে রাজনীতি করি। আগের ধারার রাজনীতি বাদ দিয়ে নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করেছি। হল কমিটিগুলো মেজরিটি শিক্ষার্থীর মতামতের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে।

 

হলভিত্তিক রাজনীতি থাকবে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান বলেন, আমি চাই না গণরুম, গেস্টরুম কালচার আবার ফিরে আসুক। আমি প্রশাসনিক মিটিং ডেকেছি- সেখানে এ বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।