
বাংলা সাহিত্যের অবিস্মরণীয় উপন্যাস ‘খেলারাম খেলে যা’। সৈয়দ শামসুল হকের লেখা বইটি ছিল যৌনতা আর অশ্লীলতায় ঠাসা। উপন্যাসটি প্রকাশের পর সাহিত্যাঙ্গণে বিতর্কের ঝড় ওঠেছিল। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে যারা সাহিত্য চর্চা করেন এবং কবিতা-গল্প-উপস্যাস বই পড়েন তাদের বেশির ভাগই স্ত্রী-কন্যারা থাকায় ওই বইটি কিনে বাসায় নিতে পারেননি।
কিন্তু রগরগে কাহিনীর ওই উপন্যাসটি উচ্চতর সাহিত্যকর্মের মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়। উত্তরাঞ্চলে জন্ম নেয়া কবি সৈয়দ শামসুল হকের ‘খেলারাম খেলে যা’ উপন্যাসেরস মতোই উত্তরাঞ্চলে জন্ম নেয়া আরেক নেতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টির ভিতরে খেলারামরা নতুন খেলা শুরু করেছেন। সৈয়দ হকের ওই উপন্যাস যেমন দেশের সাহিত্যাঙ্গণে যায়গা করে নিলেও পাঠকদের গ্রহণযোগ্যতা পায়নি; তেমনি এরশাদের জাতীয় পার্টি দেশের রাজনীতিতে যায়গা করে দিলেও জনগণের দল হয়ে উঠতে পারেনি। জন্মের পর থেকেই দলটি জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সরকারে গেছে, সংসদে গেছে এবং মন্ত্রী-এমপি হয়ে ক্ষমতার হালুয়ারুটি খেলেও জনগণের মন জয় করতে পারেনি। বিশেষ করে বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে দলটি দিল্লির নীল নকশায় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে সরকারে এবং বিরোধী দলে হালুয়ারুটি খেয়েছে। তবে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন দলটি দেশে প্রত্যেরটি জাতীয় নির্বাচনের আগে হিন্দী সিনেমার নায়িকা যেমন নিজেদের স্কা-াল ছড়িয়ে সিনেমায় দর্শন বাড়ায় তেমনি কৌশল নিয়ে বিতর্কে জড়ায় দলটি। ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় থেকে একই চিত্র দেখা যাচ্ছে দলটি। এবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী রমজানের আগে ত্রায়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচন কশিমন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে দল গোছাচ্ছে। এ অবস্থায় গণধিকৃত জাতীয় পার্টির ভিতরে খেলারাম নেতারা ‘খেলারাম খেলে যা’ উপন্যাসের মতোই খেলা শুরু করেছে। শুধু তাই নয় খেলারামরা মুম্বাই নায়িকাদের মতো কিছু অর্থপাতি খরচ করে গণমাধ্যমে নিজেদের খবর প্রচার করছে। দলটির সর্বশেষ খবর হচ্ছে চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে বাদ দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার হালুয়াখাওয়া নেতারা কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করেছে। গতকাল শনিবার গুলশানের ইমানুয়েল পার্টি সেন্টারে জাপার দশম জাতীয় কাউন্সিলে চেয়ারম্যান পদে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব পদে এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদার এবং সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান পদে কাজী ফিরোজ রশীদ নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে নির্বাচিত করা হয়েছে। নির্বাচিত নেতারা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন।
দলের প্রতিষ্ঠাতা এরশাদ পরিবারকে বাদ দিয়ে যে খেলারামরা কমিউনিস্টি সেক্টরে কাউন্সিল করে নতুন কমিটি গঠন করেন তাদের সকলেই মাফিয়ানেত্রী হাসিনার দোসর।২০১৪ সালের প্রার্থী ও ভোটার বিহীন নির্বাচন, ২০১৮ সালের রাতের নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনে এরা আসন ভাগাভাগি করে এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। যারা এমপি-মন্ত্রী হতে পারেননি তারা নানাভাবে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট খেয়েছেন। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে রাজনীতিরি ডাইনিবুড়ি হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিলেও এরা এখনো দেশে রয়েছেন। হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপিদের মতো এদের অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। হাসিনা যেমন ভারতের নাচের পুতুল হিসেবে ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলো জাপার এই খেলারামরাও দিল্লির অনুকম্পা আর ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর প্রেসক্রিপসনে নিজেরা পরিচালিত হয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন পদের ব্যাক্তিবর্গকে নানাভাবে ম্যানেজ করে এরা প্রকাশ্যে রাজনীতি করছেন। হাসিনার অলিগার্ক অর্ধশত সাবেক মন্ত্রী-এমপিকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের বিচার চলছে। অথচ হাসিনার দাসদাসী হিসেবে পরিচিত জাপার এই নেতাদের গ্রেফতার করা হয়নি। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক চলছে। নেটিজেনদের অনেকেই বলছেন, টাকা খরচ করেই এরা গ্রেফতার এড়িয়ে দিল্লির প্রেসক্রিপসনে নতুন কমিটি গঠন করছেন। তবে এটা ঠিক সৈয়দ সামসুল হকের ‘খেলারাম খেলে যা’ উপন্যাস যেমন পাঠকরা বাসাবাড়িতে নিতে পারতেন না; তেমনি জাতীয় পার্টির রাজনীতি করে সমাজে পরিচয় দেয়া যেতো না।
এদিকে জিএম কাদের ঘোষিত দলের মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী গতকাল রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় তরুণ পার্টির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বলেছেন, ইতিহাস বলে মূল স্রোতের বাইরে গিয়ে যারা জাতীয় পার্টিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চেয়েছে, তারাই নিশ্চিহ্ন হয়েছেন। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নেতৃত্বে তৃণমূল নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছে। জিএম কাদেরের নেতৃত্বেই জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। জাতীয় পার্টি হবে এদেশের জনতার ভরসার ঠিকানা।
ষড়যন্ত্রে বিভ্রান্ত না হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে তীব্র রাজনৈতিক শূন্যতা বিরাজমান। দেশ পরিচালনায় অভিজ্ঞ রাজনীতিবীদদের দূরে রাখা হচ্ছে। ফলে দেশ, রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসন দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে। দেশের ঐক্য, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখ-তা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। জাতীয় পার্টি খোলনলচে বদলে দেশের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।