Image description

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭০ সদস্য বিশিষ্ট বর্ধিত কমিটি এবং ১৭টি হলে ৮৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেছে ছাত্রদল। গতকাল শুক্রবার (৮ আগস্ট) কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ৩৭০ সদস্যবিশিষ্ট বর্ধিত কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া দুজনকে দাপ্তরিক দায়িত্ব দেওয়া হয়।

একই দিনে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর ও সদস্যসচিব ওয়াসিম আহমেদ অনীক স্বাক্ষরিত পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে ৬টি ছাত্রী হল ও ১১টি ছাত্র হলসহ মোট ১৭টি আবাসিক হল, একটি অনুষদসহ ৮৮ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।

গঠিত কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

অনুমোদিত কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, হত্যা মামলার ৩ পলাতক আসামি, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন সময় মাদক ও ছিনতাইয়ের কারণে বহিষ্কার হওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই স্থান পেয়েছেন এসব কমিটিতে। 

এতে দেখা যায়, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আলোচিত নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম মোল্লা হত্যা মামলার ৩ পলাতক আসামি পদ পেয়েছেন। ওই ঘটনায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর হত্যা মামলা দায়ের করে।

এ ঘটনায় তাদের ৬ মাসের জন্য বহিষ্কারও করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা যায়, শামীম মোল্লা হত্যার ঘটনার পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রদল এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল- অভিযুক্তরা সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তবে, মামলার ৮ আসামির মধ্যে হামিদুল্লাহ সালমান, রাজু আহমেদ ও মোহাম্মদ রাজন মিয়া ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। এর মধ্যে হামিদুল্লাহ সালমান বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সভাপতি ও বর্ধিত কমিটির সদস্য, রাজু আহমেদ বর্ধিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং মোহাম্মদ রাজন মিয়া আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হয়েছেন।

 

পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আনিসুর রহমান বাপ্পী জানান, শামীম মোল্লা হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং একজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। গ্রেপ্তাররা হলেন, জাবি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান রায়হান (২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪) এবং সাইফুল ইসলাম ভুইয়া (২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪)। এ ছাড়া আতিক নামের আরো একজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। বাকিরা এখনো পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

 

হত্যা মামলার আসামিদের পদ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর বলেন, ‘তিনজনের দীর্ঘদিনের ত্যাগ, শ্রম ও মেধাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে।

এদিকে জাবির রোকেয়া হলের সভাপতির পদ পাওয়া কাজী মৌসুমী আফরোজ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ক্যাম্পাসে নানা সময় ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ফজিলাতুন্নেছা হলের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া সাবরিনা সুলতানা সুরভী, ২১ নং হলের সহসভাপতি পদ পাওয়া সাইদুর রহমান সীমান্তও অংশ নিয়েছিলেন বিভিন্ন মিটিং-মিছিলে। সালাম-বরকত হলের সভাপতি সাইদুল ইসলাম ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের বিগত কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ছিলেন। 

 

বর্ধিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়কের পদ পাওয়া মো. শাকুর বাপ্পী জড়িত ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে। থার্টি ফাস্ট নাইটে মাদকসহ আটক হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হওয়া শিপন হোসাইন ও সতীর্থ বিশ্বাস বাঁধন সদস্য হিসেবে স্থান পেয়েছেন বর্ধিত কমিটিতে। গত বছরের ২৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসা স্কুল শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগে বহিষ্কার হয়েছিলেন মো. ইমরান নাজিজ। তাকেও রাখা হয়েছে কমিটিতে। 

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, ‘যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করে কমিটি তৈরি করা হয়েছে। এরপরও বিতর্কিত অনেকে হয়তো রয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেলে আমরা অবশ্যই সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

 

এদিকে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা হল কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সংবাদ সম্মেলন করেছে। তারা বলেছেন, ‘হল কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে পুনরায় গণরুম, গেস্টরুম ও র‌্যাগিং কালচার ফিরে আসার আশঙ্কা রয়েছে।’ সংবাদ সম্মেলনে বাগছাস নেতারা হল কমিটি গঠনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

 

বাগছাস নেতারা বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ প্রতিটি ক্যাম্পাস ও হলে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, অবৈধভাবে সিট দখল, গণরুম, গেস্টরুম ও র‌্যাগিং কালচার প্রতিষ্ঠা করেছিল। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, সেখানে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রাণের চাওয়া ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল থেকে এই বর্বরতা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করা। কিন্তু জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল হলগুলোতে রাজনৈতিক কমিটি গঠন করে শিক্ষার্থীদের এই চাওয়াকে উপেক্ষা করেছে। আমরা মনে করি, এর ফলে হলগুলোতে আবার গণরুম, গেস্টরুম ও র‌্যাগিং কালচার ফিরে আসবে, যা জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের চেতনায় চরম বিশ্বাসঘাতকতা।’