
বাংলাদেশের আগামী পঞ্চাশ বছরের সাংস্কৃতিক, একাডেমিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব এক্স শিবির ঘরানার হাতে থাকবে—এমন মন্তব্য করেছেন লেখক ও বিশ্লেষক পিনাকী ভট্টাচার্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “এই প্রশ্নের উত্তর এখনই লেখা যায়: এটি থাকবে এক্স শিবিরের হাতে।”
তিনি বলেন, “যারা ভাবছে ভবিষ্যতের বাংলাদেশও বামঘরানার বুদ্ধিবৃত্তিক কাঠামোর হাতে বন্দি থাকবে, তারা ভীষণ ভুল করছে। সেই যুগ শেষ। এবার যে ধারা শুরু হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ এই প্রজন্ম ভারতমুখী নয়, আদর্শগতভাবে আপসকামী নয়, এবং তুলনামূলকভাবে সৎ।”
পিনাকী আরও দাবি করেন, “আগামী দিনের বাংলাদেশে শিবিরের রাজনৈতিক স্কুলিং রাজ করবে। যেমন একসময় ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ বা উদীচী তাদের সাংস্কৃতিক নেটওয়ার্ক ও ক্যাডারভিত্তিক গঠনের মাধ্যমে সিভিল সোসাইটি, মিডিয়া, একাডেমিয়া, এমনকি রাজনীতির শীর্ষস্তর পর্যন্ত অদৃশ্য প্রভাব বিস্তার করেছিল, তেমনি ভবিষ্যতে সেই জায়গা দখল করবে শিবির-স্কুলিং প্রজন্ম।”
তিনি বলেন, এই পরিবর্তন সরাসরি জামায়াতের নামে হবে না, ঠিক যেমন সিপিবি শক্তিশালী সংগঠন হয়েও জাতীয় রাজনীতিতে ক্ষমতার কেন্দ্রে যেতে পারেনি। তবে শিবির স্কুলিং পাওয়া প্রজন্ম সমাজের বিভিন্ন পেশাগত পরিসরে, নীতিনির্ধারণী কাঠামো ও রাজনৈতিক বলয়ে অদৃশ্য অথচ প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে প্রবেশ করবে।
পোস্টে পিনাকী আরও লিখেছেন, “৫ আগস্টের পর একটি কথা ভাইরাল হয়েছিল—‘মানুষ মাত্রই শিবির’। শুনতে মজার লাগলেও এর ভিতরে একটি বাস্তবতা আছে। দেশে-বিদেশে যোগ্য মানুষ খুঁজতে গেলে একসময় দেখা যাবে, সফল পেশাজীবীর রাজনৈতিক বেড়ে ওঠা হয়েছে শিবিরের হাত ধরে।”
তাঁর মতে, গত দেড় দশকে ফ্যাসিবাদী দমননীতির ফলে অন্যান্য সংগঠন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও, কঠোর শৃঙ্খলা, ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ ও নেটওয়ার্ক রক্ষার ক্ষমতার কারণে একমাত্র শিবিরই টিকে থাকতে পেরেছে। “এই ধারাবাহিকতার মূল্য ভবিষ্যৎ বাংলাদেশই পরিশোধ করবে—ক্ষমতা ও প্রভাবের মাধ্যমে।”
ফেসবুক পোস্টের শেষে পিনাকী একটি পুরনো আন্দোলনের ছবি যুক্ত করেন। সেখানে একজন তরুণের ছবি দিয়ে তিনি বলেন, “ছবির এই তরুণ তখন রাজপথে জীবন বাজি রেখে লড়েছিল, আজ তিনি দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক। এটি একজন মানুষের গল্প নয়, এটি একটি সংগঠিত স্কুলিং-এর সাফল্যের প্রতীক।”
তিনি বলেন, সেই সময়ের অনেকেই এখনো হয়তো কোনো কমিটির সহ-সভাপতি হওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন, অথচ ওই তরুণ ব্যক্তি নিঃশব্দে সমাজে নিজের অবস্থান তৈরি করে ফেলেছেন।
উল্লেখ্য: ছবিতে যে তরুণকে দেখা যাচ্ছে, তিনি হলেন এহসান এলাহী সাবিক। ২০১৩ সালে তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (BUTEX) টেক্সটাইল হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স বিভাগে অর্থনীতি বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত।