
রাজশাহীর পদ্মাপাড় ঘেঁষা পূর্বাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা)। অন্যান্য আসনের মতো এখানেও নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বিশেষ করে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে চলছে জোর প্রস্তুতি, মাঠের রাজনীতি বেশ চাঙা। একই সঙ্গে পিছিয়ে নেই জামায়াত। আগেভাগেই মাঠ দখলে নিতে বিএনপি ও জামায়াত দুই দলই নিয়েছে নানান কৌশল। আসনটিতে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদ।
রাজশাহী-৬ আসনটি চারঘাট ও বাঘা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও আলোচিত মুখ আবু সাঈদ চাঁদ। ফ্যাসিস্ট আমলে তার বিরুদ্ধে দেশের ১২ জেলায় ৮৫টি মামলা হয়েছিল। ২০১৮ সালে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন চাঁদ, এর আগে দুই মেয়াদে চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। এসব সমীকরণ হিসাব করলে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে তিনি।
এছাড়া বিএনপিতে আরও মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন তারা হলেন, দলটির কেন্দ্রীয় সদস্য দেবাশীষ রায় মধু, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, বাঘা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুজ্জামান মানিক ও বিএনপি নেতা বজলুর রহমান।
আমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টুকু আন্দোলন-সংগ্রামে কাটিয়েছি। দলের পতাকা বুকে ধারণ করে রাজপথে নেমেছি, প্রতিবাদে দাঁড়িয়েছি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছি। এই পথচলায় হারিয়েছি অনেক কিছু- জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পর্কগুলো। আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে ৮৫টি মামলা, বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে। মায়ের মৃত্যুতে শেষবারের মতো তার মুখ দেখতেও পারিনি। স্ত্রীর অসুস্থতা ও মৃত্যুর সময় পাশে থাকতে পারিনি, কারণ তখনও আমি কারাগারে ছিলাম।
আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, ‘আমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টুকু আন্দোলন-সংগ্রামে কাটিয়েছি। দলের পতাকা বুকে ধারণ করে রাজপথে নেমেছি, প্রতিবাদে দাঁড়িয়েছি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছি। এই পথচলায় হারিয়েছি অনেক কিছু- জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পর্কগুলো। আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে ৮৫টি মামলা, বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে। মায়ের মৃত্যুতে শেষবারের মতো তার মুখ দেখতেও পারিনি। স্ত্রীর অসুস্থতা ও মৃত্যুর সময় পাশে থাকতে পারিনি, কারণ তখনও আমি কারাগারে ছিলাম।’
তিনি বলেন, আমি সব সয়েছি, সব ত্যাগ স্বীকার করেছি- শুধু দলের স্বার্থে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে। এখন যদি দল আমার প্রতি আস্থা রেখে মনোনয়ন দেয়, তবে আমি বিশ্বাস করি বিজয়ের এক নতুন রেকর্ড গড়তে পারবো। ২০১৮ সালে আমি মনোনয়ন পেয়েছি। পাঁচবার চেয়ারম্যান ভোট করেছি, কখনো আমি হারিনি। মানুষ আমার সাথে আছে। আশা করছি মনোনয়ন পাবো এবং বিজয়ী হবো।
রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল চারঘাট-বাঘা এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
রাজশাহী-৬ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার ৭৬৬। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭৭৮। নারী ভোটার ১ লাখ ৮৬ হাজার ৯৮৭। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার একজন। এবার নতুন ভোটার হয়েছেন ৫ হাজার ৪৩৯ জন। এ আসনে সবচেয়ে বেশি ভোটার চাষি-খামারি। মূলত তাদের ভোটেই জয় পরাজয় নিশ্চিত হবে।
আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘আমি চারঘাট-বাঘা আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ লক্ষ্যেই দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিকূল পরিবেশে দলের নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম এবং এখনো আছি। আমি চারঘাটের সন্তান এ এলাকার মানুষের ভালোবাসা ও নেতাকর্মীদের বিপুল সমর্থন আমার প্রেরণা।’
তিনি আরও বলেন, আমি আপদে বিপদে সব সময় দলের পাশে ছিলাম। দলের জন্য কাজ করেছি। দল হয়তো আমাকে মনোনয়ন দেবে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুজ্জামান মানিক আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারঘাট-বাঘা আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। এরইমধ্যে তিনি রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছেন। দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বাড়িয়ে চলেছেন এবং নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন দলীয় ও সামাজিক কর্মসূচিতে।
মানিক বলেন, আমি শিক্ষিত মানুষ। ৫ আগস্টের পর আমি ও আমার সমর্থকরা কারও ওপর জোর করিনি। চাঁদাবাজি করিনি। আমি ক্লিন ইমেজের মানুষ। তাই আশা করছি দল আমার দিকে দেখবে।
এদিকে, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন অধ্যক্ষ নাজমুল হক। তিনি জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি এবং তার বাড়ি চারঘাট উপজেলার হলিদাগাছি গ্রামে। মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই তিনি সামাজিক ও ধর্মীয় সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমি মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছি। বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক গণসংযোগ করছি। পাশাপাশি আমি মানুষের চাওয়া-পাওয়া বুঝতে চেষ্টা করছি। কিছু কথাও শুনছি। মানুষ এখন আমাদের ওপর ভরসা করতে শুরু করেছে। আমরা সাংগঠনিক ভাবেও সক্রিয়। আশা করছি আমরা জয় লাভ করবো।
রাজশাহী সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, রাজশাহী-৬ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার ৭৬৬। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭৭৮ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৮৬ হাজার ৯৮৭। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন একজন। এবার নতুন ভোটার ৫ হাজার ৪৩৯ জন। এ আসনে সবচেয়ে বেশি ভোটার চাষি ও খামারিরা। মূলত তাদের ভোটেই জয় পরাজয় নিশ্চিত হবে।