Image description

পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের একসময়ের দলীয় কার্যালয় ও পথিতযশা নেতাদের আড্ডাশালা রাজধানীর গুলিস্তানের পার্টি অফিস। গত ০৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার খবর শুনে বিপ্লবী জনতা ভবনটিতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় ও ভিতরের সবকিছু ভেঙে-চুরে জ্বালিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে ভবনটি পরিণত হয় গণশৌচাগারে। এরপর ভবনটির আশপাশে কেউ গেলে দুর্গন্ধের কারণে দূরত্ব বজায় রাখে। কয়েকমাস এভাবেই জরাজীর্ণ ও দুর্গন্ধময় ভূতুড়েঘরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে ভবনটি। তবে সম্প্রতি ভবনের প্রধান ফটকের সামনে কর্তৃপক্ষের নাম পরিচয়বিহীন আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ব্যানার টানানো দেখা যায়। এই সংগঠনের পরিচয় নিয়ে স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক, ফুটপাতের দোকানদার ও স্থানীয়দের মধ্যে শুরু হয়েছে আগ্রহ ও ধোঁয়াশা।

গতকাল সরেজমিনে ভবনটি ঘুরে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রবেশমুখে ঝুলছে ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ নামের একটি ব্যানার। ভবনের ভেতরে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। নিচতলায় জমে থাকা পানির ওপর ছিটানো হয়েছে জীবাণুনাশক ব্লিচিং পাউডার। একদল শ্রমিক ভবনের নোংরা পানি, ময়লার স্তূপ, ইটের গুঁড়া, ভাঙা টাইলসসহ জমে থাকা সব ধরনের ময়লা পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত। সিঁড়ি ও ওপরের রুমগুলো থেকে তুলে ফেলা হচ্ছে টাইলস। ভবনের সামনে চেয়ার নিয়ে বসে আছেন কয়েকজন উঠতি বয়সের তরুণ। মিডিয়ার সাথে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি। ভবনের অপর পাশে কয়েকজন পুলিশকে সংঘবদ্ধ হয়ে বসে থাকতে দেখা যায়।

ভবনটির আশপাশে উঠতি বয়সি তরুণদের দেখা যায় যাদের আগে কখনো এই এলাকায় দেখেননি স্থানীয় দোকানদার ও লোকজন। ভবনটির অপর পাশে এক চায়ের দোকানদারের কাছে জানা যায়, গত দুই দিন থেকে এখানে মাঝবয়সী ছেলেদের দেখা যাচ্ছে এরা নাকি জুলাইযোদ্ধা? এদের বয়সই বা কত হয়েছে? আমার দোকানে এসে চা খেয়ে অমুক তমুকের নাম বলে যায়, টাকাও দেয় না। তবে অনেকে গোপালগঞ্জ বা মাদারীপুর এলাকার ভাষার সুরে কথা বলে। এ থেকে অনুমান করা যায় তারা আওয়ামী লীগের সমর্থক বা এ রকম কিছু একটা হবে।
মাদারীপুর থেকে আসা বিপ্লব নামে এক ব্যক্তি ভবনের ঠিক উল্টোপাশে সাংবাদিকদের সাক্ষাতকারে বলছে, আমি এই অবস্থায় এই ভবনটি দেখবো কখনো ভাবিনি। এভাবে দেখে আমার খুব কষ্ট লাগছে আবার মায়াও লাগছে। একসময়ের সফল প্রধানমন্ত্রী এখন দেশ থেকে চলে গেছেন। গেঞ্জাম হোক বা বিপ্লব হোক দেশে সরকারের পরিবর্তন হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্রের মাধ্যমেও হতে পারে, দেশের আইন বিভাগ এটি ক্ষতিয়ে দেখুক। কিন্তু এভাবে বিনাদোষে মানুষকে হয়রানি করা ঠিক না। বিচাররের মাধ্যমে যারা দোষী তাদের বিচার হোক কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র ঠিক না। আর এসব রাজনৈতিক মামলা বেশি টিকে না। এগুলো দেশে আগেও হয়েছে কিন্তু বিচারে তো প্রমাণ করতে পারেনি কেউ। সাক্ষাতকার শেষে কয়েকজন লোক তাকে পাকড়াও করে পুলিশের কাছে নিয়ে গেলে আশপাশের আওয়ামী ঘরোনার কয়েকজন তাকে ছাড়িয়ে আনে।

ভবনটি পরিষ্কার করার সময় দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা সাখাওয়াত হোসাইন নিজেকে একজন জুলাইযোদ্ধা পরিচয় দিলেও নিজের সম্পর্কে আর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি, জুলাই আন্দোলনে সে কোথায় আন্দোলন করেছে বা কোনো দায়িত্বে ছিল কিনা এসব বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন আগে আমরা দেখতে পায় এখানে আওয়ামী লোকদের আনাগোনা বাড়ছে এমনকি এখানে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে মিছিল করারও চেষ্টা করেছে। এ রকম একটা ফ্যাসিস্ট সরকারকে আমরা পুনরায় ফেরত আসার সুযোগ দিতে পারি না। এখান থেকে আমরা কয়েকজন জুলাইযোদ্ধা একত্রিত হয়ে ভবনটিতে আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট গড়ার লক্ষ্যে ব্যানার টানায়। আমরা যদি এটা দখল না করি তাহলে কেউ না কেউ তো এটা দখল করবে। হতে পারে আওয়ামী লীগই অন্য কোনো সংগঠনের ব্যানারে এখানে এসে তাদের কাজ করছে। আমরা এখানে এসেছি এটি পরিষ্কার করে আশপাশের ছিন্নমূল মানুষদের একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। যারা আন্দোলনে আহত হয়েছে সরকার থেকে তারা আর কয় টাকাই পাবে। আমরা চেষ্টা করবো তাদের জন্য স্থায়ী একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার। আন্তর্জাতিক গণহত্যা গবেষণার জন্য আমরা সরকারের কাছে আবেদন করবো এবং বিভিন্ন ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আমরা আমন্ত্রণ করবো এখানে এসে গবেষণা করার জন্য এসব কিছু নিয়ে সরকারের কাছে আমরা অনুদান চেয়ে আবেদন করবো।

জানা যায়, ১৯৮১ সাল থেকে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ঠিকানাটি দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছে আওয়ামী লীগ। আট কাঠার এই জমিটি ৯৯ বছরের জন্য সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেয় দলটি। সর্বশেষ ২০১৬ সালে পুরোনো ভবন ভেঙে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ তলা নতুন এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়।